মাইকেল শুমাখারের জন্ম ১৯৬৯ সালের ৩ জানুয়ারি, জার্মানিতে। তিনি সাতবার মোটর রেসিংয়ের ফর্মুলা ওয়ান ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করেন। চালকদের নিরাপত্তার বিষয়ে ইউনেসকোর সচেতনতা কর্মসূচির শুভেচ্ছাদূত শুমাখার। নানান দাতব্য সংস্থায় এক কোটি ডলারেরও বেশি দান করে তিনি আলোচিত।
আমাকে নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু বলেন। সেরা খেলোয়াড়, আদর্শ, আইকন। এ শব্দগুলো বেশ অস্বস্তিকর। আমি জানি আমি কী। আমার নেশা মোটর রেসিং। পেশা দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা। এখানে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে প্রতিমুহূর্তে, কিন্তু তার পরও আমি ছুটে চলি। সব সময় আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ শুরু করি। যার কারণে বাকি কাজটুকু নিয়ে দ্বিধায় পড়ি না। মোটর রেসিং খেলায় এক সেকেন্ডের সঙ্গে আরেক সেকেন্ডের কোনো মিল নেই। তাই এখানে জীবনের সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ খুঁজে পাওয়া যায়।
আমি আমার কাজটুকু জানি, বুঝি। তাই যেকোনো চাপেই মানিয়ে নিতে পারি। যেকোনো চাপে মানিয়ে নেওয়াই বড় বাধা। ফেরারি গাড়ি যখন চালাতাম, তখন পুরো ইতালি আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকত। একটা শহর না, পুরো একটা দেশের কোটি কোটি চোখ থাকত আমাদের ওপর। এটা অনেকটা ফুটবল ক্লাবের মতন। আমাকে কেউ কেউ ‘পোপ’ বলে ভাবত। আমি আসলে নিতান্তই এক গাড়িচালক, যে কিনা অন্যদের চেয়ে একটু বেশি জোরে গাড়ি চালাতে পারে।
সত্যিকার অর্থে আমি কখনই মাইকেল শুমাখার হতে চাইনি। আমি নিজের আনন্দের জন্য সব করতাম। শখের বশেই গাড়ি চালানোর দুনিয়ায় আমি আসি। ভাঙা আর নড়বড়ে গাড়ির যন্ত্রপাতি দিয়ে আমার দুনিয়া আমি নিজ হাতে সাজানোর চেষ্টা করেছি মাত্র। আমার ওজন কম ছিল বলেই হয়তো আমি রেসিংয়ে জিতে যেতাম। এখন আমি মাইকেল শুমাখার হয়ে পরিচিতি পাওয়ায় ভীষণ বিপদে পড়ে গেছি। আমার এখন টাকাপয়সা আছে, আছে স্বাধীনতা। কিন্তু আমার বাইরে ঘুরতে যাওয়াই এখন অসহ্য লাগে। চারদিকে ক্যামেরা আর ভক্তদের দৌড়াদৌড়ির জন্য আমাকে পালিয়ে থাকতে হয়।
আমার বাবা আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিলেন না। তিনি বেশ ধার-দেনাগ্রস্ত ছিলেন। আমি বাবাকে অবাক করার চেষ্টা করতাম। রেসিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বাবাকে চমকে দেওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। তাই তো প্রথম রেস বিজয় শেষে বাবাকে অবাক করার জন্য এক স্যুটকেস টাকা দিয়েছিলাম। বাবা বিশ্বাস করেননি। সেটা ছিল আমার জন্য অনন্য এক অভিজ্ঞতা। সাফল্যের প্রথম সূত্র অনুপ্রেরণা। আমার বাবাই আমার সব প্রেরণা।
আমি কোনো রেকর্ড গড়ার জন্য কিংবা ভাঙার জন্য খেলতে নামি না। আমি গাড়ি নিয়ে উড়তে পছন্দ করি। আপনি চিন্তা করুন, হাতে হুইল আর পায়ের নিচে ব্রেক, আপনার কথামতো ছুটছে গাড়ি, এর চেয়ে থ্রিলিং আর কী হতে পারে! আমি সব সময়ই এমন অভিজ্ঞতার জন্য মুখিয়ে থাকি। জীবনটাই গতি, এখানে থেমে থাকার কিছু নেই।
আমি ভাগ্যে প্রচণ্ড বিশ্বাসী। প্যারাস্যুট দিয়ে বিমান থেকে চোখ খুলে নামতে পছন্দ করি। মোটরবাইকও চালাই। পাহাড়ে চড়ি, স্কেটিং করি। সময়কে উপভোগ করার জন্য ঘুরতে পছন্দ করি। শরীরে অ্যাড্রেনালিন হরমোন যত বেশি প্রবাহিত করা যায়, ততই জীবন উপভোগ্য। সবকিছুতে আনন্দ খোঁজাই আনন্দের কাজ। আমি কখনোই থামতে চাই না, এটা আমার জন্য সম্ভব নয়।
দিনশেষে মানুষের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের সততা। সততা আর বিনয় একজন মানুষকে অনেক ওপরে নিয়ে যায়। প্রত্যেক মানুষের হাতেই লুকিয়ে আছে তার ভবিষ্যৎ। মানুষ নিজেই তার ভবিষ্যৎ গড়ে। আমাদের শুধু বর্তমানকেই নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে। আর তাহলে ভবিষ্যৎ এসে আপনার দুয়ারে কড়া নাড়বে। কাজ করুন, অপেক্ষা করুন, দেখবেন সম্ভবনাময় এক ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।
একবার জয়ী হলেই সব শেষ না, আবারও মাঠে নামতে হয়। জয়কে ধরে রাখতে হয়। যেদিন অবসরের সময় হবে, সেদিন পর্যন্ত বিজয়ী হয়ে মাঠে থেকে ফিরে আসাই অমরত্ব। ব্যাপারটা আসলে কোনো পর্বত বছরের পর বছর ধরে জয় করার মতন। আপনি শীর্ষ কোথায় জানেন, পথও চেনেন। কিন্তু কী হবে, সেটা জানেন না। বিজয়ের স্বাদ কেউ একবার পেলে তার নেশা মাথায় জেঁকে বসে। একেকটা সার্কিটে জয় একেকটা স্বাদ। প্রতিটি জয়ের সঙ্গে মিশে থাকে শ্রম আর ঘাম।
মানুষের জীবনে ভুল থাকেই। ভুলের ঘটনা ভুলে যাওয়া বোকামি, আর ভুল নিয়ে পড়ে থাকা আরও বড় বোকামি। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে পা বাড়ানোই সত্যিকারের মানুষের কাজ। আপনি যতই বিখ্যাত হোন না কেন, কোথা থেকে আপনি এসেছেন, কোথায় আপনার শিকড়, তা মনে রাখতে হবে।
নিজের সমালোচনাকে সব সময় গ্রহণ করা শিখুন। সমালোচকেরা আপনার ভুল ধরবেই। আপনি সেই ভুল থেকে নিজেকে শুধরাবেন। সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়া কষ্টকর। তার চেয়ে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করাই সহজ কাজ। অন্যরা আপনাকে দেখে বাঁকা হাসি হাসবেই। আপনি হতাশ হবেন না। মনে রাখুন, রেসিং হোক আর জীবন হোক, সবখানে বিজয়ী সব সময় একজনই হয়।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট। ২০০৬ সালের ৯ জানুয়ারি জার্মান সাপ্তাহিক স্পিগলকে দেওয়া সাক্ষাৎকার অবলম্বনে
সত্যিকার অর্থে আমি কখনই মাইকেল শুমাখার হতে চাইনি। আমি নিজের আনন্দের জন্য সব করতাম। শখের বশেই গাড়ি চালানোর দুনিয়ায় আমি আসি। ভাঙা আর নড়বড়ে গাড়ির যন্ত্রপাতি দিয়ে আমার দুনিয়া আমি নিজ হাতে সাজানোর চেষ্টা করেছি মাত্র। আমার ওজন কম ছিল বলেই হয়তো আমি রেসিংয়ে জিতে যেতাম। এখন আমি মাইকেল শুমাখার হয়ে পরিচিতি পাওয়ায় ভীষণ বিপদে পড়ে গেছি। আমার এখন টাকাপয়সা আছে, আছে স্বাধীনতা। কিন্তু আমার বাইরে ঘুরতে যাওয়াই এখন অসহ্য লাগে। চারদিকে ক্যামেরা আর ভক্তদের দৌড়াদৌড়ির জন্য আমাকে পালিয়ে থাকতে হয়।
আমার বাবা আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিলেন না। তিনি বেশ ধার-দেনাগ্রস্ত ছিলেন। আমি বাবাকে অবাক করার চেষ্টা করতাম। রেসিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বাবাকে চমকে দেওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। তাই তো প্রথম রেস বিজয় শেষে বাবাকে অবাক করার জন্য এক স্যুটকেস টাকা দিয়েছিলাম। বাবা বিশ্বাস করেননি। সেটা ছিল আমার জন্য অনন্য এক অভিজ্ঞতা। সাফল্যের প্রথম সূত্র অনুপ্রেরণা। আমার বাবাই আমার সব প্রেরণা।
আমি কোনো রেকর্ড গড়ার জন্য কিংবা ভাঙার জন্য খেলতে নামি না। আমি গাড়ি নিয়ে উড়তে পছন্দ করি। আপনি চিন্তা করুন, হাতে হুইল আর পায়ের নিচে ব্রেক, আপনার কথামতো ছুটছে গাড়ি, এর চেয়ে থ্রিলিং আর কী হতে পারে! আমি সব সময়ই এমন অভিজ্ঞতার জন্য মুখিয়ে থাকি। জীবনটাই গতি, এখানে থেমে থাকার কিছু নেই।
আমি ভাগ্যে প্রচণ্ড বিশ্বাসী। প্যারাস্যুট দিয়ে বিমান থেকে চোখ খুলে নামতে পছন্দ করি। মোটরবাইকও চালাই। পাহাড়ে চড়ি, স্কেটিং করি। সময়কে উপভোগ করার জন্য ঘুরতে পছন্দ করি। শরীরে অ্যাড্রেনালিন হরমোন যত বেশি প্রবাহিত করা যায়, ততই জীবন উপভোগ্য। সবকিছুতে আনন্দ খোঁজাই আনন্দের কাজ। আমি কখনোই থামতে চাই না, এটা আমার জন্য সম্ভব নয়।
দিনশেষে মানুষের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের সততা। সততা আর বিনয় একজন মানুষকে অনেক ওপরে নিয়ে যায়। প্রত্যেক মানুষের হাতেই লুকিয়ে আছে তার ভবিষ্যৎ। মানুষ নিজেই তার ভবিষ্যৎ গড়ে। আমাদের শুধু বর্তমানকেই নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে। আর তাহলে ভবিষ্যৎ এসে আপনার দুয়ারে কড়া নাড়বে। কাজ করুন, অপেক্ষা করুন, দেখবেন সম্ভবনাময় এক ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।
একবার জয়ী হলেই সব শেষ না, আবারও মাঠে নামতে হয়। জয়কে ধরে রাখতে হয়। যেদিন অবসরের সময় হবে, সেদিন পর্যন্ত বিজয়ী হয়ে মাঠে থেকে ফিরে আসাই অমরত্ব। ব্যাপারটা আসলে কোনো পর্বত বছরের পর বছর ধরে জয় করার মতন। আপনি শীর্ষ কোথায় জানেন, পথও চেনেন। কিন্তু কী হবে, সেটা জানেন না। বিজয়ের স্বাদ কেউ একবার পেলে তার নেশা মাথায় জেঁকে বসে। একেকটা সার্কিটে জয় একেকটা স্বাদ। প্রতিটি জয়ের সঙ্গে মিশে থাকে শ্রম আর ঘাম।
মানুষের জীবনে ভুল থাকেই। ভুলের ঘটনা ভুলে যাওয়া বোকামি, আর ভুল নিয়ে পড়ে থাকা আরও বড় বোকামি। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে পা বাড়ানোই সত্যিকারের মানুষের কাজ। আপনি যতই বিখ্যাত হোন না কেন, কোথা থেকে আপনি এসেছেন, কোথায় আপনার শিকড়, তা মনে রাখতে হবে।
নিজের সমালোচনাকে সব সময় গ্রহণ করা শিখুন। সমালোচকেরা আপনার ভুল ধরবেই। আপনি সেই ভুল থেকে নিজেকে শুধরাবেন। সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়া কষ্টকর। তার চেয়ে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করাই সহজ কাজ। অন্যরা আপনাকে দেখে বাঁকা হাসি হাসবেই। আপনি হতাশ হবেন না। মনে রাখুন, রেসিং হোক আর জীবন হোক, সবখানে বিজয়ী সব সময় একজনই হয়।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট। ২০০৬ সালের ৯ জানুয়ারি জার্মান সাপ্তাহিক স্পিগলকে দেওয়া সাক্ষাৎকার অবলম্বনে
0 comments:
Post a Comment