হাসান ফোনটা সারাদিন কয়েকবার চেককরেছে ।
না ,নীলা একবারও ফোন দেয় নি ।
অথচ মেয়েটার কি ফোন দেয়া উচিত না ?
বছর গড়িয়েছে সম্পর্কের ।
কিন্তু কিছু সম্পর্ক দিনে বদলের সাথে গভীরতা হারায় ।
হাসান আর নীলার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
নীলা দেখতে দেখতে বদলে গেছে।
প্রথমদিকে নীলা সারাদিন ফোন দিতো ।
তারপর কমিয়ে দিতে দিতে থেমে যায় । ফোন ধরতো না ।
হাসানকে জানায় সে তার বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়েছে । ভেঙে গিয়েছিলো অঙ্কুরেই সম্পর্কের কুঁড়ি । অথচ মেয়েটা ফিরে এসেছিল
সপ্তাহবাদেই । কিন্তু কেমন জানি একটা দুরত্ব ।
হাসান নিজের সব জানাতো । কোন মেয়ের
সাথে কথা বললেও জানাতো । কিন্তু দ্বিতীয় বার সুযোগ দিতে চায়নি হাসান । কিন্তু মেয়েটার প্রতি অন্য রকম একটা দুর্বলতা ছিল । একদিন মাকে দেখিয়ে বলেছিলোঃ দেখতো মা ! মেয়েটাকে আমার পাশে মানাবে কি না ?
মা কেবল হেসেছিলো । মাঝখানে কেবল হাসানই ফোন দিতো। ফোন ধরতেই বিরক্তি ঝরতো নীলার কন্ঠে ! সে কথা বলতো না । গত ছয় মাসে নীলা একটিবারও
ভালোবাসি বলেনি কিংবা সামান্য
ভদ্রতা করে প্রশ্ন করে নিঃ কেমন আছো ?
তবু মেয়েটাকে ফোন করে । মাঝে দুদিন ফোন করে না মেয়েটাকে । কিন্তু কোন সাড়া নেই ।
নিজেই ফোন দিয়েছিলো । নীলার কন্ঠ ভাবলেশহীন । যেন কিছুই ঘটেনি । তবু হাসান চুপ করে ছিলো । সপ্তাহখানেক আগে হাসান নীলার সাথে দেখা করেছে । পুরো সময়টায় মেয়েটা মাত্র ১৯ টা বাক্য বলেছে যার একটাতেও বোঝা যায়নি যে নীলা হাসানকে ভালোবাসে ।
কিন্তু
কপালের ভাঁজ পড়ার ধরন দেখে বুঝেছিলো নীলা বিরক্ত ।
একটা সেলফি উঠিয়েছিলো নীলার সাথে ।
মাকে দেখাবে বলে । মা কে পাঠানো হয় নি ।
তবে মা কে জানিয়েছে দেখাবে । নীলা সত্যিই
বিরক্ত । এটা হাসানও বোঝে । নীলার
জীবনে কেউ এসেছে এটাও বোঝা যায় । নীলার ফেসবুকের স্ট্যাটাসে গত কয়েকমাস থেকেই বোঝা যায় নীলার অন্য কেউ আছে । কিন্তু হাসান তো তাকে প্রায়ই প্রশ্ন করতোঃ অন্য কাউকে ভালোবাসো ? নীলা বরাবর এড়িয়ে যেত। সম্পর্কটা একটা জায়গায় আটকে আছে । হাসান ফোন দিয়ে রাগারাগি করলেই নীলা ব্রেকআপ করবে । কারন নীলা ভালো মেয়ে । কেউ যেন তার দোষ ধরতে না পারে সে ব্যাপারে সে যথেষ্ট যত্নবান । নীলাদের কাছে আত্মসম্মানটা বড় । অন্য প্রেমিক যেন না জানে নীলা কত বড় অভিনেত্রী । নীলা চাইছে হাসান ব্রেকআপ করুক। হাসানকে সে না করতে তো আর পারে না !
কিন্তু আজকে ব্রেকআপ করার মত কারন এসে গেছে ।
কারন ,
হাসান জমানো টাকা দিয়ে একটা শাড়ি আর রিং গিফট করেছিলো । নীলা তা পড়েনি । অথচ আজকে কেউ একজন নীলাকে কিছু গিফট করতেই সেসব নীলা দিয়েছে প্রোফাইলে ।
হাসানকে খুশি রাখার জন্য
নয় বরং মেয়েটির সকল কাজ অন্য কারো মন রক্ষার স্বার্থে। মা ফোন করে বলেঃ -কি রে কবে আসবি ?
: আসবো তো মা !
- নীলা আমার ফোন ধরে না ! তোর সাথে কথা হয় তো ?
: হ্যাঁ মা হয় ।
- বাবা তুই ভালো আছিস তো ! : হ্যাঁ আছি মা !
- নীলা কি তোকে ছেড়ে গেছে ?
: মা পরে কথা হবে ।
- মায়ের কথা শোন । তুই বাড়ি ফিরে আয় ।
: আসছি মা ! দ্রুতই আসছি ।
মোবাইল বের করে নীলার সাথে তোলা ছবিটা ডিলেট করে দেয় । মোবাইলে শততম বারেরও বেশি সংখ্যা পূরণ করে ফোন দেয় নীলাকে। মেয়েটাকে খাঁচা থেকে মুক্তি হওয়ার সময় হয়ে গেছে । ভালোবেসে যার হৃদয়ের সাথে নিজের সত্ত্বাকে জুড়ে দিয়েছিলো , আজ সে উড়াল দিবে একাই। সাথে নিয়ে যাবে দুটো প্রান । একটি মাঝপথে ফেলে দিবে । খাচায় পড়ে থাকবে কয়েকটি পালক । নীলারা খুব ভালো মেয়ে হয় । তারা কারো সাথে ব্রেকআপ করে না । এত পরিমানে কষ্ট দেয় যে অন্য মানুষটি সহ্য করতে পারে না । তারপর লোকের কাছে প্রচার করেঃ ছেলেটা থার্ডক্লাস ছিলো । হাজারটা মেয়ের পেছনে ঘোরে । কিছু না করতেই ব্রেক আপ করলো । অন্য একজনের বুকে মাথা ঠেকিয়ে বলেঃ কেউ আমাকে বোঝে না । ভালোবাসে না । সবাই এভাবেই ছেড়ে যায় । সাথে থাকে কিছু মায়া কান্নার গল্প । কিছু মানুষ সেই অভিনয়কে ভালোবাসা ভেবে বসে । কিন্তু নীলারা ভদ্র মেয়ে । তারা ধোঁকা দিয়েও সমাজের ভালো মেয়ের আসনটি ধরে রাখে গর্বের সাথে ।
আর
হাসানরা পরিচয় পায় ধোঁকাবাজের !
0 comments:
Post a Comment