Md. Afrooz Zaman Khan

Afrooz
Md. Afrooz Zaman Khan. Powered by Blogger.
RSS

বোকা


.


২০০৯ সালের এক মঙ্গলবার। ঝাড়া দুই ঘণ্টা স্যারের লেকচার শুনে, হলে এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছি। এক ঘণ্টা পরেই ল্যাবে যেতে হবে। ক্যানটিনে খেতে যাওয়ার আগে, অভ্যাসবশত কম্পিউটার অন করলাম। উদ্দেশ্য ফেসবুক আর মেইল চেক করা। ফেসবুক ইনবক্সে একটা মেসেজ এসেছে। মেসেজটা পড়েই আমি থ। মাত্র দুই লাইনের একটা মেসেজ। লেখা:
‘তুমি কি কিছুই বোেঝা না? হে অবুঝ বালক, কাল সকাল আটটায় সুমনের টঙের দোকানে এসো, সব বুঝতে পারবে।’
মেসেজটা পাঠিয়েছে আমাদের ক্লাসের ইয়াসিমন। ওকে দেখলে তাবৎ ডিপার্টমেন্টের বুকে ধুকপুকানি শুরু হয়, আর আমি তো কোন ছার। এই মেয়ে আমার মতো একটা থার্ড ক্লাস টাইপের ছেলেকে প্রেমের প্রস্তাব পাঠিয়েছে, এমন ব্যাপারও ঘটে!
ল্যাব মাথায় উঠল। তৈরি হতে হবে। তখনই রুমমেট রনির কাছ থেকে ৫০০ টাকা ধার করে, হলের সেলুনে ঢুকে পড়লাম। আধ ঘণ্টার মধ্যে চুল, দাড়ি, গোঁফ আর চে গুয়েভারা হওয়ার স্বপ্ন জলাঞ্জলি দেওয়া হয়ে গেল। হলের লন্ড্রি থেকে শার্ট আর প্যান্ট ইস্ত্রি করে আনলাম।
তারপর অপেক্ষা। জীবনে প্রথমবারের মতো থিওরি অব রিলেটিভিটি মাথায় ঢুকল। তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় সারা রাত কাটল। সকাল সাতটায় রেডি হয়েই চৌহাট্টা চলে গেলাম। সিলেটের সব ফুলের দোকান ওখানেই। আজকের দিনে ফুলই শ্রেষ্ঠ উপহার। সুনীলের মতো ১০৮টা নীলপদ্ম না হোক, ১০৮টা গোলাপের তোড়া নিয়ে ক্যাম্পাসে হাজির হলাম। গোলাপ খুবই সন্দেহজনক ফুল, তাই তোড়াটা ব্যাগের ভেতরে রেখেছি।
সুমনের টং মানে একটা চায়ের দোকান। আটটার আগেই পৌঁছে গেলাম। বুকটা কোনো কথাই শুনছে না। ধড়ফড় করেই যাচ্ছে। ঠিক আটটায় ইয়াসমিন হলের গেট থেকে বেরিয়ে এল। সঙ্গে আরও দুই-তিনটা মেয়ে। আমার সামনে এসে মুচকি হাসল সে। সঙ্গের মেয়েগুলোর দিকে তাকাল। ওদের মুখেও মুচকি হাসি। তারপর ইয়াসমিন আমাকে জিজ্ঞেস করল—
‘আজ কত তারিখ?’
মোবাইল বের করে দেখলাম, ১ এপ্রিল। সঙ্গে সঙ্গে পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম। আর ওদের মুচকি হাসি অট্টহাসিতে রূপ নিল। 

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

0 comments:

Post a Comment