Md. Afrooz Zaman Khan

Afrooz
Md. Afrooz Zaman Khan. Powered by Blogger.
RSS

বারাক ওবামা : সাম্যের পৃথিবীর সন্ধানে





ভারত সফরে বারাক ওবামা

 
সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। উপস্থিত অতিথি, শিক্ষার্থী ও তরুণদের আমি আমেরিকানদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই। বহুত ধন্যবাদ। আমি তরুণদের কথা শুনলে ভীষণ খুশি হই। তরুণদের অবিশ্বাস্য ধরনের কাজের জন্যই আমরা চোখধাঁধানো চমক দেখি।ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে উপস্থিত থাকতে পারা আমার জন্য ভীষণ গর্বের। আমি বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের উন্নয়ন দুই জাতিকেই অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আমরা বন্ধুত্বে বিশ্বাসী। প্রথমবার ভারতে এসে আমি আর মিশেল মিলে ভাঙ্গরা নাচ নেচেছিলাম। আমরা তো ভারতের দেওয়ালি উৎসবকে হোয়াইট হাউসেও পালন করেছি। গতবার আমরা মুম্বাইতে আলোর এই উৎসবে শিশুদের সঙ্গে নেচেছিলাম। যদিও এবারে আমাদের সফরসূচিতে নাচার কোনো কথাই নেই! কিন্তু কী করব? সেনোরিটা, বড়ে-বড়ে দেশও মে... (বড় দেশগুলোতে এমন হবেই...)। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন আমি কী বলতে চাইছি।
আমরা সারা পৃথিবীতে যে শান্তি স্থাপন করতে চাই, তার শুরুটা কিন্তু আমাদের হৃদয় থেকেই। আমরা যখন বর্ণ-গোত্র-জাতনির্বিশেষে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিই, তখনই সত্যিকারের শান্তি প্রতিষ্ঠা পায়। ভারতের মতো এত বড় দেশে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যই অন্য ধরনের প্রশান্তি। এখানে আপনার বিশ্বাস যা-ই হোক না কেন, সিনেমা হলে শাহরুখ খানকে দেখে সব ভারতীয়ই চিৎকার করে। মিলখা সিং বা ম্যারি কমের মতো ক্রীড়াবিদদের নৈপুণ্য দেখে আনন্দ পায়। শিশুদের দাসত্ব থেকে মুক্তির সংগ্রাম করেই তো আজ নোবেল বিজয়ী কৈলাস সত্যার্থী আমাদের মধ্যে অনন্য। এমন এক জাতির সঙ্গে আমরা বন্ধুত্ব করতে পেরে গর্বিত।
ব্যক্তিগতভাবে আমি দুজন মহান মানুষ দ্বারা অনুপ্রাণিত। যুক্তরাষ্ট্রের রেভারেন্ড মার্টিন লুথার কিংকে আমি ভীষণভাবে অনুসরণ করি। মার্টিন সব সময় মহাত্মা গান্ধীকে অনুসরণ করতেন। ভারত হচ্ছে সেই গান্ধীর ভূমি। মার্টিন এখান থেকেই তাঁর ন্যায়বিচার ও সাম্যের আন্দোলনের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। সেই দুই মহান মানুষের উত্তরাধিকারী তো আমরা—ভারতীয় ও আমেরিকানরা।
প্রায় ১০০ বছর আগে স্বামী বিবেকানন্দ যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। তিনি আমার শহর শিকাগোতেও গিয়েছিলেন। স্বামী সেখানে তাঁর বক্তব্য শুরু করেছিলেন ‘আমেরিকার ভাই ও বোন’ শব্দত্রয় দিয়ে। আমিও তাঁর মতো বলতে চাই, ভারতের ভাই ও বোন। আমি বিশ্বাস করি, আমরা দুই জাতি একসঙ্গে অনেক দূর এগোতে চাই। আমরা ঔপনিবেশ শাসনমুক্ত হয়ে যে সংবিধান তৈরি করেছিলাম, তার প্রথম শব্দগুচ্ছ ছিল এক ‘আমরা জনগণেরা’। ধীরে ধীরে আমরা দুই জাতি জ্ঞান আর প্রযুক্তির উৎকর্ষে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছি। ভারত দারিদ্র্যকে জয় করে চলেছে এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ মধ্যবিত্তের দেশ হয়ে উঠেছে।
আমাদের তরুণদের আছে অন্য রকম শক্তি। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় তারা আমাদের এক করে ফেলেছে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ আর টুইটারের বদৌলতে আমরা আজ অনেক কাছাকাছি।
