বিখ্যাত মার্কিন অভিনেত্রী ও মডেল ড্রিউ ব্যারিমোর। জন্ম ১৯৭৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে। তাঁর আলোচিত সিনেমার মধ্যে অন্যতম ইটি দ্য এক্সট্রা টেরিস্ট্রেরিয়াল (১৯৮২), চার্লিস অ্যাঞ্জেলস (২০০০), ফিফটি ফার্স্ট ডেটস (২০০৪), দি ওয়েডিং সিঙ্গার (২০০৬) ইত্যাদি। ব্যারিমোর ২০০৭ সাল থেকে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ কের যাচ্ছেন।
অভিনয় আমার কাছে অন্য গ্রহের কাজ মনে হয়। ব্যক্তি আমিকে ছাপিয়ে আরেকটি চরিত্রে হারিয়ে যেতে পারাই আসল অভিনেতার কাজ। এটা নিঃসন্দেহে দারুণ অভিজ্ঞতা। নিজের মধ্যে অন্য মানুষের জীবনের ছায়া তৈরি করা কিন্তু ভীষণ কষ্টের, তবে তা ভীষণ আনন্দেরও বটে। সিনেমায় অভিনয়ের জন্য আমাদের হাসতে হয়, চরিত্রের প্রয়োজনে কাঁদতে হয়। কিন্তু সেই মানুষটি তো আমি নই। আমার মধ্যে অন্য মানুষ ভর করে।
অভিনয় করা বই লেখার মতোই কঠিন কাজ। আমি যখন ১৪ বা ১৫ বছরের কিশোরী ছিলাম, তখন অভিনয় ছিল আমার জন্য খুব রোমাঞ্চকর। যেকোনো কাজ শুরুর আগে অনেক ভুলের ঝুঁকি থাকে, কঠিন পরিণতির আশঙ্কা থাকে। কিন্তু আমি আশঙ্কার কথা মাথায় নিয়ে পথে নামিনি। আমি ভুলগুলো নিয়েই সামনে এগিয়ে চলেছি, সামনে এগিয়ে যাব। মানুষের মধ্যে যত ভুল করার আশঙ্কা থাকে, সে তত সামনে এগিয়ে যেতে পারে।
চারপাশের মানুষই ব্যক্তিকে অনুপ্রাণিত করে। আমিও আমার মায়ের কারণে এত হাসিখুশি আর অনুপ্রাণিত। মা অদ্ভুত কিছু দেখলেই উদ্ভট সব মন্তব্য করতেন। সেই গুণটিই আমি পেয়েছি। আমার কাছে জীবন গুরুতর কিছু নয়, আনন্দ করে সবাইকে হাসাতেই আমার আগ্রহ।
আমার বয়স যখন বিশের ঘরে ছিল, তখন রূপকথার মতো জীবন কল্পনা করতাম। কিন্তু ত্রিশের ঘরে এসে আমি বুঝতে পেরেছি রূপকথা বলে কিছু নেই। আমাদের বাঁচতে হয় আজকের জন্য। কিন্তু আমরা এই কথা ভুলে যাই। আজকের কথা মনে রেখে যেকোনো কাজ করলে আমাদের সাফল্য আসতে বাধ্য। এর সঙ্গে মানবিক গুণ হিসেবে সততাকে নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারলেই আমরা আলোকিত হয়ে উঠতে পারব। আমি মানুষকে কখনোই উপদেশ দিই না। উপদেশ কেউ শুনতে চায় না। আমি শুধু আমাকেই উপদেশ দিই। আমার কথা মানুষ শুনতে না চাইলেও, আমাকে দেখে মানুষ হয়তো একসময় শিখবে।
আমার ছোটবেলা রূপকথার মতো ছিল না। মা-বাবার বিচ্ছেদ আর সামাজিক বৈষম্য আমাকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। আমি সেই সময়টাকে ভুলে যেতে চাই। কিন্তু আমি ইচ্ছা করে ছোটবেলার সেই কষ্টের সময়টার কথা ভুলি না। সেই লড়াইয়ের কথা মনে করে আমি সামনে এগিয়ে যাই। পর্দার গ্ল্যামার, আলোকচ্ছটা, তারকাখ্যাতি—সবকিছুর শুরু তো সেই লড়াই থেকেই। আমি আমার কষ্টের গল্প থেকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পাই। প্রত্যেক মানুষের জীবনেই এমন গল্প থাকে। আমরা সেই গল্প থেকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি নিই না বলে হারিয়ে যাই। নিজেকে হারিয়ে ফেলতে নেই।
