Md. Afrooz Zaman Khan

Afrooz
Md. Afrooz Zaman Khan. Powered by Blogger.
RSS





ফোনটা একটানা বাজছে। একটা মুভি দেখছিলাম। বিরক্তি নিয়ে ফোনটি ধরলাম।
হ্যালো।
—কে বলছেন? ওপাশ থেকে মিষ্টি এক নারী কণ্ঠ ভেসে এল।
আগে বলুন, আপনি কে বলছেন?
—প্রশ্নটি আমি আগে করেছি। নারী কণ্ঠের উত্তর।
তো কি হয়েছে। ফোনতো আপনি করেছেন। আপনি কাকে ফোন করেছেন, জানেন না? একটু রাগী গলায় উত্তর দিলাম।
—আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? নারী কণ্ঠ বলল।

লাইনটা কেটে দিলাম। আজাইরা কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। প্লে বাটনে চাপ দিয়ে মুভি দেখা শুরু করতেই আবার ফোন বেজে উঠল।
হ্যালো।
—আপনি তো চরম ছোটলোক। লাইন কাটলেন কেন? আবার সেই নারী কণ্ঠ।


ভদ্রভাবে সম্মান দিয়ে কথা বলুন।
—আপনি কি ভদ্রলোক যে আপনার সাথে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে। অভদ্র, ছোটলোক।
রাগটাকে বহু কষ্টে দমন করলাম। কোনো কড়া কথা না বলে লাইনটা আবার কেটে দিলাম। পনেরো সেকেন্ডের মধ্যে আবার ফোন। ফোনটি রিসিভ করলাম কিন্তু কোনো কিছু না বলে চুপ করে থাকলাম।
আবার সেই নারী কণ্ঠ, প্লিজ লাইনটা কাটবেন না। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
আপনিই বলছেন আমি অভদ্র, ছোটলোক। তাহলে বারবার ফোন করছেন কেন? বললাম আমি।
—সরি। আসলে আমার মাথা ঠিক নাই। তাই কি বলতে কি বলে ফেলেছি, কিছু মনে করবেন না।
ওকে কিছু মনে করলাম না। এখন বলুন আপনি কে এবং কাকে চাচ্ছেন?
—আমার নাম কবিতা। আর আমি আসলে জানি না আমি কাকে চাচ্ছি।
মানে কি? বুঝলাম না।
—আসলে আমার মনটা খারাপ। খুব খারাপ। ভাবলাম কারও সাথে কথা বলি, তাহলে হয়তো ভালো লাগবে। তাই আপনাকে ফোন করেছি।
আমি কবিতা নামে কাউকে চিনি না। আপনি আমার ফোন নম্বর পেলেন কি করে?
—আমি বিভিন্ন সংখ্যা দিয়ে সাতটি ফোন নম্বর বানিয়েছি। তারপর লটারি করে তিনটি নম্বর নির্বাচন করেছি। ওই তিনটি নম্বরের দ্বিতীয়টা আপনার নম্বর।
তা প্রথম নম্বরে ফোন না করে আমাকে কেন?
—প্রথম নম্বরে করেছিলাম। কেউ ধরেনি। তাই আপনাকে করলাম। আপনি না ধরলে পরের নম্বরে করতাম।
ভেরি গুড। মনে করেন আমিও ধরিনি। পরেরটাকে ট্রাই করুন।
—আপনিতো ধরেছেন। আমি কেন ওই রকম ভাবতে যাব।
কারণ আমি অপরিচিত কারও সাথে কথা বলি না।
—হ্যালো,আপনি কি ভেবেছেন আমি মলম পার্টির সদস্য?
আমি কি করে জানব আপনি কে? আর তা ছাড়া আমি একটু ব্যস্ত আছি। আমি ফোনটা রাখতে যাচ্ছি।
—প্লিজ লাইনটা কাটবেন না। আমি আমার জীবনের শেষ কয়েকটি মুহূর্ত আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছি।
শেষ মুহূর্ত মানে? বুঝলাম না।
—আপনার সাথে কথা বলা শেষ করে আমি আত্মহত্যা করব।
ভেরি গুড। সিদ্ধান্ত কি ফাইনাল?
—হান্ড্রেড পার্সেন্ট।