ভারতের উন্নয়নে বন্ধু হতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন থেকে শুরু করে অবকাঠামো নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী। আমরা আরও বেশি জ্বালানি-সহায়তা দিতে চাই। আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য টেকসই পৃথিবী আমরা নির্মাণ করতে চাই।
আমরা আগামীর নিরাপদ পৃথিবী তৈরি করতে চাই। আমরা পারব। আমাদের সেই প্রযুক্তি তো আছেই।
আমরা সবাই সাম্যে বিশ্বাসী। কেউ আলাদা নয়, সবাই সমান। ভিন্ন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আমাদের মধ্যে শক্ত বন্ধন তৈরি করে। সবাই নানা পেশায় আর কাজে ব্যস্ত থাকি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, সবারই স্বপ্ন আছে। সাম্যের পৃথিবীতে সবার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করাই আমাদের লক্ষ্য। পৃথিবী সাম্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই এখন পাচকের নাতি কোনো দেশের প্রেসিডেন্ট হন আর চা-বিক্রেতা হয়ে যান প্রধানমন্ত্রী। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সবার জন্য সুযোগ তৈরি করা। যাঁরা স্বপ্ন দেখেন, আমরা তাঁদের স্বপ্ন ছুঁতে চাই।
আমি বিশ্বাস করি, সমাজে নারীরা অন্যতম এক শক্তি। তাঁদের আগ্রহের মধ্য দিয়ে একটি সমাজকে যেকোনো সময়ে বদলে দেওয়া সম্ভব। ভারতে নারীরা অনেক শক্তি নিয়ে সমাজ বদলে চলেছেন। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁদের সাফল্য চোখে পড়ার মতো। তরুণ নারীরা উন্নত আগামী প্রজন্মের সূত্র হিসেবে কাজ করে চলেছেন। বিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে, যা আমাদের আশা জোগায়। মেয়েশিশুরা যখন বিদ্যালয়ে যায়, তখন সমাজ আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। একদিন এই শিশুই তো নিজের ব্যবসা শুরু করবে। উদ্ভাবন করবে আশ্চর্যজনক কোনো প্রযুক্তি কিংবা কোনো রোগের প্রতিষেধক। নারীরা কাজে এলে পরিবার উন্নত হয়। পরিবার উন্নত হলে সমাজ উন্নত হয়, সমাজ সামনে এগিয়ে যায়। আর এভাবেই একটি দেশ নারীদের মাধ্যমেই উন্নয়নের শিখরে পৌঁছে যায়।
আমাদের তরুণেরাই সমাজের কুসংস্কার আর প্রতিবন্ধকতাগুলোকে এক পাশে রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি রাখে। আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি তারাই। তরুণেরাই পৃথিবী বদলের কারিগর। তোমাকে দায়িত্ব নিতে হবে পৃথিবীর। আমাদের বয়স হয়ে গেছে। আমার মাথায় এখন বাদামি চুল দেখি। আমি যখন আরও তরুণ ছিলাম, তখন আমি দায়িত্ব পালন শুরু করি। তরুণদের সামনে এগিয়ে আসার প্রচেষ্টা নিতে হবে সব সময়। ভারতে ৩৫ বছরের নিচে তরুণের সংখ্যা অনেক। তরুণেরা এ দেশকে প্রগতির দিকে এগিয়ে নেবে।
আমি ১৬ বছরের কিশোর বিশালের কথা বলতে চাই। সে দক্ষিণ দিল্লির মোর বান্দ গ্রামে থাকে। তার মা ভীষণ কঠিন শ্রমের কাজ করেন। তার বোন এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চান। বিশালের বাবা পাথর ভাঙার কাজ করেন। বিশালের আরেক ভাই দিন আনে দিন খায়-ধরনের কাজ করেন। বিশাল অঙ্ক করতে ভীষণ ভালোবাসে। পড়ার বাইরে সে কাবাডি খেলা ভীষণ পছন্দ করে। বিশালের বড় স্বপ্ন একদিন সে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। আমি বিশালকে নিয়ে গর্ব করি। আমার মেয়ে মালিয়া আর সাশার মতোই বিশালের স্বপ্ন আছে। আমাদের কাছে ওদের স্বপ্ন অনেক দামি।
আমরা আপনাদের বন্ধু হতে পেরে গর্বিত। আপনাদের স্বপ্নের দেশ নির্মাণে সঙ্গী হতে পেরে আমরা গর্বিত।
জয় হিন্দ! সবাইকে ধন্যবাদ।


সূত্র: www.whitehouse.gov


  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

0 comments:

Post a Comment