আমি সেই কঠিন সময়ের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখেছি। সামনে যখনই যে সুযোগ পেয়েছি, তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। সব সুযোগ যে সফল হয়েছে, তা সত্য নয়, কিন্তু সামান্য যে কয়েকটা সুযোগ কাজে লাগাতে পেরেছি, তা দিয়েই আজ আমি ড্রিউ ব্যারিমোর।
ছোটবেলা থেকে আমি ইংরেজি ভাষা নিয়ে আগ্রহী ছিলাম। কোনো কারণ ছাড়াই অভিধান পড়ার চেষ্টা করতাম। আমার পুরোনো অভিধান সংগ্রহ করার বাতিক ছিল। আর সেই কারণেই হয়তো আমি যা বলি, তা অনেক কঠিন শব্দ দিয়ে প্রকাশ করতে পারি। আসলে আমাদের কোনো কাজই ফেলনা নয়। না বুঝে অভিধান ঘাঁটাঘাঁটি আমাকে এখন কঠিন কঠিন শব্দ আর সিনেমার সংলাপ মুহূর্তেই বলতে সুযোগ করে দিয়েছে।
আমি যা ভালোবাসি তা-ই করি। আবার উল্টো করে বলি, আমি তা-ই করি যা ভালোবাসি। আসলে আমাদের তা-ই করা উচিত, যাতে আমাদের ভালোবাসা থাকে। যে কাজে ভালোবাসা জন্মে, তা নিজের মধ্য থেকে করার আগ্রহ জন্মে। আমার সিনেমা দেখতে ভালো লাগে। আমার লিখতে ভালো লাগে। আমার সিনেমায় নির্দেশনা দিতে ভালো লাগে। আমার যা ভালো লাগে, আমি তা-ই করি। নিজের ভালো লাগাটাই আসল। অন্যের কথায় হয়তো অনেক ভালো কিছু করা যায়, কিন্তু আমার কাছে আমার আমির গুরুত্বই সব সময় বেশি। আমি অনেক স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন না দেখলে মানুষ বড় হতে পারে না। আবার বড় হয়ে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করলে মানুষ সামনে এগিয়ে যেতে পারে না।
আমি সব সময় নিজেকে কাজের মধ্যে দেখার সংকল্প রাখি। যেদিন পৃথিবী থেকে বিদায় নেব, সেদিন সকালেও হয়তো কোনো সিনেমার নির্দেশনার কাজ করতে করতে চলে যাব আমি।
আমাকে মাত্র ছয় বছর বয়সে স্টিভেন স্পিলবার্গ সিনেমার জন্য নির্বাচন করেন। তিনি আমাকে যেভাবে অভিনয় করতে বলতেন, আমি তা-ই করতাম। তাই দেখে তিনি আমাকে ভীষণ পছন্দ করতেন। সিনেমার দুনিয়ায় আনার জন্য তাঁর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখতাম। আমি এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি। আকাশ না ছুঁতে পারলেও বিমানে আকাশে চড়তে পারি এখন। জীবন আসলে সুন্দর একটা যাত্রা। এই যাত্রায় আমি এত মানুষের সঙ্গে মিশেছি, এত বন্ধুর সঙ্গে গল্প করেছি যে স্বর্গে না গেলেও চলবে আমার।
আমার বয়স যখন চার বা পাঁচ, তখন একবার মাকে বলেছিলাম আমি বড় হয়ে অভিনয় করতে চাই। আমি সেই স্বপ্নের পেছনে এখনো ছুটছি। স্বপ্ন অনেকটা চুম্বকের মতো। লোহার চুম্বক আকর্ষণের মতো আমরা সেই স্বপ্নের পেছনে ছুটে যাই।
সূত্র: ওয়েবসাইট। ২০১০ সালে রিডার্স ডাইজেস্ট অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকার অবলম্বনে