তাহলে দেরি করা ঠিক হবে না। এখন বেলা ১২টা। আপনি তাড়াতাড়ি আত্মহত্যার কাজটা সেরে ফেলুন। আপনি যত দ্রুত শুভ কাজটা শেষ করবেন, ততই আপনার আপনজনদের উপকার হবে।
—আপনি কি ফাজলামি করছেন? আমি কিন্তু সিরিয়াস।
আমিও সিরিয়াস। কারণ দিনের আলো থাকতে থাকতেই দাফন কাফন শেষ করতে হলে আপনার আর সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।
—এত তাড়াতাড়ি দাফন করতে হবে কেন? কাল বা পরশু করবে।
আমার তা মনে হয় না। আপনার এখন যতটা মূল্য আছে সবার কাছে, সেটা আপনার মৃত্যুর পর থাকবে বলে মনে হয় না। আসলে কারও বেলাই থাকে না। লাশকে কেউ ঘরে বেশিক্ষণ রাখতে চায় না।
—আমার বাবা-মা আমাকে খুব ভালোবাসে। তারা এমন করবে না।
আপনার ধারণা ভুল। আমার কথা বিশ্বাস না হলে, আপনার বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করুন। তার ওপর আপনি আবার আত্মহত্যা করছেন। হতে পারে আপনার বাবা-মা লোক লজ্জার ভয়ে হয়তো আত্মীয়স্বজনদেরও খবর দেবে না। চুপি চুপি দ্রুত দাফন শেষ করে ফেলবে। এনিওয়ে গুডলাক। হ্যাপি আত্মহত্যা। আমি এখন ফোনটি রাখব। আমি একটা মুভি দেখছিলাম। খুবই মজার একটা কমেডি মুভি। আপনার সাথে কথা বলার কারণে আমি মুভিটি শেষ করতে পারছি না।
—আপনি কি মানুষ!
আমিতো তাই জানি। কেন বলুন তো।
—একটা মেয়ে মারা যাচ্ছে সেটার কোনো মূল্য নেই আপনার কাছে? আপনার কাছে মুভি দেখাটাই বড় হলো! একবার জানতেও চাইলেন না, আমি কেন আত্মহত্যা করছি।
আমি কখনো কাউকে আগ বাড়িয়ে প্রশ্ন করি না। আপনার ইচ্ছে হলে আপনি বলতে পারেন। তবে যা বলবেন সংক্ষেপে। কারণ বউ শপিংয়ে গেছে। যে কোনো সময় চলে আসতে পারে। এসে যদি দেখে আমি কোনো মেয়ের সাথে কথা বলছি আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থন বা আত্মহত্যার সুযোগও দেবে না। সরাসরি খুন করে ফেলবে। সেই খুন করতে কোন পদ্ধতি অবলম্বন করবে সেটা বলা মুশকিল। তবে সেটা যে কষ্টদায়ক হবে সেটা নিশ্চিত।
আসলে আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, তাই বউয়ের ভয় দেখিয়ে ফোনটা রাখতে চাচ্ছি। প্রকৃতপক্ষে আমি ব্যাচেলর।
নারী কণ্ঠ বলল, আপনি আপনার স্ত্রীকে এত ভয় পান?
সব বুদ্ধিমান স্বামীই স্ত্রীকে ভয় পায়। আমার কথা বাদ দেন। আপনার কথা তাড়াতাড়ি শেষ করেন।
—আমার বয়ফ্রেন্ড আমার সবচেয়ে কাছের বান্ধবীর সাথে প্রেম করছে। যেটা আমি মানতে পারছি না। গতকাল ঘটনাটা জানার পর থেকেই কান্না করছি। কাল সারা রাত আমি কেঁদেছি। আর কান্না করতে ইচ্ছে করছে না। আমি এখন আত্মহত্যা করব। আমি মারা গেলে ও বুঝবে আমি কি ছিলাম। তবে বাবা-মার জন্য কষ্ট লাগছে। আমি তাদের একমাত্র সন্তান।
আপনার কাহিনিটা আমার পছন্দ হয়েছে। ভাবছি একটা গল্প লিখব। কিন্তু আপনি যদি আত্মহত্যা না করেন তাহলে গল্পটা জমবে না। তাই আপনাকে অবশ্যই আত্মহত্যা করতে হবে। আমি গল্পটা পত্রিকায় পাঠাব। যদি তারা ছাপায় তাহলে মরেও আপনি ভাগ্যবতী। কারণ আপনি রাতারাতি ফেমাস হয়ে যাবেন।
—আপনি আমার সাথে ফাজলামি করছেন। ঠিক না?
জি, ঠিক।
—কিন্তু কেন?
আপনার কণ্ঠ শুনে মনে হচ্ছে আপনার বয়স ষোলোর বেশি হবে না।


