Md. Afrooz Zaman Khan

Afrooz
Md. Afrooz Zaman Khan. Powered by Blogger.
RSS

ভালোবাসা আর শান্তিই সব


রিঙ্গো স্টার


একাত্তরে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে আয়োজিত ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর অন্যতম শিল্পী রিঙ্গো স্টার। সেই কনসার্টে রিঙ্গো তাঁর বিখ্যাত গান ‘ইট ডোন্ট কাম ইজি’ পরিবেশন করেন। তিনি দুনিয়া কাঁপানো ব্যান্ড দ্য বিটলসের ড্রামার ও শিল্পী। ব্রিটিশ সংগীত তারকা রিঙ্গো স্টারের পুরো নাম রিচার্ড স্টার্কি। তিনি ১৯৪০ সালের ৭ জুলাই যুক্তরাজ্যের লিভারপুলে জন্মগ্রহণ করেন।
আমার বয়স সত্তরের বেশি। কিন্তু আমি নিজেকে ৪০ বছর বয়সী ভাবি। এখনো তরুণ আমি। ওই যে একটা গান আছে না, ‘লাইফ বিগিনস অ্যাট ফোর্টি!’ আমার বয়স যতই বাড়ছে, আমি ততই জীবনযাপন শিখছি। পৃথিবীকে নতুন করে দেখছি।
১৩ বছর বয়স থেকে স্বপ্ন দেখি আমি বড় আসরে ড্রাম বাজাব। সেই স্বপ্নের পেছনে এখনো ছুটছি। আজীবন ছুটে যাব। আমি ভালো গায়কদের সঙ্গে ড্রাম বাজানোর স্বপ্ন দেখতাম। এখনো সেই কাজই করে যাচ্ছি। আমাদের পরিবারটা তেমন সচ্ছল ছিল না। আমি খুব কষ্টে ড্রাম বাজানো শিখেছিলাম। আমি বন্ধুদের কাছ থেকে ড্রাম ধার করে শিখেছিলাম। ধীরে ধীরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছি মাত্র।
ছোটবেলা থেকে আমি ব্লুজ ঘরনার সংগীতের ভক্ত ছিলাম। মার্কিন গায়ক লাইটেনিং হপকিন্স ছিল ছোটবেলার আদর্শ। আমার বয়স যখন ১৮ ছিল, তখন আমি ভীষণভাবে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চেয়েছিলাম। এ জন্য লিভারপুলের মার্কিন কনস্যুলেটে আমি টেক্সাস যাওয়ার আবেদন করি। হপকিন্স টেক্সাসের মানুষ ছিলেন। টেক্সাস যাওয়ার জন্য আমি উঠে পড়ে লেগেছিলাম। তখন আমি একটা কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করি। বন্ধুরা মিলে দূতাবাসে কাগজপত্র জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু আর যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। জীবন সত্যিই অদ্ভুত এক পথ। আমরা নিয়তির লিখনেই চলি এই পৃথিবীতে। কখনো ভাবিনি ব্যান্ডের কেউ হব। ধারণা ছিল, আমি মনে হয় লেখক হতাম। জন লেননও লেখক হতে চেয়েছিলেন আর জর্জ হ্যারিসনের গ্যারেজ থাকার কথা ছিল। কিন্তু সবকিছু বদলে গেছে।
গানের ভুবনে আসার আগে আমি বিদ্যুৎ বাতি নির্মাণের কারখানায় কাজ করতাম। শিক্ষানবিস প্রকৌশলী ছিলাম। আমার পরিবার এ জন্য ভীষণ গর্ববোধ করত। কাজের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যান্ড বাজানোর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। একসময় ড্রামের প্রেমে পড়ে যাই। আমি একটি ব্যান্ড দলে ড্রাম বাজানোর সুযোগ পাই। সে জন্য আমাকে চাকরি ছাড়তে হয়েছিল। আমার চাচা-চাচিরা সে জন্য আমাকে অনেক বুঝিয়েছিলেন। শখের ড্রাম বাজানোর জন্য এমন ঝুঁকি নেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু আমি আমার স্বপ্নের কথা জানতাম। কারও কথা শুনিনি। আমি ড্রামার হতে চেয়েছিলাম, ড্রামার হবই। তাই ঝুঁকি নিয়ে সেদিন চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম। এটা আমার জন্য সাহসের একটা কাজ ছিল। মাঝেমধ্যে পাগলামি করে সিদ্ধান্ত নিলে সেটা কাজে লেগে যায়। এরপর নিয়মিত ব্যান্ডে ড্রাম বাজানো শুরু করি। একদিন সকালে বিটলসের ম্যানেজার এসে আমার দরজায় নক করেন। তার পরের দিন থেকে আমার নতুন ইতিহাস শুরু হয়।
দ্য বিটলস ব্যান্ডে থাকাকালীন সময়টুকু ছিল আমার জন্য অবিশ্বাস্য এক সময়। আমরা ছিলাম ভাইয়ের মতো। সময়টা জয় করেছিলাম যেন তখন আমরা। সেই সময়টায় আমাদের সামনে কেউ ছিল না। আমরা বিটলস এক হয়ে বিশ্ব জয় করেছিলাম। সাফল্যের শীর্ষে আমরা অনেক দিন ছিলাম। আমাদের মধ্যে অহংকার ছিল না। ভক্তরা আমাদের অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখবেন। আমি একদিনে রিঙ্গো স্টার হইনি। আমাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ড্রাম বাজানো শিখতে হয়েছে। অনেক সময় নিয়ে ধার করা ড্রামে নিজের হাত পাকিয়েছি। আগামীকাল কী হবে, তা জানতাম না, কিন্তু আমার স্বপ্ন পূরণ হবে, তা বিশ্বাস করতাম। সেই বিশ্বাস এখনো আমার মধ্যে আছে। সময় আর আমার পরিশ্রমই আমাকে রিঙ্গো স্টার বানিয়েছে।
আমরা সেই ষাটের দশকে বিটলস ব্যান্ড দিয়ে ভিন্নধারার এক সংগীত প্রচলনের চেষ্টা করেছিলাম। এখনো মানুষ আমাদের মনে রেখেছে। এটা নিশ্চয়ই গর্বের বিষয়। স্বপ্ন দেখতে হয় ভবিষ্যৎ না ভেবে। আমরা যখন গান গাওয়া শুরু করি, তখন জানতাম না আমাদের সামনে কী আছে। মানুষ আমাদের বয়সে বড় হতে দেয় না। এখনো অনেক মানুষ সেই তারুণ্যের বিটলসকে তরুণ মনে করে। আমি সেই ষাটের দশকের রক এন রোল ব্যান্ড মিউজিক প্রজন্মের সর্বশেষ মানুষ। আমাকে বয়স দিয়ে গণনা করা ঠিক হবে না।
আমি সব সময় শান্তির পক্ষের লোক। শান্তি আর ভালোবাসা দিয়ে পৃথিবী জয় করা অসম্ভব কোনো কাজ নয়। আপনি একাকী শান্তি আর ভালোবাসা চাইতে পারেন না কিংবা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। নিজেকে এর জন্য কাজ করতে হবে। কাজ করলেই তো শান্তি আসবে। আমি সব সময়ই শান্তি আর ভালোবাসার জন্য কাজ করি। আমার ছোট একটা স্বপ্ন আছে। আমি সেই স্বপ্ন বাস্তবে দেখে যেতে পারব কি না জানি না। পুরো পৃথিবী এক দিনের জন্য না হলেও এক মিনিটের জন্য হলেও আমরা শান্তি আর ভালোবাসার এক অনন্য পথে চলব।

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

0 comments:

Post a Comment