Md. Afrooz Zaman Khan

Afrooz
Md. Afrooz Zaman Khan. Powered by Blogger.
RSS

খুদে বার্তা


 খুদে বার্তা
............................SR_SPORTS
তারিখ: ১০-১১-২০১২

মুঠোফোনের পর্দায় তাকিয়েই অবাক হলাম। মনে হলো, স্বপ্ন দেখছি না তো! জেরিন আমাকে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়েছে!!! মাস চারেক হলো, আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করে না। যোগাযোগ বন্ধের শুরুর দিনগুলোতে হুট করে কেন জানি আমারভালোচাইতে শুরু করল। আমরা একসঙ্গে স্নাতক শেষ করব জেনেও আমার আর ওর বয়সের পার্থক্যদুই বছরবিষয়টা ওকে ভাবাতে শুরু করল। নানা ধরনের তথ্য-উপাত্ত আমার কাছে তুলে ধরে জানাল, এখন আমার ক্যারিয়ার গড়ার সময়, আর আমার ক্যারিয়ারে নিজেকে বাধা মনে করছে... কিন্তু কোনো কিছুতেই আমার মন মানত না। পাশাপাশি হাঁটতাম, বসতাম কিন্তু আগের মতো সুরে বাজত না। শেষতক আমাকে বোঝানোর জন্যই কিনা, সেদিন আমায় ডেকে ওর বান্ধবীর বাসার নিচে প্রায় ঘণ্টা তিনেক দাঁড় করিয়ে শেষ খুদে বার্তাটি পাঠিয়েছিল, ‘আমার জন্য অপেক্ষা করো না। দেরি হবে, তুমি চলে যাও।এর পরও এত ব্যাকুলভাবে ওর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়েছি যে, একদিন বন্ধু মারফত জানিয়ে দিল আমার এইবিরক্তকরা তার পছন্দ হচ্ছে না। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত আমি প্রতিদিন ওকে একবার ফোন দিই। আগের মতো খুদে বার্তা পাঠিয়ে ছোট ছোট অনুভূতিগুলো জানাই। কিন্তু প্রান্ত থেকে কোনো সাড়া মেলে না। কিন্তু আজ হঠাৎ...বার্তাটি খুলে পড়তে শুরু করলাম, ‘...এই বার্তা ১১ জনকে পাঠান। তাহলে নয় দিনের মধ্যে খুশির সংবাদ পাবেন। না পাঠালে ১৫ বছরের মধ্যে কোনো সুসংবাদ পাবেন না।বার্তাটি পড়ে আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এল। আমার ভালো চাচ্ছে, নাকি অভিশাপ দিচ্ছে, তা হয়তো বোঝা গেল না। ওর কোনো একটি সংক্ষিপ্ত তালিকায় এখনো ১১ জনের মধ্যে আছি ভাবতেই...

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

অবহেলা


অবহেলা

 ..............................SR_SPORTS

 


