Md. Afrooz Zaman Khan

Afrooz
Md. Afrooz Zaman Khan. Powered by Blogger.
RSS

জীবনের সেরা ১০ সুখের মুহূর্ত






সাধারণ ঘটনাগুলোর মধ্যেই থাকতে পারে অনাবিল সুখের মুহূর্ত। এ লেখায় থাকছে তেমন ১০টি সুখের মুহূর্ত। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে হাফিংটন পোস্ট।

সম্প্রতি এক গবেষণায় মানুষের সুখের মুহূর্তগুলোর সন্ধান করা হয়। এতে ৭০ ও তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গবেষণায় জানা যায়, পুরুষরা ৪০ বছর বয়সে এবং নারীরা ৩৮ বছর বয়সে তাদের সবচেয়ে সুখের মুহূর্ত পার করে।
মানুষের সেরা ১০ সুখের মুহূর্তগুলো হলো-

১০. ভালোবাসার মানুষকে প্রথমবার চুমু খাওয়া।

৯. স্বপ্নের মানুষের সঙ্গে দেখা করা।

৮. সন্তানের প্রথম কথা শোনা।

৭. সন্তানের প্রথম পদক্ষেপ দেখা।

৬. নতুন বাড়িতে যাওয়া।

৫. অবসরের দিন।

৪. দ্বিতীয় বা পরবর্তী সন্তানের জন্ম হওয়ার দিন।

৩. পিতামহ/মাতামহ হওয়ার দিন।

২. বিয়ের দিন।

১. প্রথম সন্তানের জন্ম হওয়ার দিন।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে জীবনে সুখী হওয়ার বিষয়ে পরামর্শও নেওয়া হয়। এতে তাদের কাছ থেকে জীবনের যে পাঁচটি বড় ভুলের কথা জানা যায় তা হলো-

 ১. ভুল ক্যারিয়ার বেছে নেওয়া।

২. বেশি পড়াশোনা না করা।

৩. পর্যাপ্ত ভ্রমণ না করা।

৪. ডিভোর্স।

৫. তাড়াতাড়ি বিয়ে করা। 







  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

সফলতম ব্যক্তির কথা




বিনিয়োগে বিশ্বের সফলতম ব্যক্তির কথা ধরলে ওয়ারেন বাফেটের কথা বলতে হবে। তিনি শুধু ২০১৩ সালেই ১২.৭ বিলিয়ন ডলার কামিয়েছেন। কিন্তু কিভাবে তিনি এ টাকা আয় করলেন? এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে বিজনেস ইনসাইডার। এ লেখায় থাকছে তার বিষয়ে কিছু তথ্য।


১. ওয়ারেন বাফেট তার ৫০তম জন্মদিনের পর কামিয়েছেন ৯৯ ভাগ অর্থ। তিনি ৬৩.৩ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছেন, যার মধ্যে ৬২.৭ বিলিয়নই তিনি কামিয়েছেন ৫০তম জন্মদিনের পর।


২. শেয়ারবাজারে বাফেটের বিনিয়োগকৃত অর্থ থেকে লাভ কামানোর রেকর্ড সবচেয়ে লম্বা।
৩. বাফেটের মোট সম্পদের মূল্য ৬৩.৩ বিলিয়ন ডলার, যা ঘানা ও কম্বোডিয়ার মোট জিডিপির চেয়েও বেশি। এতে তিনি বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তির মর্যাদা পেয়েছেন।


৪. ২০১৩ সালে বাফেট প্রতিদিন ৩৭ মিলিয়ন ডলার করে উপার্জন করেছেন। জেনিফার লরেন্স এক বছরে যা উপার্জন করেছেন তার চেয়েও এ অর্থ বেশি।


৫. বাফেটের এক ঘণ্টার উপার্জন দিয়ে নিউ ইয়র্কের ছয়জন কলেজ শিক্ষার্থীর টিউশন ফি পরিশোধ করে দেওয়া সম্ভব।