—আমার বয়স ১৫।
আপনার বয়ফ্রেন্ড, সরি এক্স বয়ফ্রেন্ড খুবই বুদ্ধিমান। সে বুঝতে পেরেছে আপনি একটা গাধা টাইপ মেয়ে। গাধা টাইপ মেয়েদের একটা সময় পর বিরক্তিকর মনে হয়। তাই সে আগেভাগেই কেটে পড়েছে। বাদ দেন এসব ভেবে এখন আর কোনো লাভ নেই। অতএব সময় নষ্ট না করে আত্মহত্যার কাজটি দ্রুত সেরে ফেলুন।
—কোথায় আপনি আমাকে আত্মহত্যা করতে নিষেধ করবেন, তা না। বারবার আমাকে আত্মহত্যার কথা বলছেন, কেন?
বারবার আত্মহত্যার কথা বলছি, কারণ দুনিয়ায় গাধার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। দু-একটা কমলে তো ভালোই হয়।
—আপনি আমাকে গাধা বলছেন কেন? আপনি জানেন আমি কত ভালো স্টুডেন্ট?
না, জানি না। তবে আপনি যে মস্ত বড় একটা গাধা, সে ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আর আপনি শুধু গাধাই নন, আপনি একজন বড় মাপের বেইমানও। মীরজাফরের নাম শুনেছেন? আপনি হচ্ছেন একজন মহিলা মীরজাফর।
—মানে কি? খারাপ ব্যবহার করছেন কেন?
আমি মোটেও খারাপ ব্যবহার করছি না। গাধা বলছি কারণ আপনি একজন প্রতারক ও বিশ্বাসঘাতক প্রেমিকের জন্য আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন। যে হয়তো কখনই আপনাকে ভালোবাসেনি। আর বেইমান বলছি এই কারণে, যে বাবা-মা আপনাকে এত ভালোবাসা এবং আদর যত্ন দিয়ে বড় করেছে, তাদের কথা না ভেবেই আত্মহত্যার করতে যাচ্ছেন। অথচ আপনি তাদের একমাত্র অবলম্বন।
—তাহলে কি আপনি আমাকে আত্মহত্যা করতে নিষেধ করছেন?
না তা করছি না। আমি কারও পেটে লাথি মারতে চাই না।
—মানে কি?
দেখুন মাটির নিচে যে সব পোকা মাকড় আছে, তারা অপেক্ষায় আছে কখন আপনাকে পাবে। আরাম করে খাবে। এখন যদি আপনি আত্মহত্যা না করেন তবে তাদের পেটে লাথি মারা হবে। সেটা কি ঠিক হবে?
—ইস! আমার গা ঘিনঘিন করছে, বমি আসছে। ওমা আমিতো এগুলো ভাবিনি। আত্মহত্যা ক্যানসেল।
সেটা কি ঠিক হবে। আপনার এক্স বয়ফ্রেন্ডের জন্য খারাপ লাগবে না?
—না এখন আর খারাপ লাগছে না। তবে রাগ হচ্ছে হারামজাদার ওপর। বলেন তো কি করা যায়?
রাগ কমার জন্য একটা কাজ করতে পারেন। আপনার বয়ফ্রেন্ড এখন যার সঙ্গে প্রেম করছে মানে আপনার বান্ধবীর সামনে বয়ফ্রেন্ডকে কষে থাপ্পড় মারবেন। তারপর আপনার বান্ধবীর হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে বলবেন, গো টু হেল। পারবেন না?
—অবশ্যই পারব। প্ল্যানটা আমার পছন্দ হয়েছে। আচ্ছা থাপ্পড় কি একটা দেব?
না। মিনিমাম দুইটা।
—দুই গালে দুইটা দিব না এক গালে দুইটা দিব?
গণনার কি দরকার। যতক্ষণ ভালো লাগে মারবেন।
—থাপ্পড় মারব ভাবতেই মনটা হালকা লাগছে। আচ্ছা এখন যেয়ে মেরে আসি।
তা যাওয়া যায়। তবে পরে মারলেও সমস্যা নাই। কিন্তু থাপ্পড়টা মারতে হবে আপনার বান্ধবীর সামনে।
—অবশ্যই। বান্ধবীর সামনেই মারব। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আচ্ছা আপনি কি আসলেই বিবাহিত?
শুনুন আমি কি সেটা ইমপর্টেন্ট না। আর যেহেতু আত্মহত্যা ক্যানসেল সেহেতু আর কথা বাড়িয়ে লাভ নাই। আমি এখন ফোন রাখব। আমাকে মুভিটি শেষ করতে হবে।
—আমি কি আপনার ফেসবুক আইডিটা পেতে পারি, প্লিজ। একটা করুণ আবদারের সুর নারী কণ্ঠে।
না, পারেন না। আর শুনুন আজকের পর আমাকে আর ফোন করবেন না। শুধু আমি না অপরিচিত কারও সাথেই কথা বলবেন না। এটা নিরাপদ না। আল্লাহ হাফেজ।
কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে লাইনটা কেটে দিলাম। আবার ফোন বাজছে। এই মেয়েতো ভীষণ জ্বালাতন করছে। সঙ্গে সঙ্গে ফোনের পাওয়ার অফ করে দিলাম। যাতে আর ফোন না করতে পারে। কারণ আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। অনেক কাজ। বুয়া আসেনি রান্না করতে হবে। ব্যাচেলর জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্ট রান্না করা। একটা বউ থাকলে মন্দ হতো না।
বি. দ্র. জীবন একটাই ও সেটা অনেক মূল্যবান। একে যার তার কারণে নষ্ট করা উচিত না। অন্যকে ভালোবাসার আগে নিজেকে ভালোবাসুন। জীবনটাকে উপভোগ করুন। পৃথিবীটা অনেক অনেক অনেক সুন্দর।






  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

কিছু তরুণের গল্প শুনুন





‘ভিন্নভাবে সক্ষম’ তরুণদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার জন্য কাজ করেন স্বর্ণ ময়ী সরকার (বাঁ থেকে প্রথম)। ছবি: সংগৃহীত 