বিকেলে নরম রোদের মধ্যে পুকুর পাড়ে একটি কদম গাছে হেলান দিয়ে বসে আছি। টেস্ট পরীক্ষা শেষ হয়েছে সেই কবে। মনটা খুব ভাল নেই। হঠাৎ করে সেই একটি বিদঘুটে চিন্তা মাথায় এসে উঁকি দিল। প্রায় দুই বছর পার হয়ে গেল এখনও ফাইনাল পরীক্ষা হওয়া তো দূরে থাক তারিখও পড়েনি। তাহলে অনার্স শেষ করবো কবে? চার বছরের কোর্স শেষ করতে প্রায় সাত বছর লেগে যাবে? এ আবার কেমন কথা। এখন আমরা যুবক। আমাদের জীবনের, সময়ের মূল্য কি এতই কম যে, অনার্স শেষ করতে সাতটি বছর অপেক্ষা করতে হবে?
এসব চিন্তা হয়তো আমি করলেও অনেকে করে না। বিশেষ করে যারা আমাদের নীতি নির্ধারক। তারা করলে হয়তো আমরা যারা কলেজ স্টুডেন্ট তাদের কপালে এমন দুর্দশা হতো না। যাই হোক, এসব চিন্তা মাথায় খেলা করছে, এমন সময় বন্ধু খোকন পেছন থেকে বলে উঠল, কিরে রবি এত আনমনে কি ভাবছিস? ওর কথায় সম্বিৎ ফিরে পেয়ে হাসির চেষ্টা করে বললাম কখন এলি? আয় বস। সে বলল, এই তো এক্ষুণি। হাইস্কুল থেকে আমরা দুজন খুব ভালো বন্ধু। ফুল আর গন্ধ যেমন একই সাথে থাকে, ঠিক তেমনি আমরা দুজন পাশাপাশি থাকতে পছন্দ করি। খোকন এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। কি একটা ছুটিতে বাসায় এসেছে। আমরা দুজন ঘুরতে পছন্দ করি। তাই এবারও ঠিক করেছে একটা পুরাতন কুটুম বাড়ি যাবে। ছোট বেলায় নাকি ওর বাবার হাত ধরে সেখানে গিয়েছিল। আমি বললাম তুই তো চিনতে পারবি না। সে বলল ‘‘মুখ যার মুল্লুক তার’’ একটা প্রবাদ আছে জানিস না? ওর কথা শুনে হেসে বললাম ওহ! ঠিক তাই। চল কালকেই যাই
পরদিন পুরাতন কুটুম বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হলাম। ত্রিশ মাইল পৌঁছে ব্যাটারি চালিত ভ্যান হতে নামলাম দু’জন। ওখান থেকে মানিকহার পর্যন্ত ভ্যানে (পায়ে চালানো) যেতে হবে। ২৫ টাকা ভাড়া একটি ভ্যান ঠিক করলাম। হোটেল হতে মিষ্টি কিনে ভ্যানে উঠে বসলাম। ভ্যান যখন চলতে শুরু করল, তখন হঠাৎ চালকের ডান হাতের দিকে আমার দৃষ্টি গেল। দেখলাম হাতটি পঙ্গু। বল পায় হয়তো সামান্য। ভ্যান চলছে ধীর গতিতে। বললাম ভাই, আপনার হাত তো অকেজো। তা সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধী হিসেবে কিছু পান না? তিনি কষ্টের নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন, নাহ! আমার মতো মানুষের দেবে কেন, যাদের সাথে চেয়ারম্যান, মেম্বরদের ভালো সম্পর্ক তাদের দেয়। অথচ তাদের হাত-পা আমার মতো পঙ্গু নয়। তার শেষের কথা কান্নার মতো শুনালো। চালকের মুখে পায়ের কথা শুনে তার পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি আর এক যন্ত্রণাদায়ক দৃশ্য। আমার চোখ যেন বিশ্বাস করতেই চাইছে না। বুকের ভেতর এক অজানা ব্যথা মোচড় দিয়ে উঠল। তার ডান পাও প্রায় অকেজো। কত কষ্ট করে দু’মুঠো ভাতের জন্য ভ্যান টানছে। দেখলেই অবাক হতে হয়। আমার মুখ দিয়ে কথা বের হতে চাইছে না। অনেক কষ্টে কিছুক্ষণ পর বললাম ভাই, আপনি ইউনিয়ন কাউন্সিলে আবার যাবেন। চেয়ারম্যানকে ভালো করে আপনার সমস্যার কথা বলবেন। দেখবেন, অবশ্যই আপনার একটি ব্যবস্থা করে দেবেন। এতটা শক্ত মনের মানুষ কেউ হতে পারে না যে, আপনার মতো পঙ্গু মানুষের প্রতি একটু দয়া করবে না। এর পর আরো অনেক কথা বললাম, সাধ্য মতো পরামর্শ দেয়ার চেষ্টা করলাম। দুপুর ১-২০ মিনিটে আমরা আমাদের গন্তব্যের প্রায় কাছে পৌঁছলাম। ভ্যান থেকে নেমে খোকনকে বললাম ভাড়া ছাড়া কিছু টাকা বেশি দিতে। সে ১০০ টাকার একটি নোট বের করে দিল। টাকাটা পেয়ে ভ্যানচালক বেশ খুশি হলেন। তার হাতে হাত রেখে বললাম ভাই আমরা ছাত্র, আমাদের জন্য দোয়া করবেন। বিদায় নিয়ে আল্লাহ হাফেজ বলে পিছনে ফিরলাম। নিজেকে মনে মনে ধিক্কার দিলাম। ভাবলাম, কেন এমন আমাদের এ সমাজ। এখানে গরিবদের কেন এত অবহেলা করা হয়। এ সব ভাবতে কখন যেন দু’চোখে পানি এসে গিয়েছিল বুঝতেই পারিনি।
বাসা থেকে যে আমেজ নিয়ে বের হয়েছিলাম সেই আনন্দময় মনটি ছুটে পালিয়েছে ভ্যান চালকের করুণ অবস্থা দেখে। গুমরা মুখ নিয়েই আমরা যার বাড়ি যাব তার নাম বলে এক ব্যক্তির কাছে ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলাম। আমরা যার বাড়ি যাচ্ছি, তিনি একজন মাদরাসার শিক্ষক। এলাকায় বেশ পরিচিতি। তাই ঠিকানা জানতে কষ্ট হলো না। জানলাম এখনও পনের মিনিট হাঁটতে হবে। শুরু করলাম হাঁটা। মেঠে পথ। রাস্তায় মাঝে মাঝে কাদা।  পাঁচ মিনিট হাঁটার পর খোকনকে বললাম কিরে খোকা, এখন গেলে খেতে দেবে তো? ও দুষ্টুমির হাসি হেসে বলল দেবে না মানে। তিন শত টাকার মিষ্টি নিয়ে যাচ্ছি, জামাই আদরে রাখবে দেখিস। ওর মুখে এমন কথা শুনে কষ্টের মাঝেও এক ঝাঁক মিষ্টি হাসি আমার ঠোঁটে এসে হাজির হল।

