Md. Afrooz Zaman Khan

Afrooz
Md. Afrooz Zaman Khan. Powered by Blogger.
RSS

অনিশ্চয়তার মধ্যেও হাল ছাড়িনি

অ্যাং লি



১৯৭৮ সালে আমি সিনেমাটোগ্রাফি পড়ার জন্য ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়ে আবেদন করি। আমার বাবা কিন্তু এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি আমাকে এক পরিসংখ্যান দেখিয়ে বলেছিলেন, প্রতিবছর ব্রডওয়েতে ২০০ রোলের জন্য প্রায় ৫০ হাজার শিল্পী আবেদন করে। কিন্তু তাঁর অমতেই আমি আমেরিকার উদ্দেশে প্লেনে উঠে বসি এবং এতে করে আমাদের মধ্যে যোগাযোগ অনেক কমে যায়। এর পরের দুই দশকে আমাদের মধ্যে খুব কমই কথার আদান-প্রদান হয়েছে। 
এর কয়েক বছর পরে আমি যখন ফিল্ম স্কুল থেকে স্নাতক হয়ে বের হই, তখন আমি বুঝতে পারলাম কেন বাবা আমার জন্য চিন্তা করছিলেন। আসলে একজন চীনা নতুন মুখের জন্য আমেরিকার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নেওয়া এককথায় অসম্ভব ছিল। ১৯৮৩ সালের শুরু থেকে পরের ছয় বছর আমি অসহ্য আশাহীন অনিশ্চয়তার মধ্যেও চেষ্টা করেছি। এর বেশির ভাগ সময়ই আমি সিনেমার মালপত্র আনা-নেওয়ার কাজে কর্মীদের সাহায্য করেছি, ডিরেক্টরের সহকারী হিসেবে কাজ করেছি এবং ছোটখাটো নানা কাজে ব্যস্ত থেকেছি। 
প্রথম পৃষ্ঠার পর
আমার এখনো মনে পড়ে, একটি চিত্রনাট্য নিয়ে আমি ৩০টিরও বেশি প্রোডাকশন কোম্পানির কাছে গিয়েছি এবং প্রতিবারই আমি আশাভঙ্গের কষ্ট নিয়ে ফিরে এসেছি। ওই সময় আমি ৩০ বছরে পা দিই। প্রাচীন চীনা প্রবাদে আছে, ৩০-এ একজন শক্ত হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু তখন আমি নিজের খরচ চালিয়ে নিতেই হিমশিম খাচ্ছিলাম। আমার সামনে দুটি পথ খোলা ছিল। এক. অপেক্ষা করা; আর দুই, সিনেমা বানানোর স্বপ্ন ছেড়ে দেওয়া। আমি খুবই ভাগ্যবান। কারণ, সে সময় আমার স্ত্রী আমার পাশে ছিল। আমার স্ত্রী ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী। সে বায়োলজির শিক্ষার্থী ও স্নাতক শেষ করার পরে সে ছোট একটি ফার্মাসিউটিক্যাল রিসার্চ ল্যাবে কাজ নেয়। তার আয় ছিল খুবই সামান্য এবং সে সময় আমাদের ওপরে ছিল আমাদের সন্তান হানকে বড় করে তোলার দায়িত্ব। আমি গ্লানিবোধ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রান্না, পরিষ্কার করা, সন্তান পালনসহ ঘরের সব কাজ নিজে করার সিদ্ধান্ত নিলাম। সেই সঙ্গে আমি আমার পড়ালেখা, সিনেমার রিভিউ তৈরি করা এবং স্ক্রিপ্ট লেখার কাজ চালিয়ে যেতে থাকলাম।
আসলে একজন মানুষের জন্য এ ধরনের জীবন খুবই হীনম্মন্যতার। একসময় আমার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আমার স্ত্রীকে কিছু টাকা দিতে চাইল, যাতে করে আমরা একটা চায়নিজ রেস্টুরেন্ট খুলে বসতে পারি এবং ভালোভাবে আমাদের সংসার চলতে পারি। কিন্তু আমার স্ত্রী সেই টাকা নিতে অস্বীকার করল। যখন আমি এই ঘটনা জানতে পারলাম, টানা কয়েক রাত আমি ঘুমোতে পারলাম না এবং শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিলাম, আসলে আমার স্বপ্ন সফল হওয়ার নয় এবং এখনই সময় বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার। 
এর পরে আমি খুব দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে কাছের একটি কমিউনিটি কলেজে কম্পিউটার কোর্সে ভর্তি হলাম। যখন আমার কাছে অন্য সবকিছুর চেয়ে একটি কাজের খুব বেশি দরকার ছিল, আমি মনে করলাম কম্পিউটার জানলে হয়তো আমি তাড়াতাড়ি একটি কাজ পাব। এর পরের কিছুদিন, আমার মন এক অব্যক্ত কষ্টে আক্রান্ত হয়ে ছিল। আমার স্ত্রী, আমার অস্বাভাবিক আচরণ খেয়াল করল এবং আমার ব্যাগে কম্পিউটার কোর্সের শিডিউল খুঁজে পেল। ওই রাতে সে আমার সঙ্গে আর কোনো কথা বলেনি।
এর পরের সকালে, গাড়িতে চড়ে অফিসে রওনা হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে আমাদের বাসার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে সে আমাকে ডাকল এবং বলল, অ্যাং, তোমার স্বপ্নকে ভুলে যেয়ো না। 
এর কিছুদিন পরেই আমি আমার স্ক্রিন প্লের জন্য ফান্ড খুঁজে পেলাম এবং আমার নিজের ফিল্মের শুটিং শুরু করলাম। তারও কিছু সময় পরে আমার কিছু কিছু ফিল্ম বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করা শুরু করে। পেছনের স্মৃতি রোমন্থন করে আমার স্ত্রী আমাকে বলেছিল, আমি সব সময়ই বিশ্বাস করতাম, তোমার শুধু একটা উপহারের দরকার ছিল। তোমার প্রতিভা হচ্ছে সিনেমা বানানো। অনেকেই কম্পিউটার নিয়ে পড়ালেখা করছে, কাজ করছে। তাদের একজন অ্যাং লির প্রয়োজন নেই। তুমি যদি সোনালি মূর্তিটি পেতে চাও, তোমাকে তোমার স্বপ্নের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে। 
আজকে, আমি সেই সোনালি মূর্তিটি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমি বিশ্বাস করি, আমার ধৈর্য এবং আমার স্ত্রীর করা অসংখ্য আত্মত্যাগ অবশেষে তাদের প্রাপ্য পুরস্কার পেয়েছে। সেই সঙ্গে আমি মনে করি, আমার উচিত সিনেমা বানানো চালিয়ে যাওয়া। কারণ, এটাই হচ্ছে আমার সারা জীবনের স্বপ্ন।
সূত্র: ২০০৫ সালে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের অস্কার পাওয়ার পরে অ্যাং লির বক্তব্য। ইংরেজি থেকে অনুবাদ: 
মনীষ দাশ
পরিচিতি 
অ্যাং লির জন্ম ২৩ অক্টোবর, ১৯৫৪ সালে তাইওয়ানে। অ্যাং লি শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে দুবার একাডেমি অ্যাওয়ার্ড (অস্কার) লাভ করেন—২০০৫ সালে ব্রোকবেক মাউনটেইন-এর জন্য এবং ২০১২ সালে লাইফ অব পাই-এর জন্য। এ ছাড়া ২০০০ সালে তিনি বিদেশি ভাষায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের অস্কার পুরস্কার লাভ করেন ক্রাওচিং টাইগার, হিডেন ড্রাগন-এর জন্য।

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

0 comments:

Post a Comment