Md. Afrooz Zaman Khan

Afrooz
Md. Afrooz Zaman Khan. Powered by Blogger.
RSS

আমার মা: শাহরুখ খান


শৈশবে মা ফাতিমা খানের একান্ত সান্নিধ্যে শিশু শাহরুখ



আমার মায়ের জন্ম হায়দরাবাদে, বেড়ে ওঠাও সেখানে। তাঁর রূপ ও তেজ দুটোই ছিল সমান। আমার বাবা ছিলেন প্রকৌশলী। আর মা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট; তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। তখনকার দিনে প্রথম যে কয়েকজন মুসলিম নারী এতটা ওপরে উঠতে পেরেছিলেন, মা ছিলেন তাঁদের অন্যতম। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তিনি রেকর্ড পরিমাণ সময় দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কিশোর অপরাধ নিয়ে কাজ করতেন।
মা ছিলেন খুবই মিশুকপ্রকৃতির মানুষ, সব কাজে নিজে থেকে এগিয়ে আসতেন। মনে পড়ে বাবা তখন অসুস্থ, আট মাস ধরে ক্যানসারে ভুগে শয্যাশায়ী, আমাদের তখন প্রায় পথে বসার মতো অবস্থা। একেকটা ইনজেকশনের দাম ছিল প্রায় পাঁচ হাজার রুপি। ১০ দিনের মধ্যে এমন ২৩টা ইনজেকশন জোগাড় করতে হয়েছিল আমাদের। এত খরচ সামাল দেওয়া সোজা ব্যাপার নয়, তার ওপর ব্যবসায় চলছিল মন্দা। 
শাহরুখ খান




মা দিন-রাত কাজ করতেন। বাবার জন্য সাধ্যমতো করেছিলেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পর মা তাঁর ব্যবসাকে আবার নতুন করে গড়ে তোলেন। আমি মায়ের কাছ থেকেই শিখেছি কীভাবে কাজ করতে হয়, পরিশ্রম করতে হয়।
মা কখনো আমার ওপর কোনো কিছু জোর করে চাপিয়ে দেননি। এমনকি নিজের গড়ে তোলা ব্যবসার হাল ধরতেও বলেননি। যখন আমি বলেছিলাম আমি অভিনয় করতে চাই, মা আমাকে নিষেধ করেননি। আমি হিন্দিতে বরাবরই খারাপ ছিলাম। একবার দশে শূন্যও পেলাম। তখন মা বললেন, ‘যদি দশে দশ পাও তাহলে ছবি দেখতে নিয়ে যাব।’ তখন থেকে হিন্দিতে সব সময়ই দারুণ করেছি। মা আমাকে প্রথম যে ছবিটি দেখতে নিয়ে গিয়েছিলেন তা ছিল দেব আনন্দের জোশিলা। মায়ের মৃত্যু আমাকে শিখিয়েছে, কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। অঝোরধারায় কেঁদেছিলাম তাঁর মৃত্যুর পর, সব আশা-আকাঙ্ক্ষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। সেটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের সময়, যখন মা আমার কোলে মারা গেলেন। প্রায় সুস্থই হয়ে উঠেছিলেন তিনি, কিন্তু কী হলো, হঠাৎ করে চলে গেলেন।



লতিফ ফা​ি​তমা খান: (জন্ম: অজ্ঞাত, মৃত্যু: ১৯৯০) পেশাজীবনে তিনি ভারতের প্রথম শ্রেণীর ​ম্যা​িজস্টেট ছিলেন৷ তিনি চলচ্চিত্র তারকা শাহরুখ খানের মা৷


আমার সব মানবিক মূল্যবোধ আমি মায়ের কাছ থেকে পেয়েছি, অনেক কিছু শিখেছি তাঁর কাছ থেকে। যেমন ব্যয় কমিয়ে লাভ নেই, তার চেয়ে উপার্জন বাড়াও। তাই আমি দুই হাতে খরচ করি। মা আরও শিখিয়েছিলেন কাউকে আঘাত না দিতে।
মা ছিলেন আমার সত্যিকারের বন্ধু। যখন বললাম আমি গৌরীকে বিয়ে করতে চাই। তাঁরা জিজ্ঞেসও করেননি, গৌরী মুসলিম না চায়নিজ। আমার অভিনয়ের হাতেখড়িও মায়ের কাছে, তাঁকে দেখে আমি কিছু ভারি সুন্দর অভিব্যক্তি শিখেছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, আমার বর্তমান জীবনদর্শন মায়ের কাছ থেকে পাওয়া। তিনি আমাকে শিখিয়েছেন কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। তাই আজকের দিনে পরিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকা উচিত, বর্তমান মুহূর্তকে উপভোগ করা উচিত, কারণ পরের প্রতিটি মুহূর্তই সমান অনিশ্চয়তায় ভরা। যা এখন আছে, পরের মুহূর্তেই তা হারিয়ে যেতে পারে। তাই আমি কোনো কিছু নিয়েই তেমন দুশ্চিন্তা করি না, বা কোনো কিছুকে তেমন পাত্তা দিই না।
আমি বিশ্বাস করি, মা যেখানেই থাকুন, তিনি আমাকে সারাক্ষণ দেখে রাখছেন। মা আমার খেয়াল না রাখলে আমার এত অর্জনের কিছুই সম্ভব হতো না। আমি কোনো কিছু নিয়ে খুব খুশি হলে কেঁদে ফেলি, ইচ্ছা হয় মাকে যদি এখন জানাতে পারতাম।
আমার একটাই আফসোস, অভিনেতা হিসেবে আমার সাফল্য মা দেখে যেতে পারেননি। আমি যখন অভিনয়ের জন্য প্রথম পুরস্কার পাই, তত দিনে তিনি আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন (১৯৯০)। মাকে খুব মিস করি, মা-ই আমার জীবনের তারকা। আমি জানি, মা আমাকে কখনো চোখের আড়াল করবেন না। আমি যা কিছু পেয়েছি, যা কিছু করেছি, এ সবই তাঁর আশীর্বাদ ছাড়া আর কিছু নয়।




  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

0 comments:

Post a Comment