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

জোছনা


"জোছনা"
লিখেছেনঃ
-------

-
তোমার নাম কী ? 
বাসার নতুন কাজের মেয়েটির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো আশফা।
-জোছনা। ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলো মেয়েটি।
-তুমি এখন থেকে আমাদের বাসায় থাকবে ?
-জি।
আশফা
আর কোনো প্রশ্ন না করে নিজের ঘরে চলে গেলো।
-শোনো জোছনা, তুমি তাশফা আর আশফার সঙ্গে ওদের ঘরে শোবে। তবে তোমার জিনিসপত্র ওই ঘরটায় রাখবে। আশফা আর ওর বড় বোন তাশফার পড়ার ঘর দেখিয়ে দিলেন মা।
আশফা
ওর টেডি বিয়ারটাকে কোলে বসিয়ে বই পড়ছে। ফেলুদার বই। ঠিক এই সময় ঘরে ঢুকলো জোছনা। হাতে পানিভর্তি বালতি আর ন্যাকড়া। সে ঘর মুছতে এসেছে।
-তুমি এখানে এসেছ কেন ? প্রশ্ন করলো আশফা।
—ঘরটা মুইছে দেই, বললো জোছনা।
-তুমি জানো না, কারও অনুমতি না নিয়ে তার ঘরে ঢুকতে নেই? কেন এসেছো তুমি ? বেরিয়ে যাও। এক্ষুনি বেরিয়ে যাও। চেঁচিয়ে উঠলো আশফা। সে জোছনার হাতের বালতিটা এক ঝটকায় ফেলে দিলো। প্রচণ্ড শব্দে ছুটে এলেন মা।
-এসব কী ? এগুলো কী করে হলো ? প্রশ্ন করলেন মা। জোছনা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ জলে ভেজা।
-ওকে আমার ঘরে কেন পাঠিয়েছ ? ও আমার ঘরে কেন এসেছে ? চিত্কার করে বললো আশফা।
-আহ আশফা! ওরকম বলতে হয় না। ও জানতো না, ভুল করে ফেলেছে। তুমি ওকে সব শিখিয়ে দেবে। তাহলেই ও শিখে যাবে। আর কোনো অসুবিধা হবে না, বললেন মা। আশফা কোনো কথা বললো না। মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে জোছনাকে পানিটা মুছতে বলে চলে গেলেন। রাতে জোছনা বালিশ-কাঁথা নিয়ে আশফার ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
-আসুন আশফা আপু ?
-কী চাও ?
-খালাম্মা কইলো আপনার এইখানে থাকতে।
-আমি তোমাকে এখানে থাকতে দেবো না। আমি আর আপু এখানে শোব।
-আমি মাটিমে ঘুবাম আপু।
-না, তুমি এখানে শোবে না। বললো আশফা।
-ছি. আশফা, মা ওকে এখানে শুতে বলেছে। তুমি নিষেধ করছো কেন? ও তোমাকে বিরক্ত করবে না। শুধু এখানে শোবে। ওকে আসতে দাও। তুমি এসো জোছনা। বললো তাশফা। জোছনা ঘরে ঢুকে এককোণে বালিশ রেখে তাতে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো। গায়ে দিলো ছেঁড়া কাঁথা। আশফা তার টেডি বিয়ারটা নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
-এ কী! তুমি খালি মেঝেতে ঘুমোচ্ছ কেন ? ঠাণ্ডা লাগবে যে। আর ওই ছেঁড়া একটা কাঁথায় শীত মানে নাকি ?
দাঁড়াও
, আমি চাদর বের করে দিচ্ছি। কাঁথাটা মেঝেতে বিছিয়ে চাদরটা গায়ে দাও।
-লাগব না আপু।
-বলেছে তোমাকে লাগবে না।
তাশফা
ওর একটা শাল বের করে জোছনাকে দিল। জোছনা সেটা গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো।
প্রতিদিন
বিকেলে আশফা আর তাশফা ব্যাডমিন্টন খেলে। একদিন ওরা যখন খেলতে গেছে, তখন জোছনা ঘর মুছতে ওদের পড়ার ঘরে ঢুকলো। আশফার পড়ার টেবিলে ক্লাস ফোরের বই। সেগুলো দেখে জোছনা ধীরে ধীরে বইগুলোর দিকে হাত বাড়লো। বাংলা বইটা তুলে নিয়ে পৃষ্ঠা ওল্টাতে লাগলো।
-তুমি আমার বই ধরেছো কেন ? এত্ত বড় সাহস তোমার! দাও আমার বই। জোছনার হাত থেকে বই নিয়ে নিলো আশফা।
-আশফা, ছিঃ মা! একদম এভাবে কথা বলবে না। ও তো শুধু ওগুলো দেখছিলো। কিছু তো আর নষ্ট করেনি, বললেন বাবা।
-জোছনা, এদিকে এসো। কী হয়েছে বলো তো। জিজ্ঞেস করলেন মা।
-খালাম্মা, আমি তো ফোরে পড়তাম, আশফা আপুর মতো বই-খাতা আমারও ছিল। তাই একটু দেখতে ছিলাম।
-তুমি পড়া ছাড়লে কেন ? জানতে চাইলেন বাবা।
-কী করুম কন খালুজান ? দুই বেলে খাওন নাই, মায়ে ইশকুল ছাড়ায় দিয়া ঢাহায় (ঢাকায়) পাঠাইলো। ছলছল চোখে বললো জোছনা।
-তুমি ফোরের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছো ? প্রশ্ন করলো তাশফা।
-দিছি, তয় রিজাল্ট পাওনের আগেই...। দীর্ঘশ্বাস ফেললো জোছনা।
-আগামীবার তোমাকে ক্লাস ফাইভে ভর্তি করে দেব, বললেন বাবা।
জোছনা
প্রায়ই আশফার বই-খাতার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু আশফা কখনই ওকে সেগুলো ধরতে দেয় না। একদিন মা আশফাকে কাছে ডাকলেন।
-আশফা, জানো, বাংলাদেশকে সুন্দর করতে কী দরকার ?
-কী ? 