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

প্রতিভা দিয়েই সব হয় না : ম্যারি ব্যাররা



বিখ্যাত মোটরগাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জেনারেল মোটরসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যারি ব্যাররা। ম্যারির জন্ম ১৯৬১ সালের ২৪ ডিসেম্বর। ২০১৪ সালে টাইম ম্যাগাজিন তাঁকে বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকাভুক্ত করে। ২০১৩ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন তাঁকে বিশ্বের ৩৫তম শক্তিশালী নারী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ম্যারি ব্যাররা ২০১৪ সালের ৩ মে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এই বক্তব্য দেন।
ম্যারি ব্যাররাউপস্থিত সব অভিভাবক, অতিথি আর সম্মানিত শিক্ষকদের ধন্যবাদ। আজকের অনুষ্ঠানের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ যারা, সেই ২০১৪ সালের স্নাতক শিক্ষার্থীদের আমার শুভেচ্ছা। এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আমি থাকতে পেরে ভীষণ আনন্দিত।
আজ কেন জানি বারবার আমি আমার শিক্ষাজীবনে ফিরে যাচ্ছি। সমাবর্তনের সেই উত্তেজনা, আনন্দের কথা আমাকে এখন শিহরিত করছে। সেই দিন আমি যে প্রত্যয় আর স্বপ্ন দেখেছিলাম তা বারবার মনে পড়ছে। সেই সময়ের পৃথিবী এখন অনেক বদলে গেছে। এখন তো তোমরা একুশ শতকের স্নাতক। সমাজে তোমাদের বয়সের কিশোর আর তরুণদের সংখ্যাই বেশি। 
তোমাদের নিজেদের মধ্যে কিন্তু ভাবনার মিল কমই দেখা মেলে। যেমন ধরো, তোমাদের মধ্যে সবাই কিন্তু সপ্তাহের সাত দিন ২৪ ঘণ্টা মুঠোফোনের মধ্যে ডুবে থাকো না। নানা পরিসংখ্যান বলে, কিশোর আর তরুণদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনের মাত্র একজন এই যন্ত্র-বন্ধুটিকে ছাড়া রাতে ঘুমোতে যাও। তোমরা সবাই ধনী নও, কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ধনী প্রজন্মের সদস্য তোমরা। চিন্তা করে দেখো, আগের সময়ের পৃথিবীর মানুষের চেয়ে তোমরা কত বেশি সুযোগ-সুবিধা লাভ করো। তোমাদের ইন্টারনেট আছে, আছে আইফোন। 
তোমাদের আরেকটি কথা না বললেই নয়, তোমাদের এই প্রজন্মের বেশির ভাগ কিশোর আর তরুণই কিন্তু অমনোযোগী। হ্যাঁ, আমি তোমাদের অমনোযোগী বলছি। তোমরা কারও কথাই যেন শুনতে চাও না। আমি কিন্তু সবাইকে অমনোযোগী বলছি না, কেউ কেউ। এই যে শেষ তিন মিনিটে আমার কথা শুনতে শুনতে তোমাদের মধ্যে গুটি কয়েক নিজেকে খুদেবার্তা আর টুইট করা থেকে বিরত রাখতে পেরেছ। অন্যরা টুইট, স্ট্যাটাস আর টেক্সট নিয়ে ব্যস্ত।
আগের পৃথিবীর সবকিছু এখন বদলে গেলে, কিছু কিছু জিনিস কিন্তু এখনো আগের মতোই আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তোমরা যে মানসিক দক্ষতা, গাণিতিক যুিক্ত, সমস্যা সমাধানের কৌশল, যোগাযোগ দক্ষতা, টিমওয়ার্ক নিয়ে জ্ঞান অর্জন করেছ তা কিন্তু অসাধারণ। ৩০ বছর আগে এগুলো ছিল সফলতার সূত্র। এখনো মানুষকে সফল হতে হলে এসব দক্ষতা প্রয়োজন। কিন্তু আমার চেয়েও এই সব তত্ত্বকথা তোমরা বেশি ভালো করে জানো, বোঝো। কারণ, আগে এসব গুণ সফলতার পথ নির্মাণ করত। আর এখন মানুষ এই সব দক্ষতা নিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করে।
ইন্টারনেটের কারণে তোমরা আগে থেকেই সব জানতে পারো। কিন্তু তার পরেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাজের দক্ষতা আর গুণ মানুষকে অভিজ্ঞ করে তোলে। নিজেকে অন্যের চেয়ে দক্ষ করে তুলতে একাগ্রতার বিকল্প নেই। আমার সমাবর্তনের পর থেকে জীবনে অনেক কিছু শিখেছি। যা শিখেছি তার থেকে আধা ডজন নীতিকথা তোমাদের জানাতে চাই।
এক. যে কাজ একবার শুরু করেছ, তা নিয়ে দ্বিধান্বিত হবে না। সফল হওয়ার ইচ্ছা আর পরিশ্রম দিয়ে সেই কাজ করে যাও। আমার অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, স্কুল-কর্মস্থলে, পেশাজীবনে, খেলাধুলায় সব জায়গায় অনেক প্রতিভাবান লোকের দেখা মেলে। কিন্তু মনে রেখো, প্রতিভা দিয়েই সব হয় না। সফলতার জন্য তোমাদের প্রয়োজন প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম। সাফল্যের দরজায় জোরে ধাক্কা দাও। পরিশ্রম করো৷
যদি তুমি কোনো প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী হও, তাহলে তোমার একাগ্রতা আর পাগলামি তোমার দলের অন্যদের উৎসাহ জোগাবে। বড় কিছু অর্জনের জন্য যতটা সম্ভব পরিশ্রম করে যাও।
দুই. সব সময়ের জন্য সৎ থাকতে হবে। জীবনের সর্বক্ষেত্রে নিজেকে সৎভাবে প্রমাণিত করো৷ নিজের কাছে সততা সবচেয়ে বড় আত্মবিশ্বাস। কথা ভঙ্গ করবে না। তোমার গ্রাহকদের জন্য, পিতামাতার জন্য, কর্মীদের জন্য, পরিবারের জন্য, বন্ধুদের জন্য এবং নিজের জন্য, যেটা ঠিক সেটাই করবে সততার সঙ্গে।
তিন. বন্ধু তৈরি করো৷ মনে রেখো, সফলতা কখনো একা আসে না। একসময় তোমরা নিশ্চয়ই বড় বড় সাফল্য লাভ করবে। কিন্তু কখনোই একা একা তুমি কিছুই করতে পারবে না। বন্ধু তৈরি করো৷ সাফল্য সব সময় দলগত পরিশ্রমের সমষ্টিগত ফলাফল। তোমরা আগামীর দলনেতা। নেতৃত্বের জন্য তোমাদের অন্য মানুষের কাছ থেকে সম্মান ও বিশ্বাসযোগ্য অর্জন করতে হবে। নিজের কথা বলার চেয়ে অন্যদের কথা শোনার অনন্য যোগ্যতা অর্জন করতে হবে তোমার। সত্যি বলতে মানুষ তখনই তোমার প্রতি সহানুভূতি দেখাবে, যখন তুমি তাদের সহানুভূতি দেখাবে। জীবনের নানা প্রয়োজনীয় কাজের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে তোমাকে অনেক মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে, বাড়াতে হবে বন্ধুর সংখ্যা।
চার. যেকোনো বাধা-বিঘ্নকে সামনে থেকে মোকাবিলা করতে হবে। বাড়ি কিংবা অফিসে যেখানেই তুমি কোনো সমস্যা দেখবে, তার সম্মুখীন হও। তোমার যা কিছু আছে তা নিয়েই সমস্যার সমাধান করো৷ আমার অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, যেকোনো সমস্যা সমাধানে পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাও। মনে রেখো, সমস্যার সমাধান সামনে থেকেই করতে হয়। সমস্যাকে যতই অবজ্ঞা করবে, ততই তা বড় হয়ে উঠবে।
পাঁচ. অন্যের জন্য কিছু করো৷ আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান আর উদ্ভাবনী প্রযুক্তির এই সময়ে তোমাদের সামনে আছে অনেক সুযোগ। অনেক কিছু করে ফেলতে পারবে তোমরা। কিন্তু সবকিছুর আগে একটা কাজ করতে কখনোই ভুলবে না। নিজের মেধা দিয়ে অন্যের জন্য ভালো কিছু করবে সব সময়। আমি জানি, আজকের এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বেশ কজন স্পাইডারম্যান-ভক্ত আছে। স্পাইডারম্যান সিনেমার সেই উক্তি নিশ্চয়ই তোমাদের মনে আছে? ‘অধিক ক্ষমতা অন্যের প্রতি তোমার বড় দায়িত্ব তৈরি করে।’ 
সর্বশেষ, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো৷ আমি এই বিশেষ দিনে তোমার বন্ধু, পরিবার এবং নিজের ওপর বিশ্বাস রাখার কথা বলছি। নিজের বন্ধু আর পরিবারকে সব সময় কাছে রাখবে। আমি তোমাদের পরিবার আর বন্ধু কতখানি গুরুত্বপূর্ণ সেটা বলে বোঝাতে পারব না। তারাই তোমার পথ চলাকে পরিপূর্ণ করে তুলতে পারে। ভালো সময়গুলো তাদের সঙ্গে উদ্যাপন করো৷ আর কঠিন সময়গুলোতে পরিবার আর বন্ধুদের পরামর্শ নাও। নিজের বিশ্বাসের ওপর আস্থা রাখো।
আমি আজকের বক্তৃতার প্রথম দিকে তোমাদের ধনী, সৌভাগ্যবান প্রজন্ম বলে হালকা হেয় করলেও একটা কথা কিন্তু এখনো বলিনি। তোমরা পৃথিবীর ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে উদ্ভাবনী এবং প্রত্যাশায় পরিপূর্ণ একটি প্রজন্ম। তোমাদের হাতের মুঠোয় এখন সমাজ বদলের নানা অনুষঙ্গ। তোমাদের সামান্য চিন্তায় এখন বদলে যায় সমাজ। সামনে যে সুযোগ আসবে, সেটাই খপ করে ধরে ফেলবে। ক্যারিয়ারের শুরুতে যা করার সুযোগ পাবে তা-ই করবে। সব নতুন অভিজ্ঞতা তোমার দক্ষতাকে বিকশিত করবে, দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলে দেবে। যেকোনো কাজকে ভালোবাসো। কাজ উপভোগ করো। অভিজ্ঞতাই তোমার সাফল্যের গতি নির্ধারণ করে দেবে। জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে মনোযোগী হও। তোমাদের সবাইকে আমার অভিনন্দন। আমি তোমাদের প্রত্যেককে নিয়ে আজ আনন্দিত ও গর্বিত। সবাইকে ধন্যবাদ।

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

ভালোবাসা আর শান্তিই সব


রিঙ্গো স্টার


একাত্তরে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে আয়োজিত ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর অন্যতম শিল্পী রিঙ্গো স্টার। সেই কনসার্টে রিঙ্গো তাঁর বিখ্যাত গান ‘ইট ডোন্ট কাম ইজি’ পরিবেশন করেন। তিনি দুনিয়া কাঁপানো ব্যান্ড দ্য বিটলসের ড্রামার ও শিল্পী। ব্রিটিশ সংগীত তারকা রিঙ্গো স্টারের পুরো নাম রিচার্ড স্টার্কি। তিনি ১৯৪০ সালের ৭ জুলাই যুক্তরাজ্যের লিভারপুলে জন্মগ্রহণ করেন।
আমার বয়স সত্তরের বেশি। কিন্তু আমি নিজেকে ৪০ বছর বয়সী ভাবি। এখনো তরুণ আমি। ওই যে একটা গান আছে না, ‘লাইফ বিগিনস অ্যাট ফোর্টি!’ আমার বয়স যতই বাড়ছে, আমি ততই জীবনযাপন শিখছি। পৃথিবীকে নতুন করে দেখছি।
১৩ বছর বয়স থেকে স্বপ্ন দেখি আমি বড় আসরে ড্রাম বাজাব। সেই স্বপ্নের পেছনে এখনো ছুটছি। আজীবন ছুটে যাব। আমি ভালো গায়কদের সঙ্গে ড্রাম বাজানোর স্বপ্ন দেখতাম। এখনো সেই কাজই করে যাচ্ছি। আমাদের পরিবারটা তেমন সচ্ছল ছিল না। আমি খুব কষ্টে ড্রাম বাজানো শিখেছিলাম। আমি বন্ধুদের কাছ থেকে ড্রাম ধার করে শিখেছিলাম। ধীরে ধীরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছি মাত্র।
ছোটবেলা থেকে আমি ব্লুজ ঘরনার সংগীতের ভক্ত ছিলাম। মার্কিন গায়ক লাইটেনিং হপকিন্স ছিল ছোটবেলার আদর্শ। আমার বয়স যখন ১৮ ছিল, তখন আমি ভীষণভাবে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চেয়েছিলাম। এ জন্য লিভারপুলের মার্কিন কনস্যুলেটে আমি টেক্সাস যাওয়ার আবেদন করি। হপকিন্স টেক্সাসের মানুষ ছিলেন। টেক্সাস যাওয়ার জন্য আমি উঠে পড়ে লেগেছিলাম। তখন আমি একটা কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করি। বন্ধুরা মিলে দূতাবাসে কাগজপত্র জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু আর যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। জীবন সত্যিই অদ্ভুত এক পথ। আমরা নিয়তির লিখনেই চলি এই পৃথিবীতে। কখনো ভাবিনি ব্যান্ডের কেউ হব। ধারণা ছিল, আমি মনে হয় লেখক হতাম। জন লেননও লেখক হতে চেয়েছিলেন আর জর্জ হ্যারিসনের গ্যারেজ থাকার কথা ছিল। কিন্তু সবকিছু বদলে গেছে।
গানের ভুবনে আসার আগে আমি বিদ্যুৎ বাতি নির্মাণের কারখানায় কাজ করতাম। শিক্ষানবিস প্রকৌশলী ছিলাম। আমার পরিবার এ জন্য ভীষণ গর্ববোধ করত। কাজের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যান্ড বাজানোর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। একসময় ড্রামের প্রেমে পড়ে যাই। আমি একটি ব্যান্ড দলে ড্রাম বাজানোর সুযোগ পাই। সে জন্য আমাকে চাকরি ছাড়তে হয়েছিল। আমার চাচা-চাচিরা সে জন্য আমাকে অনেক বুঝিয়েছিলেন। শখের ড্রাম বাজানোর জন্য এমন ঝুঁকি নেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু আমি আমার স্বপ্নের কথা জানতাম। কারও কথা শুনিনি। আমি ড্রামার হতে চেয়েছিলাম, ড্রামার হবই। তাই ঝুঁকি নিয়ে সেদিন চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম। এটা আমার জন্য সাহসের একটা কাজ ছিল। মাঝেমধ্যে পাগলামি করে সিদ্ধান্ত নিলে সেটা কাজে লেগে যায়। এরপর নিয়মিত ব্যান্ডে ড্রাম বাজানো শুরু করি। একদিন সকালে বিটলসের ম্যানেজার এসে আমার দরজায় নক করেন। তার পরের দিন থেকে আমার নতুন ইতিহাস শুরু হয়।
দ্য বিটলস ব্যান্ডে থাকাকালীন সময়টুকু ছিল আমার জন্য অবিশ্বাস্য এক সময়। আমরা ছিলাম ভাইয়ের মতো। সময়টা জয় করেছিলাম যেন তখন আমরা। সেই সময়টায় আমাদের সামনে কেউ ছিল না। আমরা বিটলস এক হয়ে বিশ্ব জয় করেছিলাম। সাফল্যের শীর্ষে আমরা অনেক দিন ছিলাম। আমাদের মধ্যে অহংকার ছিল না। ভক্তরা আমাদের অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখবেন। আমি একদিনে রিঙ্গো স্টার হইনি। আমাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ড্রাম বাজানো শিখতে হয়েছে। অনেক সময় নিয়ে ধার করা ড্রামে নিজের হাত পাকিয়েছি। আগামীকাল কী হবে, তা জানতাম না, কিন্তু আমার স্বপ্ন পূরণ হবে, তা বিশ্বাস করতাম। সেই বিশ্বাস এখনো আমার মধ্যে আছে। সময় আর আমার পরিশ্রমই আমাকে রিঙ্গো স্টার বানিয়েছে।
আমরা সেই ষাটের দশকে বিটলস ব্যান্ড দিয়ে ভিন্নধারার এক সংগীত প্রচলনের চেষ্টা করেছিলাম। এখনো মানুষ আমাদের মনে রেখেছে। এটা নিশ্চয়ই গর্বের বিষয়। স্বপ্ন দেখতে হয় ভবিষ্যৎ না ভেবে। আমরা যখন গান গাওয়া শুরু করি, তখন জানতাম না আমাদের সামনে কী আছে। মানুষ আমাদের বয়সে বড় হতে দেয় না। এখনো অনেক মানুষ সেই তারুণ্যের বিটলসকে তরুণ মনে করে। আমি সেই ষাটের দশকের রক এন রোল ব্যান্ড মিউজিক প্রজন্মের সর্বশেষ মানুষ। আমাকে বয়স দিয়ে গণনা করা ঠিক হবে না।
আমি সব সময় শান্তির পক্ষের লোক। শান্তি আর ভালোবাসা দিয়ে পৃথিবী জয় করা অসম্ভব কোনো কাজ নয়। আপনি একাকী শান্তি আর ভালোবাসা চাইতে পারেন না কিংবা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। নিজেকে এর জন্য কাজ করতে হবে। কাজ করলেই তো শান্তি আসবে। আমি সব সময়ই শান্তি আর ভালোবাসার জন্য কাজ করি। আমার ছোট একটা স্বপ্ন আছে। আমি সেই স্বপ্ন বাস্তবে দেখে যেতে পারব কি না জানি না। পুরো পৃথিবী এক দিনের জন্য না হলেও এক মিনিটের জন্য হলেও আমরা শান্তি আর ভালোবাসার এক অনন্য পথে চলব।

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

পড়াশোনাকে বিদায়

দীপিকা পাড়ুকোনদীপিকা পাড়ুকোন


পড়াশোনাকে বিদায়
একুশ বছর বয়সেই ওম শান্তি ওম সিনেমা দিয়ে বলিউড কাঁপিয়ে দেন দীপিকা পাড়ুকোন। ডেনমার্কে জন্ম এই তারকার। বাবা ছিলেন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। বেঙ্গালুরুর সোফিয়া হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করেন দীপিকা। উচ্চমাধ্যমিক শেষে ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন তিনি। পড়ার বিষয় হিসেবে বেছে নেন সমাজবিজ্ঞান। ক্লাস টেন থেকে শখে মডেলিং জগতে পা রাখেন দীপিকা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরে পুরোদমে মডেলিংয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। আর তাতেই পড়াশোনা লাটে ওঠে তাঁর। বছর খানেকের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়কে বিদায় জানিয়ে বলিউডে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এই তারকা।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে সিনেমায়





বেন অ্যাফ্লেকবেন অ্যাফ্লেকবিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে সিনেমায়
দুবার অস্কার ও তিনবার গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার বিজয়ী মার্কিন অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক বেন অ্যাফ্লেক। বেনের ঝুলিতে গুড উইল হান্টিং, শেকসপিয়ার ইন লাভ, পার্ল হারবার-এর মতো সিনেমা জমা আছে। বেনের বাবাও ছিলেন অভিনেতা আর মা ছিলেন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। হাইস্কুলে বেনের প্রিয় বিষয় ছিল ড্রামা। স্কুলে বেনের বন্ধু ছিল এখনকার আরেক হলিউড তারকা ম্যাট ডেমন। স্কুলের ছুটিতে গ্রীষ্মকালে দুজনে মিলে সিনেমা হলেও কাজ করেন। হাইস্কুলে অনুপস্থিতির জন্য নিয়মিত শোকজ খেতেন বেন। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। কিন্তু দুমাসের মধ্যে ভারমন্ট ছেড়ে লস অ্যাঞ্জেলেসে এসে অক্সিডেন্টাল কলেজে মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন বিষয়ে ভর্তি হন। কিন্তু দেড় বছরের মাথায় গুড উইল হান্টিং সিনেমার চিত্রনাট্য লেখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে বিদায় জানান বেন।
সূত্র: রোলিং স্টোন ম্যাগাজিন

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

সফল ড্রপআউট.... 08.01.2015




ঐশ্বরিয়া রাই, জিম ক্যারিঐশ্বরিয়া রাই, জিম ক্যারিস্থাপত্য ছেড়ে মডেলিংয়ে
১৯৯৪ সালের মিস ওয়ার্ল্ড ঐশ্বরিয়া রাই। বলিউড সিনেমায় অভিনয়দক্ষতার জন্য এরই মধ্যে জয় করে নিয়েছেন ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ও পদ্মশ্রী সম্মাননা। ভারতের কর্ণাটকের এক মেরিন বায়োলজিস্ট বাবার ঘরে জন্ম তাঁর। পড়াশোনার শুরু মুম্বাইয়ের আর্যবিদ্যা মন্দির উচ্চবিদ্যালয়ে। এরপর ডিজি রুপারেল কলেজ থেকে শতকরা ৯০ শতাংশ নম্বর নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি। স্কুল-কলেজে জীববিজ্ঞানই ছিল তাঁর প্রিয় বিষয়, আর ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল মেডিসিন নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা থেকে রাহেজা কলেজ অব আর্টসে তিনি স্থাপত্য বিষয়ে পড়ার জন্য ভর্তি হন। এরই মধ্যে ভোগ ম্যাগাজিনের এক সুপার মডেল প্রতিযোগিতায় প্রথম হন তিনি। তাতেই উচ্চশিক্ষাকে বিদায় জানাতে হয়। মডেলিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় পড়াশোনাকে বিদায় জানান তিনি। পরে মডেল থেকে অভিনয়ে। শেষ পর্যন্ত ভারতের অন্যতম শীর্ষ তারকা।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
স্কুল ছেড়ে কমেডিয়ানব্রুস অলমাইটি-খ্যাত কানাডীয় মার্কিন অভিনেতা জিম ক্যারি। বাবা একাধারে অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও মিউজিশিয়ান হওয়ার পরও জিমদের পরিবারে আর্থিক অনটন ছিল। তাই তো ১৫ বছর বয়সেই স্কুল ছাড়তে হয় তাঁকে। অন্টারিওর এক ক্যাথলিক স্কুলে দুই বছর আর অন্য এক ইনস্টিটিউটে এক বছর পড়াই ছিল তাঁর পড়াশোনার দৌড়। মায়ের অসুস্থতা আর বাবার আর্থিক দোটানায় স্টিল মিলের শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। স্টিল মিলে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষণ বিভাগে কাজ ছিল তাঁর। আরও একটু বেশি টাকা আয়ের জন্য বাবা তাঁকে টরন্টোর এক কমেডি ক্লাবের মঞ্চে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন। ধীরে ধীরে কমেডির মঞ্চ ছেড়ে রুপালি পর্দার সিনেমাজগতে আগমন ঘটে এই কমেডিয়ানের।
সূত্র: সিবিএস নিউজ

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

সুযোগ তৈরি করে নাও: ইন্দ্রা কে নুই

ইন্দ্রা কে নুই পেপসিকোর চেয়ারপার্সন ও সিইও। সম্প্রতি ঢাকায় এলে ১৯ ডিসেম্বর একটি অনুষ্ঠানে তাঁকে ক্যামেরাবন্দী করেন প্রথম আলোর আলোকিচত্রী জিয়া ইসলাম


