তখন আমি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র। বন্ধুরা কয়েকজন বসে ছিলাম ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারের পাদদেশে। আমাদের থেকে একটু সামনে একটি রিকশা থেকে নামে এক তরুণী। কয়েক মুহূর্ত ইতস্তত করে আমাদের কাছে এসে মেয়েটি বলল, ভাইয়া, ছাত্রী হোস্টেলটা কোন দিকে? একটু মজা করতে আমি ওকে দেখিয়ে দিয়েছিলাম উল্টো পথ। প্রীতির সঙ্গে সেটাই ছিল আমার প্রথম দেখা। যদিও প্রথম দেখার অভিজ্ঞতাটা খুব একটা সুখকর ছিল না, তবুও সময়ের ব্যবধানে এই প্রীতির সঙ্গেই একসময় আমার ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। প্রীতি ছিল যেমন রূপবতী, তেমন গুণবতী। এককথায় প্রেমে পড়ার মতো সব গুণই ছিল ওর। কিন্তু বলি বলি করে কেন যেন সেই মনের কথাটি বলা হয়ে ওঠেনি।
দেখতে দেখতে ছাত্রজীবন শেষ হয়ে গেছে। চাকরিজীবনে পদার্পণ করেছি প্রায় এক বছর হয়ে গেছে। তবুও প্রীতিকে মনের কথাটি বলা হয়ে ওঠেনি। কাকতালীয়ভাবে প্রীতিও আমার অফিসে নতুন জয়েন করেছে। আজ প্রীতির জন্মদিন। অফিসে এসেই মুঠোফোনটা হাতে নিলাম। জন্মদিনের শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছি রাতেই। নতুন আরেকটি মেসেজ লিখলাম, ‘আমি যে তোমাকে ভালোবাসি সেটা কি তুমি জান?’ সাহস করে মেসেজটা পাঠিয়েও দিলাম। কিন্তু কোনো রিপ্লাই এল না। একটু পরে দেখি প্রীতি ওর ডেস্ক ছেড়ে আমার ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে। প্রীতি বলল, ভাইয়া, মেসেজটা কি আপনিই পাঠিয়েছিলেন?
আমি তো লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। একটু অপমানিতও বোধ করলাম। এই বয়সে আমার নিশ্চয়ই এমন আচরণ মানায় না। আর ওর নিজের কাউকে পছন্দও থাকতে পারে। কিছুক্ষণ পরে দেখি আমার ফোনে একটা মেসেজ এল। প্রীতি লিখেছে, ‘কথাটা ছাত্রাবস্থায় বলতে কে নিষেধ করেছিল? প্রেমটা আরও তিন বছর আগে থেকেই শুরু করতাম। এখন তাড়াতাড়ি হাতের কাজ শেষ করে ক্যানটিনে আসুন। ছাত্রজীবনে প্রেম তো আর হলো না। চাকরিজীবনের প্রেমের প্রথম দিনটা নাহয় শুরু হোক প্রিয়তমার হাতের রান্না খেয়ে।
0 comments:
Post a Comment