-সবার লেখাপড়া জানা দরকার। অথচ আমাদের দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ অশিক্ষিত। লেখাপড়ার মূল্য তারা বোঝে না। সেখানে জোছনা সাগ্রহে পড়তে চায়। এটা ভালো কাজ। জানো, ভালো কাজে সাহায্য করলে সওয়াব হয়। আর না করলে গুনাহ হয়। তাহলে তোমার কী করা উচিত ?
আশফা
চুপ করে রইলো।
আজ
১ জানুয়ারি। নতুন বছরের প্রথম দিন। গতকাল বাবা-মা সবার জন্য উপহার কিনে এনেছেন। তবে জোছনার জন্য কিছু কেনা হয়নি। কিন্তু আশফা জোছনার জন্য উপহার রেখেছে। সে বাবাকে বলে দুই সেট বই-খাতা কিনেছে। একসেট তার, আরেক সেট জোছনার। সঙ্গে নিজের এক বাক্স রং পেন্সিল আর একটা পেন্সিল বক্স রেখেছে জোছনার জন্য। এটা জোছনার নববর্ষের উপহার।
আশফা
আর জোছনা এখন একসঙ্গে পড়াশোনা করে, খেলে আর গান গায়।
আজ
যেমন মা ঘরে ঢুকে দেখলেন আশফা আর জোছনা হাতে হাত রেখে গাইছে—
‘আমরা করব জয়, আমরা করব জয়,
আমরা
করব জয় একদিন...।

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

জোছনা


"জোছনা"
লিখেছেনঃ
-------

-
তোমার নাম কী ? বাসার নতুন কাজের মেয়েটির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো আশফা।
-জোছনা। ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলো মেয়েটি।
-তুমি এখন থেকে আমাদের বাসায় থাকবে ?
-জি।
আশফা
আর কোনো প্রশ্ন না করে নিজের ঘরে চলে গেলো।
-শোনো জোছনা, তুমি তাশফা আর আশফার সঙ্গে ওদের ঘরে শোবে। তবে তোমার জিনিসপত্র ওই ঘরটায় রাখবে। আশফা আর ওর বড় বোন তাশফার পড়ার ঘর দেখিয়ে দিলেন মা।
আশফা
ওর টেডি বিয়ারটাকে কোলে বসিয়ে বই পড়ছে। ফেলুদার বই। ঠিক এই সময় ঘরে ঢুকলো জোছনা। হাতে পানিভর্তি বালতি আর ন্যাকড়া। সে ঘর মুছতে এসেছে।
-তুমি এখানে এসেছ কেন ? প্রশ্ন করলো আশফা।
—ঘরটা মুইছে দেই, বললো জোছনা।
-তুমি জানো না, কারও অনুমতি না নিয়ে তার ঘরে ঢুকতে নেই? কেন এসেছো তুমি ? বেরিয়ে যাও। এক্ষুনি বেরিয়ে যাও। চেঁচিয়ে উঠলো আশফা। সে জোছনার হাতের বালতিটা এক ঝটকায় ফেলে দিলো। প্রচণ্ড শব্দে ছুটে এলেন মা।
-এসব কী ? এগুলো কী করে হলো ? প্রশ্ন করলেন মা। জোছনা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ জলে ভেজা।
-ওকে আমার ঘরে কেন পাঠিয়েছ ? ও আমার ঘরে কেন এসেছে ? চিত্কার করে বললো আশফা।
-আহ আশফা! ওরকম বলতে হয় না। ও জানতো না, ভুল করে ফেলেছে। তুমি ওকে সব শিখিয়ে দেবে। তাহলেই ও শিখে যাবে। আর কোনো অসুবিধা হবে না, বললেন মা। আশফা কোনো কথা বললো না। মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে জোছনাকে পানিটা মুছতে বলে চলে গেলেন। রাতে জোছনা বালিশ-কাঁথা নিয়ে আশফার ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
-আসুন আশফা আপু ?
-কী চাও ?
-খালাম্মা কইলো আপনার এইখানে থাকতে।
-আমি তোমাকে এখানে থাকতে দেবো না। আমি আর আপু এখানে শোব।
-আমি মাটিমে ঘুবাম আপু।
-না, তুমি এখানে শোবে না। বললো আশফা।
-ছি. আশফা, মা ওকে এখানে শুতে বলেছে। তুমি নিষেধ করছো কেন? ও তোমাকে বিরক্ত করবে না। শুধু এখানে শোবে। ওকে আসতে দাও। তুমি এসো জোছনা। বললো তাশফা। জোছনা ঘরে ঢুকে এককোণে বালিশ রেখে তাতে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো। গায়ে দিলো ছেঁড়া কাঁথা। আশফা তার টেডি বিয়ারটা নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
-এ কী! তুমি খালি মেঝেতে ঘুমোচ্ছ কেন ? ঠাণ্ডা লাগবে যে। আর ওই ছেঁড়া একটা কাঁথায় শীত মানে নাকি ?
দাঁড়াও
, আমি চাদর বের করে দিচ্ছি। কাঁথাটা মেঝেতে বিছিয়ে চাদরটা গায়ে দাও।
-লাগব না আপু।
-বলেছে তোমাকে লাগবে না।
তাশফা
ওর একটা শাল বের করে জোছনাকে দিল। জোছনা সেটা গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো।
প্রতিদিন
বিকেলে আশফা আর তাশফা ব্যাডমিন্টন খেলে। একদিন ওরা যখন খেলতে গেছে, তখন জোছনা ঘর মুছতে ওদের পড়ার ঘরে ঢুকলো। আশফার পড়ার টেবিলে ক্লাস ফোরের বই। সেগুলো দেখে জোছনা ধীরে ধীরে বইগুলোর দিকে হাত বাড়লো। বাংলা বইটা তুলে নিয়ে পৃষ্ঠা ওল্টাতে লাগলো।
-তুমি আমার বই ধরেছো কেন ? এত্ত বড় সাহস তোমার! দাও আমার বই। জোছনার হাত থেকে বই নিয়ে নিলো আশফা।
-আশফা, ছিঃ মা! একদম এভাবে কথা বলবে না। ও তো শুধু ওগুলো দেখছিলো। কিছু তো আর নষ্ট করেনি, বললেন বাবা।
-জোছনা, এদিকে এসো। কী হয়েছে বলো তো। জিজ্ঞেস করলেন মা।
-খালাম্মা, আমি তো ফোরে পড়তাম, আশফা আপুর মতো বই-খাতা আমারও ছিল। তাই একটু দেখতে ছিলাম।
-তুমি পড়া ছাড়লে কেন ? জানতে চাইলেন বাবা।
-কী করুম কন খালুজান ? দুই বেলে খাওন নাই, মায়ে ইশকুল ছাড়ায় দিয়া ঢাহায় (ঢাকায়) পাঠাইলো। ছলছল চোখে বললো জোছনা।
-তুমি ফোরের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছো ? প্রশ্ন করলো তাশফা।
-দিছি, তয় রিজাল্ট পাওনের আগেই...। দীর্ঘশ্বাস ফেললো জোছনা।
-আগামীবার তোমাকে ক্লাস ফাইভে ভর্তি করে দেব, বললেন বাবা।
জোছনা
প্রায়ই আশফার বই-খাতার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু আশফা কখনই ওকে সেগুলো ধরতে দেয় না। একদিন মা আশফাকে কাছে ডাকলেন।
-আশফা, জানো, বাংলাদেশকে সুন্দর করতে কী দরকার ?
-কী ?
-সবার লেখাপড়া জানা দরকার। অথচ আমাদের দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ অশিক্ষিত। লেখাপড়ার মূল্য তারা বোঝে না। সেখানে জোছনা সাগ্রহে পড়তে চায়। এটা ভালো কাজ। জানো, ভালো কাজে সাহায্য করলে সওয়াব হয়। আর না করলে গুনাহ হয়। তাহলে তোমার কী করা উচিত ?
আশফা
চুপ করে রইলো।
আজ
১ জানুয়ারি। নতুন বছরের প্রথম দিন। গতকাল বাবা-মা সবার জন্য উপহার কিনে এনেছেন। তবে জোছনার জন্য কিছু কেনা হয়নি। কিন্তু আশফা জোছনার জন্য উপহার রেখেছে। সে বাবাকে বলে দুই সেট বই-খাতা কিনেছে। একসেট তার, আরেক সেট জোছনার। সঙ্গে নিজের এক বাক্স রং পেন্সিল আর একটা পেন্সিল বক্স রেখেছে জোছনার জন্য। এটা জোছনার নববর্ষের উপহার।
আশফা
আর জোছনা এখন একসঙ্গে পড়াশোনা করে, খেলে আর গান গায়।
আজ
যেমন মা ঘরে ঢুকে দেখলেন আশফা আর জোছনা হাতে হাত রেখে গাইছে—
‘আমরা করব জয়, আমরা করব জয়,
আমরা
করব জয় একদিন...।

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS