বলা নেই কওয়া নেই, সে কী দাঁতের ব্যথা। টানা তিন দিন হতে চলল, ব্যথা কমবে কী, উল্টো গাল ফুলতে শুরু করল। অবস্থা বেগতিক দেখে শেষে ধরনা দিলাম ভার্সিটির মেডিকেল সেন্টারে। চিকিৎসক বড় বিচক্ষণ লোক, গালে হাত বোলাতে হলো না, হাতে টর্চ নিয়ে মুখ হাঁ করতে বললেন না, শুধু আমার দেওয়া বর্ণনা শুনেই বুঝে গেলেন সব। বেশ ঠান্ডা গলায় বললেন, ‘আপনার তো দাঁত উঠছে।’ শুনে আমি আকাশ থেকে না পড়লেও চেয়ার থেকে পড়ে যাচ্ছিলাম প্রায়, হাতল ছিল বলে রক্ষা। বলেন কী! আমার মতো বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া বুড়ো ছেলেদেরও দাঁত ওঠে! চিকিৎসক মৃদু হাস্যে বলে চললেন, ‘...আক্কেল দাঁত উঠছে আপনার। গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলি করবেন। একটু যা ব্যথা লাগবে, সহ্য করে নেবেন। তবে ভয়ের কিছু নেই। ইটস ন্যাচারাল।’ চিকিৎসক আমায় অভয় দিলেন, সেই সঙ্গে লিখে দিলেন কিছু ব্যথানাশক ওষুধের নাম-ঠিকানা।
বাসায় ফিরে আম্মাকে ফোন করলাম। ফোন করলাম মেেজা ভাইকে, কথা হলো বন্ধু যুবরাজের সঙ্গেও। তাদের কথায় আস্থা ফিরে পেলাম বটে কিন্তু দাঁতের ব্যথা কমছে না মোটেই। গাল ফুলে রীতিমতো বালিশ হয়ে আছে, দেখে মনে হবে নাড়ু মুখে নিয়ে বসে আছি। আমার অবস্থা শুনে ফোনের ও পাশে বন্ধু যুবরাজের অট্টহাসি। আমি দাঁতের ব্যথায় মরি, আর ও হাসিতে খায় গড়াগড়ি। ওর হাসি থামে না। ঠাট্টার সুরে বলে, ‘ছোট শিশু তো’। যাহ্! ঠাট্টা রাখ তো।
ব্যথা ক্রমেই বাড়ছে, সঙ্গে জ্বরে কাঁপাকাঁপি অবস্থায় পড়ে আমি ঘাবড়ে গেলাম। মেসের এক বড় ভাইয়ের কথায় আমি আরও ভড়কে গেলাম, উনার নাকি অপারেশন করে দাঁত তুলে ফেলতে হয়েছিল। আমি আরও বড় চিকিৎসকের কাছে গেলাম। দাঁতের এক্স-রে করালাম। আমার চোখের সামনে এক্স-রে রিপোর্ট ধরে চিকিৎসক বললেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই উঠছে দাঁত। দাঁতে দাঁতে কোনো ঠোকাঠুকির যুদ্ধ নেই যে দাঁত তুলে ফেলতে হবে।’ যাক বাবা, বাঁচা গেল! ‘তেমন বড় কোনো সমস্যা না’ এইটুক নিশ্চিত হওয়া গেল। অতঃপর ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে থামল আমার আক্কেল দাঁতের বে-আক্কেল আচরণ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা।
0 comments:
Post a Comment