পেপসিকোর চেয়ারপার্সন ও সিইও ইন্দ্রা কে নুই। তাঁর জন্ম ১৯৫৫ সালে ভারতের চেন্নাইয়ে। তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন মাদ্রাজ ক্রিশ্চিয়ান কলেজ, ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট কলকাতা ও যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে। ২০১১ সালের ১৬ মে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েক ফরেস্ট ইউনিভার্সিটিতে তিনি এই বক্তৃতা দেন।
পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার শপথ নিয়ে আজ তোমাদের পথচলা শুরু হবে।
তোমাদের এমন সব সুযোগ ও সম্ভাবনা আছে, যা আজ অবধি কোনো প্রজন্মেরই ছিল না। সামাজিক নেটওয়ার্কিং, তাৎক্ষণিক যোগাযোগ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির ফলে অর্থনৈতিক আর সামাজিক সমস্যার সমাধান এখন সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই উঠে আসছে, যা এর আগে সম্ভব ছিল না। তোমাদের সামনে সমস্যাগুলো পুরোনো হলেও পুরোনো ধাঁচের সমাধানের মধ্যে তোমাদের সীমাবদ্ধ থাকার কোনো কারণ নেই। এ প্রজন্ম পুরোনোকে ভেঙে নতুন পথ তৈরি করবে। 
এই যাত্রার শুরুতে আজ আমি তোমাদের কিছু পরামর্শ দিতে চাই, যা তোমাদের পথ চলতে সাহায্য করবে। প্রথমেই আমি বলব, সব সময় শিখতে থাকো, এক মুহূর্তের জন্যও থেমো না। তোমাদের ভেতরে যে কৌতূহলী সত্তাটি লুকিয়ে আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে গিয়ে তাকে হারিয়ে ফেলো না। শৈশবের সবচেয়ে অসাধারণ দিকগুলোর একটি হচ্ছে পৃথিবীকে জানার, বোঝার তীব্র ইচ্ছা, যা বেশির ভাগ মানুষই বড় হতে হতে হারিয়ে ফেলে। ‘কেন?’ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার উৎসাহ ফুরিয়ে যায়। হ্যাঁ, আজকে তোমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পূর্ণ হচ্ছে, কিন্তু সত্যিকারের শিক্ষার কোনো শেষ নেই, পূর্ণতা নেই। বাইরের পৃথিবী থেকে তোমরা যা শিখবে, তা এক অনন্ত বিস্ময়ের উৎস হয়ে তোমাদের জীবন ভরে তুলতে পারে, যদি তোমরা তাকে গ্রহণ কর।
১৯৮৬ সালে আমি বস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ থেকে মটোরোলার অটোমোটিভ ইলেকট্রনিকস ডিভিশনের হেড অব স্ট্র্যাটেজি পদে যোগদান করি। তখন কোম্পানির উঁচু পর্যায়ের হাতে গোনা নারীদের মধ্যে আমি ছিলাম একজন। প্রথম মিটিংয়ে এসে আমি হতভম্ব; উপস্থিত সবার মুখে ইলেকট্রনিকস আর গাড়ি ছাড়া কোনো কথা নেই—আর এ দুটির কোনোটি নিয়েই আমার ধারণা প্রায় ছিল না বললেই চলে। আমি কিছু গৎবাঁধা প্রশ্ন করে, কতগুলো মডেল বানিয়েই হয়তো পার পেয়ে যেতে পারতাম, কিন্তু আমি আরও বেশি কিছু করতে চেয়েছিলাম। আমি কোম্পানিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চাইছিলাম, এর ভবিষ্যৎ সুদৃঢ় করতে চাইছিলাম।
নতুন জিনিস শেখার ইচ্ছেটাকে ধরে রাখো, আর তোমার কাজের বিষয়ের গভীরে ডুব দেওয়ার আগে চারপাশটাও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিয়ো। ব্যবসার জগৎ নিয়ে আমার সবচেয়ে সেরা উপলব্ধিগুলোর মধ্যে বেশ কিছু এসেছে অন্যান্য বিষয়ে পড়তে পড়তে, কিংবা সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কোনো কিছুকে বিচার করতে গিয়ে। ব্যবসার ক্ষেত্রে আমাকে যেসব জ্ঞান এগিয়ে দিয়েছে, তার মধ্যে অনেক কিছু এসেছে ইতিহাস, মনোবিজ্ঞান, এমনকি রসায়নের মতো বিষয় থেকে। যেসব জিনিস আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় সম্পর্কহীন, বিচ্ছিন্ন, তাদের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করতে পারার ক্ষমতা আমাকে অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছে।
আজকের পৃথিবীতে পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা থাকা খুব প্রয়োজন। তোমরা আজ যা জানো, কালই তা সেকেলে হয়ে পড়বে। কেবল একটি জিনিস শিখে টিকে থাকা এখন মুশকিল। আর এর অর্থ একটাই, প্রতিনিয়ত শিখতে হবে।
তোমাদের জন্য আমার দ্বিতীয় পরামর্শ হলো সবকিছুকে সুযোগ হিসেবে দেখতে হবে—তা ব্যর্থতা, কোনো একঘেয়ে কাজ, ক্যারিয়ারে হঠাৎ কোনো পরিবর্তন, যা-ই হোক না কেন। প্রতিটি অভিজ্ঞতাই নতুন কিছু শেখার এবং নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলার এক দারুণ সুযোগ। আর শুধু সুযোগগুলোকে চিনতে শিখলেই হবে না, নিজের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে সেগুলোর সদ্ব্যবহার করতে হবে। অনেক আগে থেকে ক্যারিয়ারের আগাগোড়া পরিকল্পনা করে রাখা সম্ভব নয়, তা উচিতও নয়। কোনো নির্দিষ্ট চাকরিই করতে হবে, এমন বদ্ধমূল ধারণা মনে গেঁথে চোখ-কান বুজে সেই চাকরির দিকে ছুটে চললে পথের আশপাশে ছড়িয়ে থাকা হাজারো সুযোগ চোখ এড়িয়ে যায়, যা করাটা বোকামি।
৯০-এর দশকের শেষের কথা, তখন আমি পেপসিকোর করপোরেট স্ট্র্যাটেজি ও ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান। স্টিভ রেইনমান্ড, আমার সাবেক বস, একদিন সোজা আমার অফিসে এসে বললেন, ‘আমি চাই তুমি ফ্রিটো-লেতে যাও এবং আমাদের পণ্য সরবরাহের পদ্ধতি বদলে ফেলার প্রকল্পের নেতৃত্ব দাও।’ আমার সামনে দুটি পথ ছিল—কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করা অথবা যেখানে ছিলাম সেখানেই থেকে যাওয়া। আমি চ্যালেঞ্জকে বেছে নিয়েছিলাম এবং আমার আজকের অবস্থানের পেছনে সেই সাহসী সিদ্ধান্তের অবদান অপরিসীম। 
তবে শুধু চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেই হবে না, নিজের সর্বোচ্চ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে সবচেয়ে ভালো কাজ করতে হবে। হোক সেটা প্রথম চাকরি বা নিজের ব্যবসা, বা একটা ফটোকপি মেশিন চালানো—যে কাজই করো না কেন, সেখানে নিজের ১১০ ভাগ সামর্থ্য উজাড় করে দেবে। বহুদিন আগে ঠিক করে রাখা ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটতে গিয়ে আরও সম্ভাবনাময় কোনো দরজা ভুলে বন্ধ করে ফেলো না। 
আমার তৃতীয় পরামর্শ হলো, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে। কাজ করতে গিয়ে ভিন্ন মতের, ভিন্ন সংস্কৃতির, ভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে দেখা হবে, তাদের সঙ্গে মিশতে হবে। সে ক্ষেত্রে অন্যদের সঙ্গে অমিলগুলো না খুঁজে, সবার ভালো দিকগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে। তুমি যখন অন্যদের ভালো ব্যাপারগুলোকে প্রাধান্য দেবে, বিনিময়ে তারাও তোমাকে ভালো চোখে দেখবে। এটা ঠিক যে কর্মক্ষেত্রে সমালোচনা থাকবেই, সেটি অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। তোমার যদি নিজের ওপর দৃঢ়বিশ্বাস ও আস্থা থাকে, তবে সমালোচনা, সমস্যা, ব্যর্থতা—যা-ই আসুক না কেন, সেখান থেকেই তুমি নতুন কিছু শিখতে পারবে এবং পরেরবার ঠিকই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। আর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি মানুষকে এমনভাবে কাছে টানে যে সুসময় বা দুঃসময়, যা-ই আসুক না কেন, তুমি কখনো একা হবে না।
নিজের ভেতরে সুপ্ত কৌতূহলকে জাগিয়ে রেখো আর সব সময় শিখতে থেকো, কখনো থেমে যেয়ো না। নিজের সবটুকু উজাড় করে কাজ করো, সুযোগ তৈরি করে নাও। সবকিছুকে ইতিবাচকভাবে নিতে শেখো। তুমি পৃথিবীকে যা দেবে, তা-ই তুমি ফিরে পাবে। আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি, তোমরাই এ পৃথিবী বদলে দেবে।

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে কনসার্টে



নোরা জোন্স
মার্কিন সংগীতশিল্পী ও অভিনেত্রী নোরা জোন্স। তাঁর বাবা আলোচিত সংগীতজ্ঞ পণ্ডিত রবিশঙ্কর আর মা ছিলেন নৃত্যশিল্পী। তারকাদ্যুতি নিয়ে জন্মালেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা শেষ করতে পারেননি এই তারকা। হাইস্কুলে থাকতেই গান লেখা আর গাওয়ার দিকেই ঝোঁক ছিল বেশি তাঁর। ভালো স্যাক্সোফোন বাজাতে পারতেন বলে বেশ সুনামও ছিল। হাইস্কুলের পড়া শেষে নর্থ টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত নিয়ে পড়াশোনা করতে ভর্তি হন তিনি। জ্যাজ পিয়ানোকেই পড়াশোনার বিষয় হিসেবে বেছে নেন নোরা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চেয়ে ক্লাবে আর কনসার্টেই গান গাওয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। শেষ পর্যন্ত দুই বছর পরে বিশ্ববিদ্যালয়কে বিদায় জানান এই তারকা। সূত্র: এবিসি নিউজ।

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

স্কুল বদলানোর মাস্টার



কিয়ানু রিভসকিয়ানু রিভসস্কুল বদলানোর মাস্টারকানাডার আলোচিত অভিনেতা কিয়ানু রিভস, দ্য ম্যাটরিক্স-এর নিও নামেই সারা বিশ্বে বেশি আলোচিত তিনি। টরন্টো শহরে শিশুকাল কাটে তাঁর। স্কুল নিয়ে বিশাল ইতিহাস আছে কিয়ানুর জীবনে। স্কুলে ভর্তির প্রথম পাঁচ বছরে চারবার স্কুল বদলানো হয় তাঁর। এমনকি ইতোবিকোক স্কুল অব আর্টস নামের বড় এক স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয় তাঁকে। স্কুলে বেশি চিৎকার করতেন বলেই কর্তৃপক্ষ তাঁকে নাকি বহিষ্কার করতে বাধ্য হয় বলে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন তিনি। তবে স্কুলে পড়ার চেয়ে হকি খেলাতেই বেশি টান ছিল তাঁর। স্কুলের হকি দলে খেলার জন্য দ্য ওয়াল নিকনেমও কুড়িয়েছিলেন তিনি। হাইস্কুলের পড়ার শেষ দিকে অ্যাভোনডেল সেকেন্ডারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ পান তিনি। কিন্তু হাইস্কুলের ডিপ্লোমা অর্জনের আগেই স্কুলকে বিদায় জানান নিওখ্যাত কিয়ানু রিভস।

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

বড় ইনিংস খেলার চেষ্টা করি



ফিলিপ হিউজ (১৯৮৮–২০১৪)


আজ ৩০ নভেম্বর ফিলিপ হিউজের জন্মদিন। বয়স ছাব্বিশ ছোঁয়ার আগেই খেলার মাঠে মাথায় বলের আঘাতে ২৭ নভেম্বর লোকান্তরিত হন এই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার। হিউজের জন্ম ১৯৮৮ সালের ৩০ নভেম্বর। তিনি ২৬ টেস্টে তিনটি সেঞ্চুরিসহ ১৫৩৫ রান, ওডিআইতে ২৫ ম্যাচে দুটি সেঞ্চুরিসহ ৮২৬ রান আর ৩৪টি টি-টোয়েন্টিতে ১১১০ করেছেন। হিউজ ২০০৯ সালে ব্র্যাডম্যান ইয়াং ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন। অকালপ্রয়াত এই ক্রিকেটারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই লেখাটি প্রকাশিত হলো।

খেলার মাঠে মনঃসংযোগ ধরে রাখা বেশ কঠিন। যত বয়স বাড়ে ততই ক্রিজে মনঃসংযোগ ভালোভাবে করা সম্ভব। আমার মনে হয় আমি ধীরে ধীরে বড় হচ্ছি। সাবেক খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ২৮-২৯ বছর বয়সে পরিণত ক্রিকেটার হওয়া যায়। আমার পরিণত ক্রিকেটার হতে আরও সময় লাগবে। আমি চার বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছি। নিজেকে ভাগ্যবানই বলতে হয়। আমার মনে হয় এই চার বছরে আমার খেলা অনেকটাই বদলে গেছে। খেলার মাঠে হোক বা মানসিকভাবে হোক সময় বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে খেলার অনেক ভেতরে আমি প্রবেশ করে চলেছি। ধীরে ধীরে আমি নিজেকে পরিণত ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। 
অ্যাশেজের মতো বড় খেলার আসরে আমরা ভীষণ চাপে থাকি। এমন সময় নিজেদের শান্ত রাখা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে আমাদের। পুরো দল এক হয়ে থাকার জন্য সে সময়গুলোতে বেশ সংগ্রাম করতে হয়। আমার চার বছর আগের ঘটনা প্রায়ই মনে পড়ে। সেবার আমরা অ্যাশেজ হেরেছিলাম। শুধু আমিই নই, পুরো দলটি হতাশায় ডুবে গিয়েছিল। ব্যক্তিগতভাবে অনেক ভেঙে পড়েছিলাম। সেই ঘটনা আমার মনে ভাসে সব সময়। আমি বড় হয়েছি অ্যাশেজ জয়ের স্বপ্নে, সে জন্য এটা নিশ্চয়ই আমার জন্য ভীষণ কষ্টের ছিল।
দল থেকে বাদ পড়া ভীষণ কষ্টের। কিন্তু খেলা খারাপ হলে দল থেকে বাদ পড়তেই হবে। আমি একবার দল থেকে রান না করার জন্য বাদ পড়েছিলাম। মাত্র তিন ম্যাচে ব্যাটিং করে রান না পাওয়াতে আমি বাদ পড়ি। সে সময়টা আমার জন্য বেশ কঠিন ছিল। আমি কাউন্টি খেলায় রান পাচ্ছিলাম। সেখানে ব্যাটিং ঠিকমতোই করতে পারছিলাম। কিন্তু লর্ডসে আমি বাদ যাই। ক্রিকেট খেলা চাপের খেলা। সব সময় এখানে চাপ থাকবেই। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পর্যায়ে চাপের মাত্রা সব সময়ই ভোগ করতে হয়। আপনি যখন এখানে হেরে যাবেন, তখন বেশি চাপ আপনার দিকে আসবেই। আমার ক্ষুদ্র ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে আমরা কোনোই টেস্ট ম্যাচে জিততে পারিনি। এমন সময় নিজেকে ভীষণ একা মনে হবে আপনার। মনে হবে আপনি একাই দলের একমাত্র সদস্য। পরাজয়ের জন্যই এমন অনুভূতি তৈরি হবে আপনার মধ্যে। কিন্তু নিজেকে বদলে দলের জন্য কিছু করাটাই তখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিজের খেলা দিয়ে দলে জায়গা ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। 
খেলার মাঠে নিজেকেই নিজের সুযোগ তৈরি করে নিতে হয়। কিন্তু বাদ পড়ে গেলে সেই সুযোগ আবার তৈরি করা ভীষণ কঠিন। ভালো ক্রিকেট খেলা আর বড় স্কোর দিয়ে দলে নিজের জায়গা ধরে রাখতে হয়। দল থেকে বাদ পড়ার অনুভূতি ভীষণ কষ্টের কিন্তু এর মধ্য দিয়ে আবার সামনে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ পাওয়া যায়।
সুযোগ পেলে তাকে লুফে নিতে হবে। আমি লর্ডসে ক্রিকেট খেলার সময় এমন সুযোগ পেয়েও লুফে নিতে পারিনি। এক ম্যাচে ৮০ রান করার পর পরপর তিন ম্যাচে কম রানে আউট হই আমি। আমি দুবার বাদ পড়ি। আমার পুরো ক্যারিয়ারে অনেক ম্যাচেই আমি কম রানে আউট হয়ে গেছি। কিন্তু বড় করার সুযোগ পেলেই আমি রান এগিয়ে নিয়ে যাই। আমি ধীরে-সুস্থে ২০ কিংবা ৩০ রান করার পরেই রানকে আরও বড় করার চেষ্টায় মনোযোগ দিই। আমার ক্যারিয়ার পরিসংখ্যান এটাই বলে। আমি রান করতে পারি।
আমি তিন ধরনের ক্রিকেটই মনোযোগ দিয়ে খেলার চেষ্টা করি। আমি পরিপূর্ণ ব্যাটসম্যান হতে চাই। একদিন আমি তিন ধরনের ক্রিকেটেই পূর্ণাঙ্গ ব্যাটসম্যান হবই। এর জন্য আমার অনেক কাজ করতে হবে। সুযোগ তৈরি করতে হবে। টেস্ট ক্রিকেটের পরিপূর্ণ স্বাদ আমি পেয়েছি। আমি ক্রিকেটের খুদে সংস্করণের জন্য নিজেকে তৈরি করছি। আমি আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে পছন্দ করি। এটাই আমার সহজাত খেলা। সামনের পা এগিয়ে নিয়ে আক্রমণ করতেই আমার আগ্রহ বেশি। এর মধ্য দিয়েই আমি ক্রিকেট খেলা সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমার খেলার জন্য আরও পরিশ্রম করতেই হবে। লেগ সাইডের শটের জন্য আরও কাজ করতে হবে। আমি ধীরে ধীরে একদিনের ক্রিকেটের জন্য আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছি।
৩ নম্বরে ব্যাটিং হোক আর যেকোনো জায়গায় ব্যাটিং হোক খেলার মাঠের পরিবেশ আর পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে সব। আমি মাঠে কখনো রান করি, আবার কখনো কঠিন বোলিংয়ের জন্য রান করতে পারি না। ধীরে ধীরে মাঠে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়। সারা বিশ্বের ভালো খেলোয়াড়েরা মাঠের পরিবেশ আর পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেরা মানিয়ে নিয়ে ইনিংস বড় করে। আমিও সেই চেষ্টা করি।

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

কিশোর আমদানিকারক


জোনাথান কুন

 কিশোর আমদানিকারক

চীনা-মার্কিন কিশোর জোনাথান কুন। চীন থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ আমেরিকায় আমদানি করেই কোটিপতি হয় কিশোর কুন। ১৬ বছর বয়সে স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করে সে। বছর না পেরোতেই নামের আগে মিলিওনেয়ার তকমা জুটে যায় তার। বর্তমানে তার বার্ষিক আয় প্রায় ৮০ লাখ ডলার, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬৪ কোটি টাকা।

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

ওয়েবসাইট বানিয়েই কোটিপতি



জুলিয়েট ব্রিনদ্যাক


ওয়েবসাইট বানিয়েই কোটিপতিমাত্র ১৬ বছর বয়সে এক লাখ ডলার আয় করে মার্কিন কিশোরী জুলিয়েট ব্রিনদ্যাক। মিস ও ফ্রেন্ডস নামে দুটি সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট তৈরি করে আলোচিত হয় সে। কিশোরীদের জন্য বিশেষায়িত এই সাইট দুটি জুলিয়েটকে কোটিপতি বানিয়ে দেয়। বর্তমানে তার আয় ১৫ লাখ ডলারের বেশি, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১২ কোটি টাকা।

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

নিজের হাতেই নিজের ভবিষ্যৎ: মাইকেল শুমাখার

মাইকেল শুমাখার


মাইকেল শুমাখারের জন্ম ১৯৬৯ সালের ৩ জানুয়ারি, জার্মানিতে। তিনি সাতবার মোটর রেসিংয়ের ফর্মুলা ওয়ান ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করেন। চালকদের নিরাপত্তার বিষয়ে ইউনেসকোর সচেতনতা কর্মসূচির শুভেচ্ছাদূত শুমাখার। নানান দাতব্য সংস্থায় এক কোটি ডলারেরও বেশি দান করে তিনি আলোচিত।
আমাকে নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু বলেন। সেরা খেলোয়াড়, আদর্শ, আইকন। এ শব্দগুলো বেশ অস্বস্তিকর। আমি জানি আমি কী। আমার নেশা মোটর রেসিং। পেশা দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা। এখানে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে প্রতিমুহূর্তে, কিন্তু তার পরও আমি ছুটে চলি। সব সময় আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ শুরু করি। যার কারণে বাকি কাজটুকু নিয়ে দ্বিধায় পড়ি না। মোটর রেসিং খেলায় এক সেকেন্ডের সঙ্গে আরেক সেকেন্ডের কোনো মিল নেই। তাই এখানে জীবনের সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ খুঁজে পাওয়া যায়।
আমি আমার কাজটুকু জানি, বুঝি। তাই যেকোনো চাপেই মানিয়ে নিতে পারি। যেকোনো চাপে মানিয়ে নেওয়াই বড় বাধা। ফেরারি গাড়ি যখন চালাতাম, তখন পুরো ইতালি আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকত। একটা শহর না, পুরো একটা দেশের কোটি কোটি চোখ থাকত আমাদের ওপর। এটা অনেকটা ফুটবল ক্লাবের মতন। আমাকে কেউ কেউ ‘পোপ’ বলে ভাবত। আমি আসলে নিতান্তই এক গাড়িচালক, যে কিনা অন্যদের চেয়ে একটু বেশি জোরে গাড়ি চালাতে পারে।
সত্যিকার অর্থে আমি কখনই মাইকেল শুমাখার হতে চাইনি। আমি নিজের আনন্দের জন্য সব করতাম। শখের বশেই গাড়ি চালানোর দুনিয়ায় আমি আসি। ভাঙা আর নড়বড়ে গাড়ির যন্ত্রপাতি দিয়ে আমার দুনিয়া আমি নিজ হাতে সাজানোর চেষ্টা করেছি মাত্র। আমার ওজন কম ছিল বলেই হয়তো আমি রেসিংয়ে জিতে যেতাম। এখন আমি মাইকেল শুমাখার হয়ে পরিচিতি পাওয়ায় ভীষণ বিপদে পড়ে গেছি। আমার এখন টাকাপয়সা আছে, আছে স্বাধীনতা। কিন্তু আমার বাইরে ঘুরতে যাওয়াই এখন অসহ্য লাগে। চারদিকে ক্যামেরা আর ভক্তদের দৌড়াদৌড়ির জন্য আমাকে পালিয়ে থাকতে হয়।
আমার বাবা আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিলেন না। তিনি বেশ ধার-দেনাগ্রস্ত ছিলেন। আমি বাবাকে অবাক করার চেষ্টা করতাম। রেসিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বাবাকে চমকে দেওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। তাই তো প্রথম রেস বিজয় শেষে বাবাকে অবাক করার জন্য এক স্যুটকেস টাকা দিয়েছিলাম। বাবা বিশ্বাস করেননি। সেটা ছিল আমার জন্য অনন্য এক অভিজ্ঞতা। সাফল্যের প্রথম সূত্র অনুপ্রেরণা। আমার বাবাই আমার সব প্রেরণা।
আমি কোনো রেকর্ড গড়ার জন্য কিংবা ভাঙার জন্য খেলতে নামি না। আমি গাড়ি নিয়ে উড়তে পছন্দ করি। আপনি চিন্তা করুন, হাতে হুইল আর পায়ের নিচে ব্রেক, আপনার কথামতো ছুটছে গাড়ি, এর চেয়ে থ্রিলিং আর কী হতে পারে! আমি সব সময়ই এমন অভিজ্ঞতার জন্য মুখিয়ে থাকি। জীবনটাই গতি, এখানে থেমে থাকার কিছু নেই।
আমি ভাগ্যে প্রচণ্ড বিশ্বাসী। প্যারাস্যুট দিয়ে বিমান থেকে চোখ খুলে নামতে পছন্দ করি। মোটরবাইকও চালাই। পাহাড়ে চড়ি, স্কেটিং করি। সময়কে উপভোগ করার জন্য ঘুরতে পছন্দ করি। শরীরে অ্যাড্রেনালিন হরমোন যত বেশি প্রবাহিত করা যায়, ততই জীবন উপভোগ্য। সবকিছুতে আনন্দ খোঁজাই আনন্দের কাজ। আমি কখনোই থামতে চাই না, এটা আমার জন্য সম্ভব নয়।
দিনশেষে মানুষের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের সততা। সততা আর বিনয় একজন মানুষকে অনেক ওপরে নিয়ে যায়। প্রত্যেক মানুষের হাতেই লুকিয়ে আছে তার ভবিষ্যৎ। মানুষ নিজেই তার ভবিষ্যৎ গড়ে। আমাদের শুধু বর্তমানকেই নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে। আর তাহলে ভবিষ্যৎ এসে আপনার দুয়ারে কড়া নাড়বে। কাজ করুন, অপেক্ষা করুন, দেখবেন সম্ভবনাময় এক ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।
একবার জয়ী হলেই সব শেষ না, আবারও মাঠে নামতে হয়। জয়কে ধরে রাখতে হয়। যেদিন অবসরের সময় হবে, সেদিন পর্যন্ত বিজয়ী হয়ে মাঠে থেকে ফিরে আসাই অমরত্ব। ব্যাপারটা আসলে কোনো পর্বত বছরের পর বছর ধরে জয় করার মতন। আপনি শীর্ষ কোথায় জানেন, পথও চেনেন। কিন্তু কী হবে, সেটা জানেন না। বিজয়ের স্বাদ কেউ একবার পেলে তার নেশা মাথায় জেঁকে বসে। একেকটা সার্কিটে জয় একেকটা স্বাদ। প্রতিটি জয়ের সঙ্গে মিশে থাকে শ্রম আর ঘাম।
মানুষের জীবনে ভুল থাকেই। ভুলের ঘটনা ভুলে যাওয়া বোকামি, আর ভুল নিয়ে পড়ে থাকা আরও বড় বোকামি। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে পা বাড়ানোই সত্যিকারের মানুষের কাজ। আপনি যতই বিখ্যাত হোন না কেন, কোথা থেকে আপনি এসেছেন, কোথায় আপনার শিকড়, তা মনে রাখতে হবে। 
নিজের সমালোচনাকে সব সময় গ্রহণ করা শিখুন। সমালোচকেরা আপনার ভুল ধরবেই। আপনি সেই ভুল থেকে নিজেকে শুধরাবেন। সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়া কষ্টকর। তার চেয়ে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করাই সহজ কাজ। অন্যরা আপনাকে দেখে বাঁকা হাসি হাসবেই। আপনি হতাশ হবেন না। মনে রাখুন, রেসিং হোক আর জীবন হোক, সবখানে বিজয়ী সব সময় একজনই হয়।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট। ২০০৬ সালের ৯ জানুয়ারি জার্মান সাপ্তাহিক স্পিগলকে দেওয়া সাক্ষাৎকার অবলম্বনে

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

আমি কখনো হাল ছাড়ি না



মারিয়া শারাপোভা

মারিয়া শারাপোভা বিশ্বের অন্যতম আলোচিত টেনিস খেলোয়াড়। শারাপোভার জন্ম রাশিয়ায়, ১৯৮৭ সালের ১৯ এপ্রিল। এ যাবৎ তিনি টেনিসের পাঁচটি গ্র্যান্ড স্লাম জয় করেছেন। ২০০৭ সাল থেকে মারিয়া জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করছেন।
১৭ বছর বয়সে আমি উইম্বলডন জয় করি। এর কয়েক বছরের মধ্যেই মারাত্মকভাবে কাঁধের ইনজুরিতে পড়ে আমার খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। আমার সামনে অনেক কারণ ছিল, যার জন্য টেনিস খেলাই ছেড়ে দেওয়ার কথা তুলেছিল অনেকে। ইচ্ছা করলেই তখন খেলা ছেড়ে দিতে পারতাম, কিন্তু হাল না ছেড়ে আবার কোর্টে নামার সাহস করি।
সত্যিকার অর্থে, আমার বেড়ে ওঠা ছিল ছাই থেকে। আবর্জনা থেকে আমার পরিবার মাথা তুলে দাঁড়ায়। আমার শিকড় কোথায়, সেটা আমি জানি। আমার শুরুর সেই কষ্টের দিনগুলো আমি কখনোই ভুলতে পারব না। আমার বাবা-মা দুজনেই বেলারুশ থেকে আসেন। আমি যখন মায়ের পেটে, তখন চেরনোবিল দুর্যোগ ঘটে। বাবা আর মায়ের কাজ চলে যায়। তাঁদের বাকি জীবনটা অনেক সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে গেছে। আমি তাঁদের মেয়ে। বাবা চার বছর বয়সে আমার হাতে টেনিস র্যাকেট তুলে দেন। বাবাই ছিলেন আমার প্রথম কোচ। স্কুলে পড়াশোনা আর বাড়ির কাজ শেষ করে প্রতিদিন টেনিস অনুশীলনে নামতাম।
আমি কোনো কিছু ধরলে তা ছাড়ি না। আমার বিখ্যাত কোনো বন্ধু ছিল না, যার মাধ্যমে আমি খ্যাতি অর্জন করতে পারি। কিংবা আমি ফ্যাশন মডেল নই, যাকে কোনো লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন বিখ্যাত করেছে। মূল কথা হচ্ছে, টেনিসই আমাকে সব দিয়েছে। ইনজুরিতে থাকার সময় যখন ম্যাগাজিন আর পত্রিকায় আমার ছবি দেখতাম, তখন ঠিক থাকতে পারতাম না। হাসপাতালে বসে কোর্টে দৌড়ানোর শব্দ পেতাম। আর দৌড়াব বলেই টেনিস কোর্টে ফিরে আসি।
আমি সব সময় মাঠে থাকতে চাই। প্রতিদিন। জয়-পরাজয় নিয়ে ভাবি না। মাঠে থাকাই সব। খেলা শেষে ঘেমে একাকার হয়ে বাড়ি ফিরতে চাই।
আমার বেড়ে ওঠা ছিল রাশিয়ার সোচি শহরে। যুক্তরাষ্ট্রে সবাইকে সোচি নামের বানান করে বলতে হতো। কেউ জানত না সোচি মানচিত্রের কোথায়। এখন আমার জন্য অনেকেই মানচিত্রে সোচি শহরকে চেনে। এটা অনেক আনন্দের। আমি যখন রাশিয়ার পতাকা নিয়ে কোথাও দাঁড়াই, তখন আমার চেয়ে গর্বিত আর কে হয় বলুন?
খেলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এক টেনিস একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিতে এসেছিলাম। যার জন্য মায়ের সঙ্গে প্রায় দুই বছর দেখা হয়নি। তখন আমাদের মুঠোফোন ছিল না, কোনো ই-মেইলও ছিল না। একটা কলম আর এক টুকরা কাগজই ছিল আমার সব। মাকে চিঠি লিখতাম। চিঠি যখন মায়ের কাছে যেত, তখন আমার যে অনুভূতি হতো, তা এখনো শিহরিত করে।
টেনিস খেলার একাডেমিতে অন্য মেয়েরা আমাকে নিয়ে হাসত। বেশি ছোট ছিলাম বলে র্যাগিংয়ের শিকার হতাম। আমাকে টিজ করা হতো। তখন আমি হতাশ হয়ে একা একা কাঁদতাম, কিন্তু আমার লক্ষ্য আমি জানতাম। রেগে দেশে ফিরে গেলে আমি হয়তো আজকের আমি হতাম না। সব সময় আশাবাদী হয়ে থাকলে বিপদে পড়লেও নিজেকে নিজে উদ্ধার করা যায়। কষ্ট করে লেগে থাকতে হয় স্বপ্নের পেছনে।
২০০৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে উইম্বলডন জেতা ছিল আমার জন্য বিস্ময়। এটা স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু ছিল। কখনোই চিন্তা করিনি মাত্র দুই সপ্তাহে পৃথিবীর সেরা সব টেনিস খেলোয়াড়কে হারিয়ে দেব! ফাইনালে আমি সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে দিই। আমি কতটা দুর্ধর্ষ টেনিস খেলোয়াড় হয়ে উঠেছিলাম, তা ভাবলে এখনো গায়ে কাঁটা দেয়। কোনো দিকে মন না দিয়ে টেনিস বলেই আঘাতের পর আঘাত করে গিয়েছি। ফলে ফাইনালে আমার হাতেই ছিল সেরার পদকটি।
বেঁচে থাকার জন্য আমি টেনিস বলকে আঘাত করি, পরিশ্রম করি। আমি সব সময় সবার কাছ থেকে শেখার আগ্রহ নিয়ে বসে থাকি। বাবা আর মায়ের কাছ থেকেই আমি কৌতূহলী হয়ে ওঠার নেশাটি পেয়েছি। আমার কাছে সবচেয়ে বড় আর গুরুত্বের বিষয় হলো, প্রথমে ভালো মানুষ হওয়া, তারপর পেশাদার ক্রীড়াবিদ হতে হবে। এটা সত্যি অনন্য এক চ্যালেঞ্জ।
বেঁচে থাকার জন্য বন্ধুর বিকল্প নেই। আমি সুযোগ পেলেই বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে যাই, গান গাই। টেনিস নিয়ে পড়ে থাকলেও পরিবারকে সময় দিই। যখন খুব হতাশায় ভুগি, তখন নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দিই। নেইলপলিশ হাতে গ্র্যান্ড স্লামের ট্রফিগুলো তোলার স্মৃতি বারবার মনে করে নিজেকে সাহস দিই। আর হতাশার মাত্রা চরমে উঠলে গলা ছেড়ে গান গাই। প্রতিদিন সকালে আমি গান শুনে বাড়ি থেকে বের হই। আমার দুনিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো মায়ের হাতের রান্না। মায়ের হাতের বৈচিত্র্যময় রান্নার জন্য বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে আমার। আমি সময় পেলেই বইয়ের পাতায় হারিয়ে যাই। একই বই কয়েকবার পড়ার বাতিক আছে আমার।
আমাকে কেউ কেউ ‘সুগারপোভা’ নামে ডাকে। অনেক ছোটবেলা থেকে আমি চকলেটের ভক্ত। আমার দাঁতে সব সময় চিনি লেগে থাকত। আমি চাইতাম বড় হয়ে আমি চকলেটের দোকান দেব। বড় হয়ে ব্যবসায়ী হব। সত্যি সত্যি টেনিস খেলার ক্যারিয়ার শেষ করে ব্যবসা করতে নামব।
মানুষের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা সে নিজেই। নিজেকে সাফল্যের চূড়ায় দেখতে চাইলে মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। যখন যা করো, তা-ই উপভোগ করো। বাড়িতে থাকলে টিভি দেখো, সিনেমা উপভোগ করো। হাসো। কিন্তু যখন কাজ করবে, তখন তাকে উপভোগ করো। নিজের প্রতিভা আর বুদ্ধি দিয়ে কঠিন সব কাজকে আয়ত্তে আনাই সফল ব্যক্তিদের কাজ। নিজের জীবনকে নিজেকেই আকর্ষণীয় করে তুলতে হয়। গণ্ডির মধ্যে না থেকে মাঝেমধ্যে পাগলামি করো। পাগলামি করা শেখো। সামান্য কিছুতেই হাসতে শেখো। হাসিই সবচেয়ে বড় ওষুধ। ঝুঁকি নিতে শেখো। দাঁতে পোকা ধরার ঝুঁকি থাকলেও মাঝেমধ্যে চকলেট খাও। নিজেকে নিয়ে খুশি থাকো!
কিশোর বয়সে যারা টেনিস খেলতে চায়, তাদের জন্য আমার পরামর্শ, লেগে থাকতে হবে। পড়তে হবে, জানতে হবে, খেলতে হবে। সবকিছুর জন্য চাই কঠিন অনুশীলন। ব্যর্থ হলেও লেগে থাকতেই হবে। সফল হলেও লেগে থাকতে হবে।
তথ্যসূত্র: টেলিগ্রাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকার অবলম্বনে

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

স্বপ্ন হোক আকাশে ওড়ার


এ পি জে আব্দুল কালাম



ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের জন্ম তামিলনাড়ুতে, ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর। তিনি ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘ভারতরত্ন’ ছাড়াও ‘পদ্মভূষণ’ ও ‘পদ্মবিভূষণ’ খেতাবে ভূষিত। সম্প্রতি ঢাকা সফরে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) ১১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ১৭ অক্টোবর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি এই বক্তব্য দেন।
বন্ধুরা, প্রথমত ধন্যবাদ জানাই আমাকে এখানে কিছু বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য। একই সঙ্গে ধন্যবাদ জানাই যারা আমাকে এখানে নিয়ে এসে তোমাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ করে দিল। বাংলাদেশকে আমার দুটি কারণে অনেক ভালো লাগে। এক, এ দেশের বিস্তৃত জলরাশি। আজও যখন দিল্লি থেকে উড়ে এলাম তখন দেখছিলাম দেশজুড়ে কত নদী! আসলে তোমাদের নাম হওয়া উচিত ‘ওয়াটার পিপল’। তোমরা খুব সৌভাগ্যবান। আর দুই, এ দেশের তৈরি পোশাকশিল্প। তোমরা নিজেরাও হয়তো জানো না তৈরি পোশাকশিল্পে তোমরা কতটা উন্নত। আর হ্যাঁ, অবশ্যই আমার ভালো লাগার একটা বড় অংশজুড়ে আছ তোমরা, এ দেশের তরুণ যুবসমাজ। এ দেশের জনসংখ্যা অনেক হতে পারে। কিন্তু মনে রাখবে এর অর্ধেকই তোমরা। তোমাদের ধ্যানধারণা, চিন্তাভাবনা ও কাজকর্মের ওপরই দেশের উন্নয়ন অনেকাংশে নির্ভর করছে। বাংলাদেশেরও উচিত তোমাদের শক্তিমত্তার কথা মাথায় রেখে তোমাদের যথাযথ ব্যবহার করা। আর তাই আমার একটি পরামর্শ রইল তোমাদের প্রতি। এখন থেকে সবকিছুতে দেশের কথা মাথায় রাখবে। কোনো স্বপ্ন দেখলে নিজের সঙ্গে বাংলাদেশকে নিয়েও দেখবে, কোনো চিন্তা করলে বাংলাদেশকে নিয়ে করবে আর কোনো কাজে মগ্ন হলে বাংলাদেশের জন্য করবে।
ভারতের তরুণদের সঙ্গে তোমাদের অনেক মিল আছে। যেমন মিল আছে দুই দেশের ইতিহাস থেকে শুরু করে শিল্প-সংস্কৃতি আর সম্পদে। অর্ধশত নদী আমাদের দুই দেশের মধ্য দিয়ে প্রবহমান। বিশ্বের সব থেকে সুন্দর এবং সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনও এই দুই দেশজুড়ে রয়েছে। তাই এই দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অনেক অটুট। আমার ৮৩ বছরের জীবদ্দশায় গত দুই দশক ধরে দেশে এবং দেশের বাইরে প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ তরুণের সংস্পর্শে এসেছি শুধু তাঁদের স্বপ্ন কী সেটা জানতে। তাই যখন তোমাদের কাছে আসার সুযোগ পেলাম সে সুযোগটি হাতছাড়া করতে চাইনি।
তোমাদের যখন পেলামই তখন আমার জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে মূলত চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি আমি আজ আলোকপাত করব। সেগুলি হল: জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ, জ্ঞান আহরণ, অনেক বড় সমস্যায় পড়লেও লক্ষ্য থেকে সরে না আসা এবং কোনো কাজে সাফল্য ও ব্যর্থতা দুটোকেই নেতৃত্বগুণে সামাল দিতে পারা।
প্রথমেই তোমাদের আমার একটা ছোট্ট গল্প শোনাতে চাই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমার এক স্কুলশিক্ষক ছিলেন শিব সুব্রমনিয়াম আয়ার, যাঁকে দেখলে ‘জ্ঞানের বিশুদ্ধতা’ কথাটার মানে বোঝা যায়। সেই শিক্ষক একদিন একটি পাখির ছবি এঁকেছিলেন। অনেকক্ষণ ধরে শিখিয়েছিলেন পাখি কীভাবে আকাশে ওড়ে। বলেছিলেন, কালাম কখনো কি উড়তে পারবে এই পাখির মতো? সেই থেকে আমার আকাশে ওড়ার স্বপ্নের শুরু। 
ঠিক উড়তে গেলে কী করতে হবে সেটা আমি বলব না। সেটা তোমরা নিজেরাই ঠিক করে নেবে। তবে আমি তোমাদের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিতে পারি। কথাগুলো তোমরা আমার সাথে বল, ‘সব সময় জীবনের অনেক বড় লক্ষ্য রাখব। মনে রাখব ছোট লক্ষ্য অপরাধের সমান। আমি অব্যাহতভাবে জ্ঞান আহরণ করে যাব। সমস্যা সমাধানের অধিনায়ক হব। সমস্যার সমাধান করব। সমস্যাকে কখনো আমার ওপর চেপে বসতে দেব না। যত কঠিন সময়ই আসুক না কেন কখনোই হাল ছেড়ে দিব না। এভাবেই আমি একদিন উড়ব।’
সবাইকে অনেক বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। সর্বদা চিন্তা করবে, আমাকে যেন মানুষ মনে রাখে। কিন্তু মানুষ কেন মনে রাখবে, সেটি ঠিক করতে হবে। এই যে চারপাশে এত আলো দেখছ, বাতি দেখছ, বলো তো এই বাতি দেখলেই প্রথমে কার কথা মনে পড়ে? ঠিক, টমাস আলভা এডিসন। এই যে যোগাযোগের জন্য টেলিফোন, এটা দেখলে কার কথা মনে পড়ে? আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল। একইভাবে এই বাংলাদেশের কথা চিন্তা করলে প্রথমেই কার কথা মাথায় আসে বলো তো? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সবাই তাঁকে মনে রেখেছে। এভাবে সবাইকে স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি তা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবে। এমন কিছু করে যাবে, যাতে তোমার অনুপস্থিতিতেও পৃথিবী তোমাকে মনে রাখে।
ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের কথা যখন এল তখন বলি, সফল হলেও প্রথমে কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছিলাম। আর ওই ব্যর্থতাই আমাকে সফল হতে উজ্জীবিত করেছিল। চ্যালেঞ্জ হলো এই ব্যর্থতাকে দূর করে সফল হওয়ার পথ খুঁজে নিতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন নেতৃত্বের গুণের। সবার মধ্যে যে গুণটি অবশ্যই থাকা প্রয়োজন। মনে রাখবে, একজন যোগ্য নেতার একটি সুনির্দিষ্ট গন্তব্য, পরিকল্পনা ও যেকোনো অবস্থা সঠিকভাবে উপলব্ধি করার ক্ষমতা থাকতে হবে। তাঁকে হতে হবে সৎ ও উদার মনের। সফলতাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে কিন্তু ব্যর্থতাকে নিজের করে নেয়ার ব্যাপারে দৃঢ় হতে হবে। 
সমস্যাকে কখনো এড়িয়ে যেতে চাইবে না। বরং সমস্যা এলে তার মুখোমুখি দঁাড়াবে। মনে রাখবে, সমস্যাবিহীন সাফল্যে কোনো আনন্দ নেই। সব সমস্যার সমাধান আছেই। জ্ঞান আহরণ থেকে কখনো বিরত থেকো না। কারণ এই জ্ঞানই তোমাকে মহানুভব করে তুলবে। অন্য গুণাবলি অর্জনে সাহায্য করবে। নিজেকে অনন্য সাধারণ করে তোলার চেষ্টা করো। মনে রাখবে, তোমার চারপাশের পৃথিবী সর্বদা তোমাকে সাধারণের কাতারে নিয়ে আসার চেষ্টায় লিপ্ত। হতাশ না হয়ে নিজেকে স্বপ্নপূরণের কতটা কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারছ সেদিকে নজর রাখবে। কখনোই সাহস হারাবে না। নিজের একটি দিনও যাতে বৃথা মনে না হয় সে চেষ্টা করো। 
তোমরা সবাই ভালো থাকবে। সবাই কোনো না কোনো দিন উড়বে। তোমাদের সবার জন্য শুভকামনা। 
মূল বক্তৃতার নির্বাচিত অংশ অবলম্বনে 

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS