ওহ আল্লাহ আমি তো পাগল হয়ে গেলাম । সে এত সুন্দর কেন!! এত আদুরে গলায় কথা বলে কেন?
আমার সাথে পড়ে মেয়েটা, কারো সাথে কথা বলে না, বললেও শুধু মেয়েদের সাথে। সামনের বেঞ্চে বসে, ক্লাস শেষ সোজা বাসায়। গতকালের ঘটনা, মাএ ক্লাস শেষ হয়েছে, আমি অফিস রুমে গেলাম আগের স্যার এর সাথে দেখা করতে । তাকেও দেখলাম দাড়িয়ে আছে। গাধা অনিক মামা বহুতক্ষন ওয়েট করালো। এদিকে পুরো ক্লাস ফাকা হতে শুরু করছে। হঠাত কোথা থেকে ভয়ংকর ঝড় শুরু হল, আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি। আমি বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই রিকসা খুজছি।
-এই শুনো, আমাকে একটা রিকসা করে দাওনা...
এ আল্লাহ এত মিষ্টি গলা। টপ টপ করে তার মাথার চুল বেয়ে পানি পড়ছে,
আমি হা করে তাকিয়ে আছি। বৃষ্টি ভেজা কাক দেখেছি, ময়ূর এই প্রথম।
-ইয়ে মানে রিকসাতো পাওয়া যাবেনা।
আমিও রিক্সার জন্যই দাঁড়িয়ে আছি। চল রাস্তার ওপারে দোকানটাতে গিয়ে দাড়াই, বৃষ্টি কমলে না দেখব। আর বাতাসের যেই অবস্থা, এই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা নিরাপদ নাহ...
সে আমার পিছু পিছু হাটতে শুরু করল। আমরা দাঁড়িয়ে আছি চুপচাপ। সে ঠাণ্ডায় কাপছে। আমি মনে হয় ট্যারা হয়ে যাব এইভাবে আড়চোখে দেখতে দেখতে। আমি মুখোমুখি দাড়ালাম। -এই আইস্ক্রিম খাবে।
-কি বল ? এই ঠান্ডার মধ্যে। নাহ আমার এত শখ নাই।
কেউ না খেতে চাইলে আর কি করার আমার আইস্ক্রিম খেতেই হবে, বহু পুরানো অভ্যেস,
বৃষ্টিতে ভিজে আইস্ক্রিম...আমি তার সামনেই মজা করে খাচ্ছি।
তার নাম জারিন । বাসায় আসার পর নিয়ম মাফিক যা করার করছিলাম। কিন্তু আজ কি যেন হয়েছে, এ কি যেন নাই,
খালি খালি লাগে। ভাবতে ভাবতে রাতে বিছানা মাএ চোখ বুজেছি। ওমা বৃষ্টি ভেজা মেয়েটার চেহারা। আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম। যতবারই চোখ বন্ধ করি তার চেহারা। ঘটনা কি!! আমার আজ কি হল। এপাশ ওপাশ করতে করতেই ফজরের আজান। -এই ওঠ। সৌরভ ওঠ। তরে নিয়ে আর পারলাম নাহ। এত বড় হইছিস কলেজে পরিস, এখনো তোরে ঘুম থেকে উঠাতে হয়। -মা মা আরেকটু ঘুমাই, ১০ মিনিট। কলেজের সময় হয়ে যাচ্ছে। কোনমতে নাস্তা খেয়ে দিলাম ছুট। জারিন আমাকে দেখতেই এগিয়ে এল। -এই। কি অবস্থা।
-ভা-ভা-ভালো...
- তোমার গলার এই অবস্থা কেন।
হি হি হি আইসক্রিম খেতে খুব মজা ছিল তাই না।
এত সুন্দর করে কেউ হাসতে পারে আমার জানা ছিল না। আমি কি প্রেমে পড়েছি। এইটাই কি প্রেম!! পুরো ক্লাসে তার
দিকেই তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার ঘাড় ব্যাথা হয়ে গেছে। ক্লাস শেষে রাস্তার মধ্যে আবার দেখা ......। (প্রেম করলে যা হয় ) -কি রিকসা করে দিতে হবে? -হি হি নাহ আমি পারব, আজতো বৃষ্টি নেই। থাঙ্কস।
-ইয়ে মানে তোমার মোবাইল নাম্বারটা পেতে পারি।
-নাহ! আমার মোবাইল নেই,
আব্বুরটা আছে দিব...
তার ঠোটের কোনে দুষ্টু হাসি, মজা করছে আমি বুঝতে পারছি। মনে হয় তার ফোন বাজছে।
-হ্যালো আব্বু হ্যা আমি আসছি, হুম আচ্ছা ঠিক আছে। রাখি। সে বলল -আমি আসি.. বলে রিক্সায় উঠে বসল। সে পিছন ফিরে তাকিয়েই হাসল। যতদূর তার রিক্সা চোখের আড়াল না হল আমি দাঁড়িয়ে রইলাম।
-আজিব তুই প্রেমে পড়ছিস মানে!!
-দোস্ত আমি মানে দোস্ত
আমাকে বাচা...
-মাম্মা সব খুলে বল দেখি। তুমি কিসের চিপায় পড়ছ...হে হে হে।
আমি আমার প্রিয় বন্ধু সুজনকে কে সব খুলে বললাম। সে আমাকে নিশ্চিন্ত থাকতে বলল। সে যখন বলেছে কোন চিন্তা নেই, ব্যাস যা করার ওই করবে। এইদিকে সে কলেজে এ আসে, কথা হয়, কিন্তু ফোন নাম্বার এর চিন্তায় আমি অস্থির। আমার দিন কাটেনা, রাত কাটতে চায় না। নাম্বারটা থাকলে না হয় রাতে কথা বলা যেত। নাহ আরেকবার চাইব নাকি? আমি কি তাকে নিয়ে যে আমার বেহাল দশা সেইটা জানাবো। নাহ ভয় লাগে। কেন ভয় লাগে এই সময় কি সব ছেলেদেরই এমন ভয় লাগে!!! গত ২দিন কলেজে সে আসেনি। আমি খুবি অস্থির। কিছু হল কিনা।
-হ্যালো...দোস্ত বল।
-মাম্মা তুমি লক্ষি বাবুর মত আমার বাসায় চলে আস। দেরি কইরো না। তোমার জন্য স্পেশিয়াল নিউজ আছে। হে হে হে।
-দেখ ভন্ডামী করিস নাহ। এখনই বল।
সে ফোন রেখে দিল। ওর সমস্যা একটাই। খালি রহস্য করবে।
-এসো এসো সোনামনি, তোমার চরণধূলিতে আমি পবিএ হই।
-শালা কুত্তা তাড়াতাড়ি বল। ঢং করিস নাহ...
-এই নাও তোমার নায়িকার নাম্বার। নান্নার বিরিয়ানী হবে আনলিমিটেড...ইয়া আআহু...
-কেমনে জোগাড় করলি। ভুয়া নাতো....!!
-শূয়র... তুই কি জানিশ পুর্ব
জন্মে আমি শার্লক হোমস ছিলাম।
-হ কচু, এখন কি করুম.. -গ্লাসের পানিতে ভিজাইয়া কাগজটা চিবাইয়া খা, হারামী..ন্যাকা ..সব
আমারে কইরা দিতে হইলে প্রেমটা আমিই করি। চোখ বন্ধ কইরা ডায়াল কর। এই লও ফোন...
আমার হাত কাপছে। বুক ধর ফর করছে। মনে হয় মরে যাবো!!!
-হ্যালো স্লামালাইকুম জারিন বলছেন।
-হেলু কেঠা, কেঠা কইবার লাগছেন,
হেলু...কথা কননা কেলা..হেলু আমি ফোন কেটে দিলাম। সুজন খুবি আয়েশে খাটে শুয়ে পায়ের উপর পা তুলে নাড়াচ্ছে। আমি ঝাপিয়ে পড়লাম ওর উপর।
-কিরে কি হইল। তুই আমারে মারছিস কেন!!! থাম থাম কি হইছে।
-বদমাইশি করার জায়গা পাসনা, আগের জন্মে শার্লোক হোমস আছিলা, তাই না..ভুল নাম্বার দিলি কেন!!
-দাড়া রাখতো। দে ফোনটা দে...তুই ডায়াল করতে ভুল করছিস। এইবার আমি করি। শালা সালাম দাও কেন? তুমি কি খালার
সাথে কথা বলবা নি। হে হে। নে নে কথা বল। সুজনও ফোনের একপাশ থেকে কান লাগিয়ে রাখল।
-হ্যালো জা- জারিন বলছেন।
-না আমি ওর বাবা ।
আমার মাথায় মনে হল কেউ চাটি মারল। মাথা ভো ভো করছে। আজ একি হচ্ছে। আমার হার্ট বিট বেড়ে গেছে। আমি কি বলব
বুঝতে পারছি না। সুজন আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিল।
-আ আঙ্কেল স্লামালায়কুম কেমন আছেন। আমি জারিনের কলেজ অফিস থেকে অনিক বলছি।
-ওহ অনিক স্যার কেমন আছেন।
-জি আঙ্কেল ভালো। আঙ্কেল জারিনতো গত দুদিন ধরে ক্লাসে আসছে নাহ, তাই আমি ভাবলাম একটু খোজ নেই।
-না মানে ওকেতো গতকাল হাসপাতালে ভর্তি করেছি।
-কি বলেন আঙ্কেল কি হয়েছে?
-ওই কিছু ট্রিটমেন্টের জন্য, ওর থ্যালাসেমিয়া আছেতো।
-আঙ্কেল কোন হাসপাতালে আছে, একটু ঠিকানাটা দিতেন দেখে যেতাম।
-আচ্ছা লিখে নেন। আমার কান্না পাচ্ছে, কেন পাচ্ছে জানি না। এই রোগটা হলে রোগিকে সারা জীবনই
ভুগতে হয়। কয়েক মাস পর পর রক্ত দিতে হয়।
-কিরে গাধা কাদছিস কেন? যদি মন বলে এই রোগী মেয়েটাকেই তুই ভালবাসিস আর বিয়ে করবি তাহলে চল হাসপাতালে,
আর মন যদি সায় না দেয় তাহলে বাদ দে।
-দোস্ত
আমি জারিনকে ভালবাসি। ওকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারিনা।
-That’s my boy…চল তবে,
আমি আছি তোর সাথে।
ভিজিটিং আওয়ার ছাড়া কোন ভাবেই হাস্পাতালে ঢুকতে দিবে নাহ। সুজন কিভাবে যেন ম্যানেজ করল।
পাগলটা কোথা থেকে যেন একটা গোলাপ নিয়ে এল।
-একটা গোলাপ!! ১টাতে কি হবে। কি ভাববে বলত।
-you know my boy. I’m the master..আমার ৯
নাম্বার গার্লফ্রেন্ড রানিং।
যা বলছি সেইটাই কর।
একেবারে কচি খোকা, কিসসু বুঝেনা। কেবিনের গেটে নক করতেই একজন পুরুষ গেট খুলে দিল। মনে হয় জারিনের বাবা। চেহারায় মিল আছে।
-জি স্লামালায়কুম। আমি সৌরভ
, জারিনের সাথে পড়ি মানে কলেজে এ একসাথে পড়ি।
-এসো ভিতরে।
জারিন আমাদের দেখে বুকে চাদরটা টেনে দিল।
দেখতে কেমন হয়েছে, মনে হচ্ছে কেউ সিরিঞ্জ দিয়ে পুরো শরীরের রক্ত টেনে নিয়েছে।
মনে হচ্ছে একটা সাদা ময়ূর।
-হায়। কেমন আছ। আমার খবর পেলে কোথায়!! আমি খুবি অবাক হচ্ছি। আমি বলতে যাব তখনই সুজন বলতে শুরু করল। তার বাবা বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়েছে।
-না মানে আপনি ২ দিন কলেজে এ আসেন নি বলে আমার বন্ধুটি কাদতে কাদতে শেষ। দেখেন চোখের নিচে কালি পরে কি অবস্থা।
-ও ফাইজলামি করছে। এই তুই যা।
-বন্ধু এখনতো আমাকে চিনবানা।
পৃথিবীতে সবাই সার্থপর। হায় রে দুনিয়া...
সুজন বারান্দায় গিয়ে দাড়াল,
আঙ্কেলের সাথে কথা বলছে।
-তোমার শরীরের একি অবস্থা।
কোন মানুষ অসুস্থ হলে আমার খুব ভয় লাগে।
-আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তুমি আসছ।
আমি ভাবছি ফোন নাম্বার না দেয়াতে তুমি রাগ করছ। জানো আমি ইচ্ছা করেই দেই নাই। আমার এই রোগটা ছোট বেলা থেকেই। আমার মা নেই তো তাই আমি আলাদা থাকি, সবাই ভাবে আমি খুব দেমাগী। হি হি। আসলে তা না। আমিও স্বপ্ন দেখতে চাই। কিন্তু কেউ জেনে শুনে কি আর একসাথে পথ চলতে চাইবে।
-শুনো জারিন আমি আছি তোমার পাশে বন্ধু হয়ে থাকব সবসময়।
সুজন ডাকছে... -তুই একটা গাধার বাচ্ছা...বন্ধু হয়ে থাকব...শালা তুই বলতে না পারলে আমি ১০ নাম্বার গার্ল ফ্রেন্ডের
প্রপজাল্টা দিয়ে আসি।
যা হিম্মতরাখ বলে ফেল... জারিন হয়ত কথা গুলা শুনেছে।
সে মুচকি মুচকি হাসছে।
-এইটা ফুলটা তোমার জন্য। জারিন মানে মানে আমি তোমাকে মানে ...তুমি সুস্থ হয়ে নাও তারপর কিছু কথা বলব, আজকে আমি আসি।
-শুনো সুস্থ হলে আমাকে সুন্দর একটা জায়গায় নিয়ে তোমার কথাগুলো বলবে, ঠিক আছে।
কোথায় নিয়ে যাবে আমাকে?
-মানে ইয়ে চিড়িয়াখানায়...
হি হি হি জারিন হেসেই চলেছে,
মায়ের আদর না পাওয়া এ হাসি যেন কোনদিন না থামে আমি আপ্রান চেষ্টা চালাব।.........