Md. Afrooz Zaman Khan

Afrooz
Md. Afrooz Zaman Khan. Powered by Blogger.
RSS

ভয়কে করো জয়


কেরি ওয়াশিংটন



এমি অ্যাওয়ার্ড ও গোল্ডেন গ্লোব বিজয়ী অভিনেত্রী কেরি ওয়াশিংটনের জন্ম ১৯৭৭ সালের ৩১ জানুয়ারি। টাইম ম্যাগাজিন-এর এপ্রিল ২০১৪ সংখ্যায় প্রকাশিত ‘বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির’ মধ্যে কেরি অন্যতম। জর্জ ওয়াশিংটন ইউনির্ভারসিটির সমাবর্তনে ২০১৩ সালের ১৯ মে তিনি এই বক্তৃতা করেন।

অভিনন্দন, ২০১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা! মনে হচ্ছে এই তো সেদিন আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার নিজের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। আজও এখানে আমার বাবা-মা উপস্থিত আছেন। আমি যে গাউনটা পরে আছি, সেটা আমার মা ড. ভ্যালেরি ওয়াশিংটনের। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ আমাকে যে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে, তার জন্য আমি গর্বিত ও কৃতজ্ঞ। কিন্তু চার বছর পরিশ্রম করে যে ডিগ্রি আমি অর্জন করেছিলাম, তা নিয়ে আরও বেশি গর্ববোধ করি।

স্বাগত তোমাদের সবাইকে, জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমৃদ্ধ ইতিহাস আর ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে তোমাদের আবারও অভিনন্দন। পেশাগত জীবনে আমি একজন অভিনেত্রী। অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের গল্প বলি। আজও তার ব্যতিক্রম হবে না। আমি যখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেছিলাম, তখন অভিনেত্রী হওয়ার কোনো পরিকল্পনা আমার ছিল না। আমি ভাবতাম, মনোবিজ্ঞানী অথবা মায়ের মতো শিক্ষাবিদ হব। অভিনয় ছিল বড়জোর শখ, যা আমাকে এখানে পড়ার খরচ চালাতে সাহায্য করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি যে বৃত্তি পেতাম, তার অনেকগুলো শর্তের মধ্যে একটি ছিল নাট্যকলা ও নৃত্য বিভাগ থেকে যতগুলো অনুষ্ঠান করা হবে, তার সব কটির জন্য আমাকে অডিশনে অংশ নিতে হবে। অভিনয় নিয়ে আমাকে পড়তে হয়নি, তার বদলে আমি মানুষের নানা দিক নিয়ে পড়েছি, যেমন মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস ও নৃতত্ত¡। মানবসমাজ নিয়ে পড়তে গিয়ে আমাকে একটা বিষয় মুগ্ধ করেছিল, তা হলো, মানুষের গল্প বলার সংস্কৃতি ও সমাজে এর প্রভাব। সভ্যতার শুরু থেকেই সব সমাজের অধিবাসীরা তাদের জীবনের গল্প নানাভাবে বলে গেছে, গল্প দিয়েই আমরা একে অন্যকে বুঝতে পারি, নিজেদের বুঝতে পারি। যখন আমরা কোনো একটা গল্পে গভীরভাবে ডুবে যাই, সে কোনো উপন্যাস, চলচ্চিত্র বা প্রামাণ্যচিত্র Ñযা-ই হোক না কেন, তখন আমরা নিজেদের আরও বেশি করে বুঝতে পারি। বুঝতে পারি বর্তমানে আমরা কে, আর ভবিষ্যতেই বা কেমন হতে চাই। অথবা কেমন অবস্থায় আমরা কখনো পড়তে চাই না। গল্প আমাদের চিন্তাধারাকে প্রভাবিত করে, আমাদের বদলে দেয়। কোনো গল্পের নায়কের সঙ্গে সঙ্গে আমরা যখন সামনের দিকে এগিয়ে যাই, তখন উপলব্ধি করি, আমরা প্রত্যেকেই আমাদের নিজেদের জীবনের নায়ক। আমি আজ এই সত্যটা তোমাদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের জীবনের গল্পের মূল চরিত্র। তোমার জীবনকে ঘিরেই গল্প, তোমার গল্প নিয়েই পৃথিবী। জীবনের রোমাঞ্চকর যাত্রায় নিজের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনার সবটুকু কাজে লাগিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোই হলো তোমার উদ্দেশ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমি জোসেফ ক্যাম্পবেলের লেখার সঙ্গে পরিচিত হই। তিনি লিখেছিলেন: সব পথিকের যাত্রা শুরু হয় কোনো না কোনো আহ্বান থেকে, কেউ একজন এসে তাকে বলে, ‘জেগে ওঠো, আর ঘুমিও না, বেরিয়ে পড়ার সময় এসেছে।’

আমাদের সবার মধ্যে একটা সুপ্ত চেতনা থাকে, সঠিক সময়ে যার ঘুম ভাঙাতে হয়। একেই বলে স্বাচ্ছন্দ্যকে দূরে সরিয়ে নিজের পরিচিত গণ্ডির বাইরে পা রাখা। সহজ কাজ নিয়ে পড়ে থাকার লোভ সংবরণ করে সঠিক কাজটি করা। ১৯৯৬ সালে আমি যখন তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, তখন আমার সামনে এমন একটা আহ্বান এসেছিল। বৃত্তি পাওয়ার শর্তের অংশ হিসেবে আমাকে একটি নতুন নাটকের জন্য অডিশন দিতে বলা হয়, যা ছিল ব্যাঙ নিয়ে লেখা একটি গীতিনাট্য! গল্পটা ভারি সুন্দর ছিল, ভালোবাসা, পারিবারিক বন্ধন ও পরিবেশ সংরণকে উপজীব্য করে লেখা। কিন্তু ব্যাপার হলো, আমি ভাবিনি আমাকে কখনো ব্যাঙের ভূমিকায় অভিনয় করতে হবে। সবাই এমনিতেই কেমন হাসাহাসি করবে, আর খারাপ করলে কীভাবে মুখ দেখাবÑ এই চিন্তায় আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আমি ভাবলাম, যদি কোনোভাবে অডিশন থেকে বাদ পড়া যায়, তাহলেই ঝামেলা চুকে যাবে। ক্যাম্পবেল তাঁর লেখায় এই ব্যাপারটির কথাও বলেছেন, যখন আমাদের সামনে কোনো সুযোগ আসে, কিন্তু আমাদের তা নেওয়ার সাহস হয়ে ওঠে না। আমাদের ভয়, নিজেদের সামর্থ্যরে ওপর অনাস্থাÑ সবকিছু আমাদের প্রভাবিত করে সুযোগটিকে দূরে সরিয়ে দিতে। যা-ই হোক, আমি সাহস করে অডিশনে হাজির হলাম, নিজের দ্বিধা কাটিয়ে পরিচিত গণ্ডির বাইরে পা রাখলাম। অবাক হলেও সত্যি, অডিশনে আমাকেই বেছে নেওয়া হলো। এবার আরেক নতুন ভয় এসে ঢুকল মাথায়৷ আমি কীভাবে এমন চ্যালেঞ্জিং একটা চরিত্রের সঙ্গে মিশে যেতে পারি? আমি ঠিক করলাম, ব্যাঙ নিয়ে পড়াশোনা করব! আমি চিড়িয়াখানায় গিয়ে সেখানকার ব্যাঙগুলোর দিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকিয়ে থাকতাম। ব্যাঙ নিয়ে যা কিছু পাই, সব পড়তে শুরু করলাম, প্রামাণ্যচিত্র দেখলাম। এমনকি ব্যাঙ হাতের তালুতে নিয়ে বসেও থাকতাম! আমার পুরো শরীর দিয়ে কীভাবে ব্যাঙের চরিত্রটিকে রূপ দেওয়া যায়, তার উপায় বের করলাম। হ্যাঁ, আমি আমার ভয়কে জয় করে মঞ্চে পা রেখেছিলাম। সেদিনের সেই অভিনয় আমার নিজের সম্পর্কে ধারণা আমূল বদলে দিয়েছিল। সবচেয়ে বড় কথা, আজ পর্যন্ত আমি যত চরিত্রে অভিনয় করেছি, তার মধ্যে সেই ব্যাঙটিই আমার বাবার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র!

তোমাদের প্রত্যেকের ভেতরে দারুণ সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। প্রত্যেকের জীবনের গল্পই অন্য সবার চেয়ে আলাদা, অদ্বিতীয়। পরিচিত পরিবেশের মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রেখে তোমরা এই ডিগ্রি লাভ করোনি। আজ তোমাদের আহ্বান জানাব গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করতে, একটু পেছনে ফিরে তাকাতে। কোন মুহূর্তগুলো সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল? কখন সুযোগ এসেছিল নতুন কিছু করার, গণ্ডির বাইরে পা রাখার? মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা ভয়কে কীভাবে জয় করেছ? এই স্মৃতিগুলো মনে রেখো, এগুলো তোমাকে সাহস জোগাবে। তোমরা সবাই ভয়কে জয় করতে পারবে, কিন্তু করবে কি না, সে সিদ্ধান্ত কিন্তু যার যার নিজের। আজ এখান থেকে বের হয়ে তোমরা যে নতুন জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছ, সেখানে তোমাদের সামনে অনেক পথ খোলা থাকবে। তোমরা অন্যকে খুশি করার পথ বেছে নিতে পারো, লোকে তোমার কাছ থেকে যা আশা করে, ঠিক তা-ই করতে পারো। কখনো ভয় পেলে চুপটি করে নিজের ভেতরে গুটিয়ে যেতে পারো, চ্যালেঞ্জকে দূরে ঠেলে নিরাপদ থাকতে পারো। অথবা, জীবন থেকে অনুপ্রেরণার মুহূর্তগুলো খুঁজে বের করতে পারো, নিজেকে নিজেই সাহস জোগাতে পারো। অন্তরের শক্তিতে জাগ্রত হয়ে নিজের জীবনের গল্প নিজেই লিখতে পারো। যদি এসব করো, তাহলে তোমাদের জন্য অসম্ভব বলে কিছু থাকবে না।
আমি জানি, তোমরা অনেকেই এই পথ বেছে নেবে, অনেকে ইতিমধ্যে নিয়েও ফেলেছ। আমার চোখে তাই তোমরা কেবল গ্র্যাজুয়েট নও, তোমরা জীবনের পথে একেকজন অভিযাত্রী। তাই যখন নতুন কিছু করার সুযোগ আসবে, ভয় না পেয়ে সে আহŸানে সাড়া দিয়ো। অন্যরা কী করেছে, এসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে নিজের পথ নিজেই তৈরি করে নাও। তুমি, হ্যাঁ, কেবল তুমিই পারো তোমার জীবনকে ইচ্ছামতো সাজিয়ে তুলতে। তোমার গল্প তো পৃথিবীকে তুমি শোনাবে, নাকি? পৃথিবী তোমার কণ্ঠ শুনতে চায়। আর যত সামনে এগিয়ে যাবে, তোমার গল্প শুনিয়ে তুমি আরও অসংখ্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবে তাদের জীবনের গল্পটি খুঁজে নিতে। আমি সেই গল্পগুলো শোনার অপোয় রইলাম।

সূত্র: ইন্টারনেট


  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

0 comments:

Post a Comment