টিক টিক টিক...ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে, আর মাত্র এক মাস বাকি! তুমি হয়তো ভাবছ, কী সব বলছে সাবিরুল। আসলে ২০১১ সালের মে মাসে মালদ্বীপে ‘ইন্সপায়ার ওয়ান মিলিয়ন’ কর্মসূচি শুরু করার পর তিন তিনটি বছর পেরিয়ে গেছে। পৃথিবীব্যাপী এক মিলিয়ন মানুষকে অনুপ্রাণিত করার এই কর্মসূচির শেষ আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হবে আর মাত্র চার সপ্তাহ পর, আগামী ৬ জুন। ভাবছ, কোথায় হবে? হ্যাঁ, বাংলাদেশে! ঢাকায়! আন্তরিক ধন্যবাদ জেসিআই বাংলাদেশকে এই অনুষ্ঠান আয়োজনের গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়ার জন্য।
২৬টি দেশের যত মানুষ আমার এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে, তাদের সবার প্রতি আমার অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আর আমার নিজের দেশে ‘ইন্সপায়ার ওয়ান মিলিয়ন’-এর সমাপনী অনুষ্ঠান করতে পারা আমার জন্য এক বিশেষ আনন্দের ব্যাপার।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় বক্তব্য দেওয়ার পর ই-মেইল ও ফেসবুকের মাধ্যমে বাংলাদেশি অনেক তরুণ-তরুণী আমাকে একটি প্রশ্ন করেছে ‘আমি উদ্যোক্তা হতে চাই। কী করব?’
ব্যবসা কীভাবে করবে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে রয়েছে। শুধু ব্যবসার খুঁটিনাটি জানা থাকলেই উদ্যোক্তা হওয়া যায় না। এটি একটি লাইফস্টাইল। কেন? কারণ, এর মধ্যে রয়েছে স্বাধীনতা ও নিজের কাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ। তোমার সিদ্ধান্তই এখানে চূড়ান্ত, কেউ তোমাকে বলে দেবে না কী করতে হবে আর কীভাবেই বা করতে হবে।
কিন্তু এত দূর পৌঁছাতে হলে নিজের যোগ্যতা নিয়ে অবশ্যই সঠিক ধারণা থাকতে হবে। কীভাবে উদ্যোক্তা হবে সে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে আমি তোমাকে প্রশ্ন করতে চাই, তুমি কোন কাজটিতে সবচেয়ে দক্ষ? অনেকেই এ প্রশ্নের চটপট উত্তর দিতে পারবে না, সমস্যাটা সেখানে।
আমি কীভাবে তোমাকে সাহায্য করব যদি তুমি নিজেই না জানো তোমার দক্ষতা কোথায়? সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে তোমার যেসব বিষয় নিয়ে আগ্রহ আছে সে সবকিছুর একটা ম্যাপ তৈরি করা। স্থপতি, পাইলট, দার্শনিক, খেলোয়াড়, অভিনেতা—যা-ই হতে চাও না কেন। তুমি কি জানো সব পেশার মধ্যেই উদ্যোগী মনোভাবের প্রয়োজন আছে? সরাসরি ব্যবসা না করেও তুমি অন্য পেশায় উদ্যোগী হতে পারো, উদ্যোক্তার মতো মানসিকতা ধারণ করতে পারো।
উদ্যোক্তা হতে হলে নিজের সবচেয়ে আগ্রহের বিষয়টি কী তা জানতে হয়। আর সেই বিষয়ে কাজ করার জন্য জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে তৈরি আছো, তাও বুঝতে হয়। এটি কোনো নয়টা-পাঁচটা চাকরি নয়। একটা একই সঙ্গে ক্যারিয়ার ও লাইফস্টাইল। যেখানে কোনো সীমানা নেই, কোনো নিয়ম নেই, শুধু স্বাধীনতা।
নিজেকে জানার পরবর্তী ধাপ হলো তোমার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে কোনো সমস্যাটি সমাধান করতে পারবে, তা খুঁজে বের করা। কেবল এটা বের করার পরেই কোনো ব্যবসা বা প্রকল্প শুরু করা সম্ভব। উদ্যোক্তারা সমস্যা ভালোবাসে, আর বড় মাপের মানুষেরাই সমস্যা সমাধান করতে পারেন। তেমন মানুষ হতে হলে নিজের আইডিয়া ও আগ্রহের ওপর বিশ্বাস থাকতে হবে, একই সঙ্গে অন্যের নেতিবাচক মন্তব্য শুনে যাতে সে বিশ্বাস ক্ষয়ে না যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এ জন্য ইতিবাচক ও সমমনোভাবাপন্ন লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে হবে ও যোগাযোগ রাখতে হবে।
তাহলে তোমাদের ‘কীভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যায়’ প্রশ্নের উত্তরটা দাঁড়াচ্ছে এমন—নিজেকে জানো, নিজের দক্ষতা আবিষ্কার করো।
-এমন কোনো সমস্যা খুঁজে বের করো, যা তোমার দক্ষতা বা আগ্রহ দিয়ে তুমি সমাধান করতে পারবে।
- নিজের আইডিয়া, চিন্তাভাবনা অন্যের সঙ্গে শেয়ার করো। তুমি বলতে শুরু করলেই কেবল অন্যেরা জানবে, তুমি কী করতে চাইছ এবং কীভাবে তারা তোমাকে সাহায্য করতে পারবে।
আর বেশি দেরি নেই- আমি দারুণ উৎসাহ নিয়ে অপেক্ষা করছি কবে বাংলাদেশে ফিরে ঢাকার সবচেয়ে উঁচু ভবনটির ছাদে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলব, ধন্যবাদ! সবাইকে ধন্যবাদ, যারা আমাকে পৃথিবীজুড়ে এক মিলিয়ন মানুষের জীবন বদলে দিতে সাহায্য করেছেন। শিগগিরই দেখা হবে!
0 comments:
Post a Comment