পরীক্ষায় ভালো নম্বর নয়, কিংবা নয় ভালো একটা চাকরি, দেশের অনেক তরুণই ছুটছেন আনন্দের পেছনে। কেউ সহযোগিতা করছেন সমাজের বিশেষ কিছু মানুষকে। কেউ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিচ্ছেন পাঠাগার আন্দোলন। আবার কেউবা শুধু স্বপ্ন দেখছেন মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর। ঈদের এই ছুটিতে আনন্দ-সন্ধানী এমন কিছু তরুণের গল্প শুনুন।
গল্পটা যখন আমরা শুনছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল, এটা তো উপন্যাসের কাহিনি! মো. ইমাম হোসাইন নামের যে তরুণ এখন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ প্রথম বর্ষে পড়ছেন, গল্পটা তাঁরই। ২০০৬ সালের কথা। আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে স্কুলের ছুটিতে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ইমাম কুমিল্লা থেকে গিয়েছিলেন চট্টগ্রামে। কাজ করে কটা টাকা আয় করবেন, এটাই ছিল আশা। ষোলশহরে একটা মেসে গাদাগাদি করে থাকতেন চার বন্ধু মিলে। কাজ করতেন ১২০ টাকা বেতনে। একসময় ধীরে ধীরে তিন বন্ধু তাঁকে ছেড়ে চলে গেলেন। বেতনের অল্প কটা টাকায় মেসে থাকারও উপায় নেই তখন। শেষমেশ ষোলশহর রেলজংশনের যাত্রী ছাউনি আর ট্রেনের বগিতেই রাত কাটাতে শুরু করলেন ইমাম। তারপরও তাঁকে কাজ করে যেতে হবে, উপায় নেই। একসময় আরও বেশি বেতনে আরেকটা চাকরি জুটিয়ে নিলেন। মাস শেষে হাতে যখন বেশ কিছু টাকা জমে গেল, তখন এল বাড়ি ফেরার পালা। বাড়ি ফেরার আগে ইমাম কী করেছিলেন জানেন? বই কিনেছিলেন। গল্পের বই।
সেই কিশোর ইমাম সে বছর অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তিও পেয়েছিলেন। এসএসসিতে পেয়েছিলেন জিপিএ-ফাইভ। অত কিছুর পরও একটা নেশা তাঁর কখনো কাটেনি—বই পড়া। কেবল বই পড়েই বসে থাকেননি, বই জোগাড় করে বন্ধু-এলাকাবাসীকেও পড়তে দিয়েছেন। এভাবে চলতে চলতে ইমাম আজ দেশের ৪৩টি জেলায় ছড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর ‘পাঠাগার আন্দোলন’। কুমিল্লা জেলায় আছে তাঁর হাতে প্রতিষ্ঠিত ছয়টি পাঠাগার। একটি করে পাঠাগার গড়ে তুলেছেন নরসিংদী, দিনাজপুর ও চাঁদপুরে। এত যে কষ্ট করেছেন, তারপরও কেন পাঠাগার আন্দোলন বা বই পড়ার এই উদ্যোগের পেছনে লেগে ছিলেন আপনি? প্রশ্নটা শুনে ফোনের ওপাশ থেকে ইমাম বললেন, ‘বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে। বই না পড়লে তো আমরা আলোকিত হতে পারব না। কেউ যখন বই পড়ে, তখন সেটা আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য। শুধু ভালো রেজাল্ট করেই তো আর হয় না। মনের আনন্দের জন্য কিছু করতে হয়।’

 নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার কিশোর–তরুণদের নিয়ে সমাজ সচেতনমূলক কাজ করেন কাঞ্জিলাল রায় (ইনসেটে)। ছবি: সংগৃহীত

আনন্দ তুই কোথায় থাকিস বল...
ইমামের কথা শুনে কবি আহসান হাবীবের ‘আনন্দ’ কবিতাটির কথা মনে পড়ে আমাদের। ‘আনন্দ রে আনন্দ তুই কোথায় থাকিস বল...’। আনন্দ কেবল পরীক্ষার ভালো ফলেই নেই। দারুণ বেতনের একটা চাকরিতেই আনন্দ তার সীমা বেঁধে রাখতে পারেনি। তাই তো তরুণেরা প্রাত্যহিক কাজকর্মের বাইরেও অনেক কিছুই করেন। কিছু না করতে পারলেও অন্তত অনেক স্বপ্ন দেখেন। যেমন ধরা যাক নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী তানভীর হায়দার ও তাঁর বন্ধুদের কথা। ‘ব্রাইটার স্মাইল’ নামে একটা সংগঠন আছে তাঁদের। তানভীরের ভাষায়, ‘সেই অর্থে এখনো তেমন কিছুই করতে পারিনি।’ (তাই নিজেদের কাজের ছবি প্রকাশেও আগ্রহী নন তাঁরা)। কিন্তু কিছু একটা করবেন বলে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে বন্ধুরা মিলে প্রতি মাসে প্রত্যেকে ৫০০ টাকা করে জমাচ্ছেন। যখন প্রশ্ন করলাম, ‘কী হবে এই টাকা দিয়ে?’ তানভীর বললেন তাঁদের স্বপ্নের কথা, ‘কিছু একটা করব এটা জানি। বিশেষ করে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আসা মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা আমাদের। এর মাঝে এই জমানো টাকা নিয়ে এক ছোট ভাইয়ের বন্ধুর মায়ের অসুস্থতার সময় পাশে দাঁড়িয়েছি। সম্প্রতি সাহায্য পাঠিয়েছি কুড়িগ্রামের বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য।’

স্বপ্নময়ী স্বর্ণ ময়ী
বন্যাদুর্গত মানুষের প্রসঙ্গে আরেকটা গল্প বলছিলেন ঢাকা সিটি কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করা স্বর্ণ ময়ী সরকার, ‘২০০৭ সালের কথা। তখন আমি নাটোরে ছিলাম। টিভিতে দেখছিলাম, আমাদের এলাকায় বন্যার্ত মানুষের জন্য ত্রাণ দেওয়া হবে। তখনই ঠিক করি, আমিও যাব ত্রাণ দিতে। মাকে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে ত্রাণ দিতে গিয়েছিলাম এক বন্ধুকে নিয়ে। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম, এমন কিছু করব যাতে মানুষের মুখে হাসি ফোটে।’ স্বর্ণ ময়ীর স্বপ্নটা দানা বাঁধতে শুরু করল যখন তিনি ঢাকায় এলেন। সঙ্গী হিসেবে পেয়ে গেলেন নাতাশা ইশরাত কবিরকে। দুজনে মিলে গড়ে তুললেন Bridge Foundation (বাংলাদেশ রিফর্ম ইনিশিয়েটিভ ফর ডেভেলপমেন্ট গভর্নেন্স অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট ফাউন্ডেশন)।
কী তাঁদের কাজ? স্বর্ণ ময়ীর ভাষায়, ‘ভিন্নভাবে সক্ষম তরুণদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার জন্য কাজ করি আমরা। নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিই তাঁদের। প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের প্রমাণও করছেন তাঁরা। আসলে তাঁরা সবাই প্রতিভাবান। দরকার শুধু একটু সহযোগিতা। আমরা সেটাই করছি। প্রতি শুক্রবার আমরা তাঁদের নিয়ে বসি। এটা যে কত আনন্দের, তা বলে বোঝাতে পারব না।’
এমন আনন্দের খোঁজ যারা পেতে চায়, কিন্তু সুযোগ পায় না, তাদের কী করা উচিত? স্বর্ণ ময়ী এক কথায় জবাব দিলেন, ‘ইচ্ছাটুকু লাগবে।’


‘চলো পাল্টাই’

কোন ইচ্ছা যে কখন কীভাবে হয়, এটাও বলা মুশকিল! যেমনটা হয়েছিল কাঞ্জিলাল রায় ও তাঁর বন্ধুদের বেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী কাঞ্জিলাল। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা থেকে এসেছেন তিনি। বলছিলেন বছর তিনেক আগের ইচ্ছাটার কথা, ‘আমাদের ডিমলা ইসলামিয়া কলেজের সামনে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ ক্লাস সিক্স পড়ুয়া এক ছোট ভাই এসে খুব উদ্ধত আচরণ করে বসল। তার আগেও অমনটা করেছিল সে। তখনই নাকি সে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত! তাই তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, “পলিটিকসের ইংরেজি বানানটা বলো তো।” রাজনীতিবিদ ছোট ভাই নিরুত্তর। এভাবে দেখলাম, কেবল ওই ছোট ভাই-ই না, আরও অনেকেই ছোটখাটো অনেক কিছু জানে না। তাই ঠিক তখনই আমাদের মনে হলো, আমরা যে পড়াশোনা করছি, এটার মানে কী? আর এটা যদি অন্যদের বোঝাতে না পারি, তাহলে এই পড়াশোনারই-বা মানে কী?’
কঠিন প্রশ্ন নিঃসন্দেহে। কঠিন প্রশ্নের সমাধানও বের করার চেষ্টা করলেন কাঞ্জিলাল ও তাঁর বন্ধুরা। এসএসসি পরীক্ষার পর হাত-পা ছড়ানো অবস্থা। সবাই মিলে লাগলেন কিশোর-তরুণদের পড়াশোনার বাইরেও আরও কিছু করার ব্যাপারে উৎসাহী করার কাজে। শুরুতে এলাকার বড়দের কেউ কেউ ব্যাপারটা ভালো চোখে দেখলেন না। তারপরও দমে গেলেন না কাঞ্জিলালরা। আস্তে-ধীরে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতা, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, বাল্যবিবাহবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে নাট্যচর্চার মতো কাজও শুরু করে দিলেন। সংগঠনটির নাম দিলেন ‘চলো পাল্টাই’। গোটা এলাকার কিশোর-তরুণেরা নড়েচড়ে বসল। পরিবর্তনের একটা হাওয়া বয়ে গেল ভেতরে-ভেতরে। কীভাবে সেটা বুঝলেন? কাঞ্জিলালের ব্যাখ্যা, ‘আমাদের এলাকা থেকে একই বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিনজনের বেশি কখনো হয়নি। কিন্তু ওই কার্যক্রমগুলো শুরু হওয়ার পর চিত্রটা পাল্টে গেল। আমাদের ব্যাচ থেকেই সাতজন চান্স পেয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়া অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও চান্স পেয়েছিল ৩২ জন।’
বিতর্ক-নাটক-বৃক্ষরোপণ বা সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে পরীক্ষার ফলের সম্পর্ক কী? কাঞ্জিলাল যেন এই প্রশ্নটার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন, ‘শুধু পাঠ্যপুস্তক পড়েই যে ভালো শিক্ষার্থী হওয়া যায় না; এটা অনেকেই জানেন। কিন্তু কী করলে সত্যিকারের ভালো শিক্ষার্থী হওয়া যাবে, সেটা সবাই জানেন না। আমরা বিশ্বাস করি, আপনি ভালো কাজ করলেও ২৪ ঘণ্টায় দিন হবে, খারাপ কাজ করলেও ২৪ ঘণ্টায় দিন হবে। তাই আমরা চেয়েছিলাম, এই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সবাই যেন ভালো কাজ করে। ভালো কাজ করলে এমনিতেই যে কেউ ভালো শিক্ষার্থী হয়ে উঠতে পারে।’
মজার বিষয় হলো, যেসব অভিভাবক শুরুর দিকে কাঞ্জিলালদের কাজকর্ম ভালোভাবে নেননি, তাঁরাই এখন তাঁদের সন্তানদের বলেন, বড় ভাইদের মতো হও।

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

মাদিবার কাছে করা প্রতিজ্ঞা আমি রেখেছি



বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী টিভি ব্যক্তিত্ব অপরাহ্ উইনফ্রে। টানা ২৫ বছর যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক টিভি চ্যানেলে প্রচারিত ‘দ্য অপরাহ্ উইনফ্রে শো’ সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করেছেন তিনি। গত ১৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের জনসন সি. স্মিথ ইউনিভার্সিটির ১৪৪তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বক্তা ছিলেন এই উপস্থাপক।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসে মানুষ বলে, ‘আমি রোমাঞ্চিত। আনন্দিত।’ আজকে আমার অনুভূতিটা তার চেয়েও বেশি কিছু। কেন? বলছি।
২০০২ সালে নেলসন ম্যান্ডেলার (মাদিবা) বাড়ির অতিথি হওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। প্রায় ১০ দিন সেখানে ছিলাম। সে সময় একবার মাদিবার সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল, কী করলে পৃথিবী থেকে দারিদ্র্য দূর হতে পারে। বিশেষ করে, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দারিদ্র্য মুছে ফেলতে হলে কী করণীয়, সেটাই তিনি জানতে চাইছিলেন। আমি বললাম, আমার মনে হয়, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে একমাত্র শক্তি হতে পারে শিক্ষা। সঙ্গে এ-ও জানালাম, আমি দক্ষিণ আফ্রিকায় মেয়েদের জন্য একটা স্কুল করতে চাই।
তিনি আমাকে পথ বাতলে দিলেন। আমার স্কুল গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হলো। আমি মেয়েদের সেই স্বপ্ন, সেই আশাটা দিতে চেয়েছিলাম, যেটা একদিন আমি পেয়েছি। আমি মেয়েদের একটা সুযোগ দিতে চেয়েছি। কারণ তুমি কাউকে যত বড় সুযোগ দেবে, তার কাছে তোমার প্রত্যাশাটাও তত বড় হবে। টাকা দিয়ে তুমি কারও জীবন বদলাতে পারবে না। শিক্ষার মাধ্যমে বরং তুমি কাউকে সেই সুযোগটা করে দিতে পারো, যেন সে নিজেই নিজের জীবন বদলাতে পারে।
অতএব, কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আমি খুঁজতে শুরু করলাম, দক্ষিণ আফ্রিকার কোন মেয়েদের মাঝে ‘একটা কিছু’ আছে। নয়টা প্রদেশ ঘুরে আমি নিজে প্রায় পাঁচ শর বেশি মেয়ের সাক্ষাৎকার নিলাম, সেই ‘একটা কিছু’র খোঁজে। কী সেটা? ব্যাপারটা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এভাবে বলা যায়, ‘যা-ই হোক না কেন, আমি পারব’। এই আত্মবিশ্বাস আর জেদটাই আমরা মেয়েদের চোখে খুঁজছিলাম। এমন কাউকে খুঁজছিলাম, যে নিজের ভাগ্য বদলাবে, পৃথিবীকে নেতৃত্ব দেবে।
আজ দেখো। সেই স্কুলের (অপরাহ্ উইনফ্রে লিডারশিপ একাডেমি ফর গার্লস) তিনটি মেয়ে তোমাদের ইউনিভার্সিটির ছাত্রী। তিনজনের মধ্যে দুজন, যাদের আমি আমার মেয়ে বলি, আজ তোমাদের সঙ্গে স্নাতকের টুপি মাথায় দিয়ে বসে আছে! তাই কোনো কিছুই আমাকে আজ এখানে আসা থেকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। আজ মনে হচ্ছে, মাদিবার কাছে যে প্রতিজ্ঞা আমি করেছিলাম, সেটা রাখতে পেরেছি। আমি ভীষণ খুশি।
আমার মা-বাবার বিয়ে হয়নি। এমনকি তাঁরা মাত্র একবার মিলিত হয়েছিলেন। সুতরাং আমার জন্ম হোক সেটা কেউ চায়নি। এমনকি আমার মা-ও তাঁর মাতৃত্বের লক্ষণ লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। লোকে আমাকে ‘পিতৃপরিচয়হীন’ বলত। বুঝতেই পারছ, ১৯৫৪ সালের মিসিসিপিতে এই শব্দটা কতখানি লজ্জা বহন করত। জন্মের পর অনেকটা সময় এই লজ্জা আমাকে ঘিরে রেখেছিল। যখন আমার বয়স চার কি পাঁচ, তখন প্রথম ভেতর থেকে একটা অন্য রকম ডাক শুনতে পেলাম। এমন এক মিসিসিপিতে আমি বড় হয়েছি, যেখানে বিদ্যুৎ, পানি, টেলিভিশন কিছুই ছিল না। একদিন আমার নানি রোদে কাপড় দিচ্ছিলেন। আমি বারান্দায় বসে খেলছিলাম আর নানির কাজ দেখছিলাম। নানি বললেন, ‘আমাকে দেখে শেখো। একদিন তোমাকেও করতে হবে।’ সেদিনই প্রথম আমার ভেতর কে যেন বলে উঠল, ‘উঁহু, আমি তো তোমার মতো হব না!’ আমি বলেছি, আমার বয়স মাত্র চার কি পাঁচ। সে বয়সেই কেন যেন মনে হচ্ছিল, জীবনে আরও বড় কিছু করার আছে। হওয়ার .আছে। আজ পর্যন্ত ভেতরের সেই কণ্ঠস্বরটাই আমাকে এত দূর এনেছে। আমি তোমাদেরও এই উপদেশই দেব, হৃদয়ের ডাকে সাড়া দাও। প্রত্যেক মানুষের ভেতরে এমন একটা কণ্ঠস্বর আছে, যেটা তাকে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বলে। যদি আর সবাই ভুল কাজটাও করে, তুমি অন্যের কথা না শুনে নিজের ভেতরের সেই কণ্ঠস্বরটা শোনো।


ইংরেজি থেকে অনুবাদ .

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ডে একসঙ্গে বেয়ার গ্রিলস-ওবামা




সম্প্রতি একটি টিভি শোতে দেখা গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে। 'ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড' খ্যাত জনপ্রিয় সার্ভাইভাল স্পেশালিষ্ট বেয়ার গ্রিলসের সঙ্গে 'রানিং ওয়াইল্ড উইথ বেয়ার গ্রিলস' নামক শোতে দেখা গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে।

ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ ওবামার উপস্থিতিতে বিশেষ এই পর্বটি প্রচারিত হয় ডিসকভারি চ্যানেলে। তবে এটি ধারণ করা হয়েছিল সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে। Conference on Global Leadership in the Arctic এ অংশ নেয়ার জন্য ওবামা তখন আলাস্কাতেই ছিল। বেয়ার জানান, এ পর্বে মানুষ প্রেসিডেন্ট ওবামার এমন অনেক কিছুই জানতে পারবে যা তারা আগে জানতেন না।

এক সংবাদ সম্মেলনে বেয়ার বলেন, 'আসলে প্রেসিডেন্ট সবসময় এতোই নিরাপত্তার মধ্যে থাকেন যে অনেকের কাছেই মনে হয় তিনি বন্দী অবস্থায় আছেন'। স্বাধীনভাবে ঘোরা বা কিছু করাটা তার জন্য অত্যন্ত কঠিন। বন্য পরিবেশে এই অ্যাডভেঞ্চার তাকে সেই সুযোগটা করে দিয়েছে’।

তবে বিশ্বের সবচাইতে ক্ষমতাধর দেশের প্রেসিডেন্টকে নিয়ে এই পর্ব করতে গিয়ে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়েছে এই টিভি শো নির্মাতাদেরকে। হেলিকপ্টার, স্নাইপার আর সিক্রেট সার্ভিসের কমপক্ষে ৫০ জন সবসময় সাথে ছিলেন।

এমনকি বন্য পরিবেশে ওবামা কি খাবেন আর পান করবেন তা নিয়েও ছিল কড়াকড়ি। কিন্তু তারপরও ওবামা এক ভালুকের আধখাওয়া স্যালমন মাছ খেয়েছেন, বেয়ারের বোতল থেকে পানিও পান করেছেন।

অনুষ্ঠানের মাঝখানে এই দুজন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। বেয়ারের কাছে ওবামার অন্যতম জিজ্ঞাসা ছিল নিজের মূত্র খেয়ে তার অনুভূতি কেমন হয় সে ব্যাপারে। বেয়ার মজা করে বললেন, 'প্রেসিডেন্ট সাহেব কিছুটা আতঙ্কে ছিলেন যে তাকেও এই কাজ করতে হয় কিনা'।

বিশ্বের মানুষের কাছে জনিপ্রয় এই দুই ব্যক্তিত্ব শুটিংয়ের নিজেদের পরিবার এবং সন্তান নিয়েও কথা বলেন।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল, তিনি নিজের চোখে আসলে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব দেখতে চেয়েছিলেন। ক্রমাগত পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ার ফলে আলাস্কার বিভিন্ন অংশের বরফ গলে যাওয়ার চিত্র দেখতে পান তিনি।

একটি জায়গায় ওবামাকে নিয়ে বেয়ার দেখান যে কয়েক মাস আগেও যেখানে প্রচুর বরফ ছিল তার একটা বিশাল অংশ গলে গিয়েছে।

একজন বাবা হিসেবে এবং পৃথিবীর অন্যতম দায়িত্বশীল একজন ব্যক্তি হিসেবে ওবামা মনে করেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হলেও আমাদের এই পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

বারবার পড়ে গেলেও, বারবার উঠে দাঁড়াও




বেয়ার গ্রিলস দুঃসাহসী এক অভিযাত্রীর নাম। ডিসকভারি চ্যানেলের ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হিসেবেই তিনি বহুল পরিচিত। যুক্তরাজ্যে তিনি সবচেয়ে কম বয়সে প্রধান স্কাউট স্বীকৃতি পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জিকিউ সাময়িকীতে তিনি লিখেছেন, কীভাবে বাঁধা পেরোতে হয়
আমার মনে আছে, তখন আমি বেশ ছোট। প্রচণ্ড শীতের সকালে বাবা আমাকে সমুদ্রের পাড়ে ঘোড়ায় চড়াতে নিয়ে গেলেন। প্রথমে আমাদের ঘোড়া খানিকটা দুলকি চালে হাঁটল, এরপর একসময় দৌঁড়াতে শুরু করল। ঘোড়ার গতির কারণে আমি কিছুক্ষণ পরপর ঘোড়ায় বাঁধা বসার আসন থেকে শূন্যে উঠে যাচ্ছিলাম। বেশ লাগছিল। মনে হচ্ছিল আমি উড়ছি। কিন্তু হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমি নিজেকে ঠাণ্ডা, নরম বালুর মধ্যে আবিষ্কার করলাম। বাবা মুখে বড় একটা হাসির রেখা টেনে হাততালি দিতে দিতে আমার কাছে এগিয়ে এলেন। বললেন, ‘তুমি কতটা ভালো অশ্বারোহী, সেটা মূল কথা নয়। বরং কতবার পড়ে গিয়ে তুমি কতবার আবার ঘোড়ার পিঠে উঠে বসেছ, সে সংখ্যাটাই বড়। অশ্বারোহন আর জীবন—দুটো ক্ষেত্রেই এটা তোমার কাজে আসবে।’
বাবা সেদিন আমাকে জীবনের মূল মন্ত্রটাই ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি জানতেন, যদি কেউ প্রথম একটা কিছু শুরু করে, তবে কাজের কোনো এক মোড়ে এসে সে ওই নরম বালুতে নিজেকে আবিষ্কার করবেই। এটাকে বরং সুলক্ষণ হিসেবেই ধরে নেওয়া উচিত। অর্থাৎ তুমি যা করছ, তা নিশ্চয়ই অনেক বড় কিছু। কেননা, একটা সহজ পথ তোমাকে কখনো বড় কিংবা চমকপ্রদ কিছুর কাছে নিয়ে যাবে না। বরং একটা ভয়ানক পথই অনেক অসাধারণ কিছু উপহার দিতে পারে। তাই আমাদের যোগ্যতা এটাই যে আমরা বারবার পড়ে গিয়েও আবার নতুন করে শুরু করলাম। যেমনটা ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে আমরা করে থাকি। জীবনটাও অশ্বারোহনের মতোই।
আমি অনেকটা সময় যুক্তরাজ্যের স্পেশাল এয়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। সেখানে গিয়ে দেখলাম কাজটা মোটেও সহজ নয়। বরং আমার দেখা সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল এটি। মাসের পর মাস প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর যখন কেউ তোমাকে জানাবে, তুমি আসলে তাদের যোগ্য হয়ে উঠতে পারছ না, তখন এটা খুবই মর্মাহত করবে। তখন দুটো উপায় ছিল, প্রশিক্ষণটা ছেড়ে দেওয়া কিংবা সেই নরম বালু থেকে উঠে দাঁড়ানো।
মনে করতে পার যেটা হচ্ছে না সেটা ছেড়ে দেওয়া ভালো। বেশির ভাগ সচেতন মানুষ তাই-ই করবে। কিন্তু আমি আবার নরম বালুর ওপর ভর করে উঠে দাঁড়ালাম। আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম—আমি নিজেকে যোগ্য করে তুলব। যদিও অনেকটা সময় লেগেছিল আমার। কিন্তু আমি পেরেছিলাম। এবং সেদিন আমি আরেকটি বিষয় জানতে পেরেছিলাম, সব সময় শক্তি কিংবা তোমার সামর্থ্য কতটুকু, সেটাই যথেষ্ট নয়। বরং তোমার মনে কতটুকু বিশ্বাস আছে, তাও জরুরি। নিজেকে জিজ্ঞেস করো, বারবার পড়ে যাওয়ার পরও কি তুমি উঠে দাঁড়াবে? বারবার?
হাল ছেড়ো না। কেননা, একেকটি ব্যর্থতা নতুন সাফল্যের কাছে এগিয়ে যাওয়ার একেকটি ধাপ। কারণ, যখন তুমি হাল ছেড়ে দেবে, তখনই তোমার কাঙ্খিত জিনিসটি তুমি হারাবে। এবং ঠিক তখনই তুমি হেরে গেলে। তুমি যদি কিছু চালিয়ে যাও, সেটাতে আর যা-ই হোক, একটা ফল পাবেই।
উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন, ‘সাফল্যের যোগ্যতা হচ্ছে একটি ব্যর্থতা থেকে আরেকটি ব্যর্থতার কাছে ধরা দেওয়া, কিন্তু একই রকম উদ্যম নিয়ে।’ আমি যখন ফিরে তাকাই, তখন আমি অসংখ্য ভুল দেখতে পাই। একই সঙ্গে অনেক অর্জনও চোখে পড়ে। পৃথিবীতে অনেকে আছে, যারা তোমার সমালোচনা করবে। নতুন ব্যবসা শুরু করা, ম্যারাথনে অংশ নেওয়া কিংবা পদোন্নতি—যা-ই হোক না কেন। তোমাকে অবশ্যই বাঁধার সম্মুখীন হতে হবে। এবং সেখান থেকেই স্বপ্নটাকে ছিনিয়ে আনতে হবে।
তাই বলি, লেগে থাকো। মনে রেখ, কেউই বাঁধা ছাড়া কিছু করতে পারেনি। বড় কিছু করতে হলে অবশ্যই অনেক বাজে কিছুর মধ্য দিয়েই যেতে হবে। তবে যখন তুমি কিছু অর্জন করবে, তখন কেউ সেই বাঁধার কথা জানবে না। শুধু জানবে, তোমার কথা। তোমার অর্জনের কথা। তুমি পড়ে যাবে; আবার উঠে দাঁড়াবে। যেমনটি চার্চিল বলেছিলেন, ‘তুমি যখন সবচেয়ে বাজে মুহূর্তের মধ্য দিয়ে যাচ্ছ, তখনও থেমো না। চলতে থাকো।’
সব শেষে বলতে চাই, তুমি অবশ্যই অনেক ভালো কিছু পাবে যদি তুমি চেষ্টা করো। পড়ে যাও, আবার উঠে দাঁড়াও এবং চলতে থাকো। কিছু না কিছু তোমার জন্য থাকবেই। অনেকে তোমার স্বপ্ন চুরি করতে চাইবে। বলবে তুমি নির্বোধ। অহেতুক ছুটছ। কিন্তু তুমি পার্থক্যটা টের পাবে, যখন তুমি তোমার স্বপ্নচূড়ায় উঠে দাঁড়াবে। বিশ্বাস করো, স্বপ্নের চূড়ায় উঠে দাঁড়ানোর অনুভূতিটা অসাধারণ!



ইংরেজি থেকে অনুবাদ:

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS