Md. Afrooz Zaman Khan

Afrooz
Md. Afrooz Zaman Khan. Powered by Blogger.
RSS

বেবিসিটার থেকে মিলিয়নিয়ার


  
মার্থা স্টুয়ার্ট

মাত্র ১০ বছর বয়সেই ‘বেবিসিটার’ হিসেবে মার্থা স্টুয়ার্টকে কর্মজীবন শুরু করতে হয়। মার্থা জীবনে কত ধরনের কাজ যে করেছেন, তা হিসাব করাও কঠিন। মঞ্চ নাটকের অভিনেত্রী, খুদে সাংবাদিক, মডেলিং, ক্যাটারিং ব্যবসা—আরও কত কী! এখন অবশ্য তাঁকে বিশ্ব চেনে ব্যবসায়ী, লেখক ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব হিসেবে। মার্থা মানেই যেন বিখ্যাত বেস্ট সেলার বই, মার্থা মানেই যেন আলোচিত কোনো টেলিভিশন শো। বর্তমানে ৬৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্পদের মালিক মার্থা স্টুয়ার্ট।

মার্থা-ঝলকের সূচনা হয় শৈশব থেকেই। স্কুলের সবচেয়ে বেশি গ্রেড পাওয়া শিক্ষার্থী ছিলেন সব সময়। স্কুলের বাইরে নাচের ক্লাসেও ছিল মনোযোগ। এ সময় মায়ের কাছ থেকে রান্না আর সেলাই শেখার শলা-কলা আয়ত্ত করেন মার্থা। স্কুলের সংবাদপত্রেও নিয়মিত লেখা শুরু করেন খুদে সাংবাদিক মার্থা। আর আর্ট ক্লাবের নিয়মিত সদস্য হিসেবে মঞ্চনাটকেও আলোকিত মুখ ছিলেন মার্থা। ‘ডানপিটে নায়িকা’ নামেই সবাই ডাকত তাঁকে।

স্কুলের বাস্কেটবল টিমেও নিয়মিত দেখা যেত মার্থাকে। পড়াশোনা, খেলাধুলাকে সঙ্গে নিয়েই পার্টটাইম চাকরি শুরু করেন মার্থা। ১০ বছর বয়সেই কর্মজীবন শুরু হয় তাঁর। তবে যেনতেন চাকরি নয়, মার্থার প্রথম চাকরিই ছিল বেবি সিটিংয়ের কাজ। আমেরিকান ফুটবলের তিন আলোচিত ফুটবলার মিকি ম্যান্টেল, ইগি বেররা, গিল ম্যাকডোগাল্ডের সন্তানদের বেবিসিটার হিসেবে কাজ শুরু করেন মার্থা। দিনে পড়াশোনা আর বিকেলে চাকরি নিয়েই অনেক দিন ব্যস্ত ছিলেন তিনি। তবে ১২ পেরোতেই মডেলিং দুনিয়ায় নাম লেখান মার্থা। টুকটাক মডেলিং, পত্রিকা-ম্যাগাজিনে শিশু মডেল হিসেবেই দেখা যেত মার্থাকে। তবে ১৫ বছর বয়সে মার্থা আলোচিত হন। এ সময় প্রথমবারের মতো ইউনিলিভারের পণ্যের মডেল হিসেবে টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায় মার্থাকে। এর পরে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ২১ বছর পর্যন্ত নিয়মিত মডেলিং আর বিজ্ঞাপন দুনিয়া কাঁপিয়ে গেছেন মার্থা। হলিউডেও বেশ কয়েকবার ডাক পান মার্থা। তবে রুপালি পর্দার হাতছানিকে একরকম উপেক্ষা করে কলেজে পড়াশোনার জন্য ভর্তি হন সবে ১৯-এ পা রাখা মার্থা। আর কলেজে কেনই বা ভর্তি হবেন না তিনি। একদিকে ভালো গ্রেড আর সম্মানজনক বৃত্তির সুযোগ কি সহজে না করা যায়!
মার্থার জন্ম ১৯৪১ সালের ৩ আগস্ট। নাটলি হাইস্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে বার্নার্ড কলেজে ভর্তি হন মার্থা। রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। কঠিন বিষয় নিয়ে পড়াশোনার ভিড়ে হারিয়ে যাননি মার্থা, মডেলিং-পড়াশোনা দুটোই চালিয়েছেন সমানে সমান। ১৯৬১ সালে গ্ল্যামার ম্যাগাজিন তাঁকে বর্ষসেরা পরিচ্ছন্ন কলেজ গার্ল খেতাব দেয়। এ সময় মডেলিংয়ের জন্য কলেজ থেকে নাম কাটিয়ে কয়েক বছরের জন্য ড্রপআউটের তালিকায় নাম লেখান মার্থা। পত্রিকা-ম্যাগাজিন আর টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন মানেই ছিল মার্থার তারকা-ঝলক। নামীদামি পণ্যের মডেল হিসেবে পর্দা কাঁপানো শুরু করেন মার্থা। চলচ্চিত্র জগতেও ডাক আসে তাঁর। কিন্তু মডেলিংকে হঠাৎই ‘না’ বলে আবারও পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেন মার্থা। মার্থা তাঁর প্রথম বই এন্টারটেইনিংয়ে লেখেন, ‘আমি একেবারে তরুণ বয়সে মডেলিং দুনিয়ায় আসি। সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমি নিজে থেকেই সরে যাই এই দুনিয়া থেকে। আমি আসলে বিজ্ঞাপন, ফটোশুট—এসবে আগ্রহ পাচ্ছিলাম না। আমি চেয়েছিলাম আমার পড়াশোনা দিয়ে কিছু করতে। যার জন্যই আমি রুপালি পর্দাকে না বলে আবারও কলেজে যাওয়া শুরু করি। আমি হলিউড তারকা না হয়ে ওয়াল স্ট্রিটের তারকা হতে চেয়েছিলাম।’
ওয়াল স্ট্রিট জয় করার জন্য এবার তিনি কলেজে ইউরোপের ইতিহাস নিয়ে পড়া শুরু করেন। তবে শেষ পর্যন্ত স্থাপত্যের ইতিহাস নিয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করেন মার্থা। এর পরে ওয়াল স্ট্রিটে স্টক ব্রোকার হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান ‘মোনেস, উইলিয়াম অ্যান্ড মোনেস’কে গড়ে তোলেন ওয়াল স্ট্রিটের সবচেয়ে বড় ফার্মগুলোর একটি হিসেবে। পাঁচ বছরের বেশি সময় বাণিজ্যের দুনিয়ায় ঝলক দেখান তিনি। ওয়াল স্ট্রিটে প্রথম যে কজন নারী কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম মার্থা। মার্থার ভাষায়, ‘আমি যখন ক্যারিয়ার শুরু করি, তখন ওয়াল স্ট্রিটে হাতে গোনা কয়েকজন নারীকে দেখা যেত। নারীরা যে ব্যবসার দুনিয়াতে কাজ করতে পারে, তখনই প্রথম টের পায় সারা বিশ্ব।’

বেশ কয়েক বছর ওয়াল স্ট্রিটের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ভিন্ন কিছু করার উদ্যোগ নেন মার্থা। অনেক দিন ভেবেচিন্তে অবশেষে ১৯৭৬ সালে নিজ বাড়ির বেজমেন্টে এক বন্ধুকে নিয়ে ক্যাটারিং ব্যবসা শুরু করেন মার্থা। ক্যাটারিং ব্যবসাকে অল্প দিনেই বড় করে ফেলেন মার্থা। সুপারশপ চালু করেন তিনি। আশির দশকে মার্থা দুনিয়া কাঁপানো অনেক রান্নাবিষয়ক বই লেখেন। আর এই সময় টেলিভিশনে উপস্থাপক হিসেবেও আলোচিত হওয়া শুরু করেন একসময়কার ‘ডানপিটে নায়িকা’খ্যাত মার্থা। প্রতিকূলের যাত্রী মার্থা স্টুয়ার্ট এখন একজন সফল ব্যবসায়ী, লেখক ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব।

তথ্যসূত্র: সিএনএন। ওয়েবসাইট অবলম্বনে



  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

0 comments:

Post a Comment