Md. Afrooz Zaman Khan

Afrooz
Md. Afrooz Zaman Khan. Powered by Blogger.
RSS

বইয়ের মধ্যে বড় হয়েছি: ড্যান ব্রাউন


ড্যান ব্রাউন



আমি যখন বেড়ে উঠছিলাম, তখন আমাদের বাসায় টেলিভিশন ছিল না। তাই আমি যা পেতাম, তা-ই পড়তাম। আমার সবচেয়ে পুরোনো স্মৃতি হলো মেডেলিন এল ইঙ্গলসের অ্যা রিঙ্কল ইন টাইম বইটিতে বুঁদ হয়ে থাকার। আমার মনে পড়ে, আমি যখন বইটি অর্ধেক শেষ করেছি, মা তখন এসে বললেন, এটা ঘুমানোর সময়। কিন্তু আমি বইয়ের চরিত্রগুলো নিয়ে এতটাই চিন্তিত ছিলাম যে সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। পরদিন যখন বইটি শেষ করলাম, তখন আমার চোখে পানি। কারণ, সেটা ছিল একটা সুখের সমাপ্তি। বইটির আবেগ আমাকে ছুঁয়ে গিয়েছিল, প্রতিটি চরিত্রকে আমি অনুভব করছিলাম।

এটা ছিল সেই মুহূর্ত, যখন আমি গল্প বলার জাদু এবং ছাপার অক্ষরের শক্তিকে বুঝতে শিখলাম। আমি প্রকৃতপক্ষে অসংখ্য বইয়ের মধ্যে বড় হয়ে উঠেছি। আমি এবং আমার বোন প্রতি সপ্তাহে এক্সেটার পাবলিক লাইব্রেরিতে যেতাম এবং দুই হাত ভর্তি করে আমাদের পছন্দের বই নিয়ে আসতাম। এগুলোর মধ্যে থাকত ড. সিউস, রিচার্ড স্কারি, কিউরিয়াস জর্জ, মেডেলিন এবং বাবার। আমরা যখন বড় হয়ে উঠছিলাম, আমার মনে পড়ে, প্রতি রাতেই মা-বাবা আমাদের গল্প পড়ে শোনাতেন। তাঁদের মুখেই আমার অনেক গল্প শোনা—‘মেক ওয়ে ফর ডাকলিং’, ‘দ্য ভেলেভটিন র‌্যাবিট’, ‘চিকেন স্যুপ উইদ রাইস’। কিন্তু যে গল্পটি আমার ছোট্ট মনোজগতকে ভীষণভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল, সেটি ছিল ‘হোয়ার দ্য ওয়াইল্ড থিংগস আর’। আমার পরিবারে অগডেন ন্যাশের কবিতা খুব পড়া হতো, যেটা আমার লেখনীর ওপর অনেক প্রভাব রেখেছে। আমাদের বইয়ের তাকে গ্রিমের রূপকথা এবং ঈশপের গল্পের অনেক সংকলন ছিল। এই বইগুলোই আমাকে খুব ছোটবেলাতে ভালো-মন্দ ও নায়ক-ভিলেনের পার্থক্য বুঝতে সাহায্য করেছে।

আমার প্রিয় লেখকদের মধ্যে আছেন জন স্টেইনবেক। তাঁর গল্পের স্থানগুলো আমাকে মুগ্ধ করে। আমি বিস্মিত হয়ে উপভোগ করি রবার্ট লুডলামের গল্পের জটিল পটভূমি। এ ছাড়া আমি জে কে রাওলিংয়েরও একজন ভক্ত। তিনি অসংখ্য তরুণকে বই পড়তে উৎসাহিত করেছেন। শেক্সপিয়ার তাঁর ভাষাশৈলী দিয়ে চিরকালই আমাকে পথ দেখিয়ে এসেছেন।

আমি প্রচুর নন-ফিকশন পড়ি। এর কারণ রিসার্চ ও আনন্দ লাভ করা। কিন্তু যখন আমি ফিকশন পড়ি, আমি সব সময়ই থ্রিলার পড়ি। যে থ্রিলারগুলো শুরুর কয়েক অধ্যায়ই আমাকে ধাঁধায় ফেলে দেয়, সেগুলোই আমার সবচেয়ে পছন্দের। আমি মনে করি, একটি ভালো থ্রিলার অবশ্যই আমাকে বাস্তব জগৎ সম্পর্কে কিছু শেখাবে। কোমা, দ্য হান্ট ফর রেড অক্টোবর, দ্য ফার্ম—এই থ্রিলারগুলো আমার মনে চিরস্থায়ী দাগ কেটেছে, বাস্তব জগৎকে নতুনভাবে বুঝতে শিখিয়েছে; একই সঙ্গে চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাবমেরিন প্রযুক্তি ও আইন সম্পর্কে আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। যেকোনো উপন্যাসেই নায়ক অন্যায়ের প্রতিরোধ করে—এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু আমার কাছে ভালো লাগে সেসব ভিলেন, যারা ভুল কোনো আদর্শে সঠিক কাজ করে অথবা এর বিপরীতটি। ভালো ও খারাপের মাঝের ধোঁয়াটে-ধূসর অংশই আমার প্রিয়।
আমি যখন কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করে বের হলাম, আমার হাতে দুটি পথ খোলা ছিল। দুটিই ছিল আমার ভালোবাসার কাজ—গল্প লেখা অথবা গান লেখা। আমি বেশ কিছুদিন হলিউডে ছিলাম, গান লেখার জন্য। কিন্তু গানের জগতে আমি খুব বেশি সাফল্য পাইনি। কলেজ থেকে বের হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে লেখা আধুনিক উপন্যাস পড়িনি, চিরন্তন ক্লাসিক উপন্যাসগুলোই ছিল আমার আকর্ষণের কেন্দ্রে। ১৯৯৪ সালে তাহিতিতে ছুটি কাটানোর সময় আমি সিডনি শেল্ডনের লেখা ডুমসডে কন্সপিরেসি-এর একটি পুরোনো কপি সাগরপাড়ের একটি দোকানে পাই। বইটির প্রথম পৃষ্ঠা পড়া শুরু করলাম, এরপর দ্বিতীয় পৃষ্ঠা—এভাবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমি বইটি শেষ করি। এটি শেষ করে একটি চিন্তাই আমার মাথায় আসে—আরে, এটা তো আমি লিখতে পারি। এভাবেই গল্প লেখার জগতে আমার প্রবেশ। ডিজিটাল ফোর্টট্রেস (১৯৯৬) ছিল আমার লেখা প্রথম উপন্যাস। আমি খুবই ভাগ্যবান ছিলাম। কারণ, পাঠকেরা বইটি পছন্দ করেছে। যদি তারা না করত, হয়তো আমি আবার গান লেখার জগতে ফিরে যেতাম।
আমি একজন শিক্ষক এবং প্রচুর বই পড়েছি। এই বইগুলোর কাহিনি ও চরিত্রবিন্যাস নানাভাবে সজ্জিত হয়েছে। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমি এগুলো নিয়ে আলোচনা করি। এতে করে আমি আমার গল্পে নতুন ধারণা পাই এবং এটা আমার গল্পকে আরও সমৃদ্ধ করে। যারা নতুন লিখছে কিংবা স্বপ্ন দেখছে যে একদিন তাদের লেখাও ছাপা হবে, তাদের জন্য একটাই পরামর্শ থাকবে, আর সেটা হলো বাজারে বিক্রির জন্য বই লেখো। কিন্তু এর মানে এটা নয় যে তোমাকে গোয়েন্দা গল্পই লিখতে হবে। ব্রিজেস অব মাডিসন কাউন্টি অথবা কোল্ড মাউন্টেইন—বইগুলো কিন্তু ব্যবসায়িক সাফল্যের কথা ভেবেই লেখা। লেখার ক্ষেত্রে দুটি জিনিস সব সময়ই মেনে চলতে হবে। প্রথমত, চিত্রপটকে কাহিনির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। দ্বিতীয়ত, চিত্রপটকে আকর্ষণীয়ভাবে সাজাতে হবে। তুমি যদি কোনো স্কুলের কাহিনি লেখো, কিন্তু সেই স্কুলের কোনো গোপন ঘটনা কিংবা স্কুলের কোনো বিশেষ বৈশিষ্ট্য না বলো, তাহলে তোমার কাহিনি অনাকর্ষণীয় হতে বাধ্য।
এটা খুবই মজার, যখন আমি সাহিত্যের কোনো আঙিনায় নিজেকে স্থান দেব, সেটা ভাবি। কিন্তু আমি কেবল সে রকম গল্পই লিখি, আমি নিজে যে রকম গল্প পড়তে চাই। সহজ কথায় বলতে গেলে আমি নিজের জন্যই লিখি। আমি এ রকম একজন ব্যক্তি যে কোড এবং ধাঁধা ভালোবাসে, চিত্রকলার রহস্য খুঁজে বের করতে পছন্দ করে এবং পুরোনো স্থাপত্যের অজানা কাহিনিগুলো জানতে চায়—ঠিক রবার্ট ল্যাংডনের মতো।
সূত্র: ওয়েবসাইট, ইংরেজি থেকে ভাষান্তর

পরিচিতি
ড্যান ব্রাউন, মার্কিন থ্রিলার লেখক। ১৯৬৪ সালের ২২ জুন। তিনি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ওঠেন দ্য ভিঞ্চি কোড (২০০৩) লিখে। এ পর্যন্ত তাঁর লেখা বই বিশ্বের ৫২টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং ২০ কোটিরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। টাইম ম্যাগাজিনের বিচারে পৃথিবীর প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির অন্যতম তিনি। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বই হলো: ডিজিটাল ফোর্টট্রেস, ডিসেপশন পয়েন্ট, দ্য ভিঞ্চি কোড, অ্যাঞ্জেলস অ্যান্ড ডেমন্স, দ্য লস্ট সিম্বল ও ইনফার্নো।




  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

0 comments:

Post a Comment