Md. Afrooz Zaman Khan

Afrooz
Md. Afrooz Zaman Khan. Powered by Blogger.
RSS

কত পথ ঘুরে কেএফসি






হতাশ না হয়ে লেগে থাকলে যে সফল হওয়া যায়, তার প্রমাণ কেন্টাকি ফ্রায়েড চিকেন বা কেএফসির প্রতিষ্ঠাতা কর্নেল হারল্যান্ড ডেভিড স্যান্ডার্স। পৃথিবীখ্যাত একজন ব্যবসায়ী হওয়ার আগে স্যান্ডার্স কে ছিলেন? তিনি ছিলেন স্কুল থেকে ঝরে পড়া এক ছাত্র, একজন খেতমজুর, ট্রেনের ফায়ারম্যান, আইনজীবী, বিমা কোম্পানির সেলসম্যান, ডিঙি নৌকার উদ্যোক্তা, গাড়ির টায়ারবিক্রেতা, শখের ধাত্রীবিশারদ, একজন অসফল রাজনীতিক, ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী এবং সর্বশেষ একজন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী।
কর্নেল স্যান্ডার্সের জন্ম ১৮৯০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। যে বাড়িতে জন্মেছিলেন, সেখানে ঘর ছিল চারটি। আর বাড়িটা ছিল ইন্ডিয়ানার হেনরিভ্যালি থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। উইলবার ডেভিড ও মার্গারেট অ্যানের তিন সন্তানের মধ্যে স্যান্ডার্স সবার বড়।

স্যান্ডার্সের বাবা ছিলেন অত্যন্ত স্নেহশীল এক মানুষ। এক দুর্ঘটনায় তাঁর বাবার পা ভেঙে যায়। পা ভাঙার আগ পর্যন্ত তিনি ৮০ একরের বিশাল এক খামারে কাজ করতেন। এরপর দুই বছর তিনি মাংসের দোকানে কাজ করেছেন। ১৮৯৫ সালের এক গ্রীষ্মের বিকেলে তিনি প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে বাড়ি ফেরেন এবং পরদিন মারা যান।
বাবা মারা যাওয়ার বেশ কয় বছর পর ১৯০২ সালে স্যান্ডার্সের মা আবার বিয়ে করেন এবং পরিবারসহ ইন্ডিয়ানা রাজ্যের গ্রিনউডে চলে যান। সৎবাবার সঙ্গে স্যান্ডার্সের ছিল দা-কুমড়া সম্পর্ক। ১৯০৩ সালে স্যান্ডার্স স্কুল ছেড়ে দিয়ে পাশের এক খামারে কাজ নেন। এরপর তিনি ইন্ডিয়ানা পুলিশ বাহিনীর ঘোড়ার গাড়িতে রং করার চাকরি নেন। যখন তাঁর বয়স ১৪ বছর, তখন তিনি দক্ষিণ ইন্ডিয়ানার স্যাম উইলসনের খামারে যান এবং সেখানে খেতমজুর হিসেবে দুই বছর কাজ করেন। এরপর ১৯০৬ সালে মায়ের অনুমতি নিয়ে স্যান্ডার্স চলে যান তাঁর এক চাচার সঙ্গে দেখা করতে। চাচা থাকতেন ইন্ডিয়ানার অন্তর্গত নিউ আলবানিতে আর কাজ করতেন গাড়ি প্রস্তুতকারক এক কোম্পানিতে। এই চাচা স্যান্ডার্সকে তখন ওই প্রতিষ্ঠানে কন্ডাক্টরের চাকরি জুটিয়ে দেন।
এর বছর খানেক বাদে স্যান্ডার্স আবার চলে যান অ্যালবামার আরেক অঞ্চল সেফিল্ডে। সেখানেও তাঁর এক চাচা বাস করতেন। চাচার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ঘটে আরেক কাণ্ড। স্যান্ডার্সের আরেক ভাই সেখানে আগে থেকেই হাজির! ব্যাপার আর কিছুই নয়, সৎবাবার হাত থেকে পরিত্রাণ পেতেই ভাইটি চলে এসেছে এই চাচার ডেরায়।
যাহোক, চাচা কাজ করতেন দক্ষিণ রেলরোডে। তিনি সেখানকার এক কামারশালায় স্যান্ডার্সকে ঢুকিয়ে দেন। স্যান্ডার্স কামারের সাহায্যকারী হিসেবে কাজ শুরু করে দেন। কিন্তু দুই মাস যেতে না যেতেই স্যান্ডার্সের মন উড়ু উড়ু করতে শুরু করে। তিনি আবার পাড়ি জমান অ্যালবামার আরেক এলাকা জাসপারে। সেখানে কয়লাচালিত ট্রেনের ছাইয়ের ট্যাংক পরিষ্কার করার কাজে যোগ দেন তিনি। পরে কাজ পান ফায়ারম্যানের। তখন স্যান্ডার্সের বয়স মাত্র ১৬। তারপর কেটে যায় আরও দুই বছর। এর মধ্যে স্যান্ডার্স নর্থফোক ও ওয়েস্টার্ন রেলস্টেশনে দিনমজুরির কাজ জুটিয়ে নেন।
কিন্তু স্বভাবজাত উড়ু উড়ু মনের কারণে স্যান্ডার্স এখানেও বেশি দিন টিকতে পারেন না। তিনি আবার পাড়ি দেন ইলিনয় সেন্ট্রাল রেলরোডে। সেখানে আবার ফায়ারম্যানের চাকরি নেন। একই সময় স্যান্ডার্স আরও একটি কাজ শুরু করেন। এরপর তিনি এক্সটেনশন ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে পড়তে শুরু করেন।
কিন্তু উত্থান-পতন যাঁর বিধানলিপি, তাঁর জীবন নিস্তরঙ্গভাবে চলবে, তা হয় কী করে? তুচ্ছ এক বিষয় নিয়ে সহকর্মীর সঙ্গে ঝগড়া বাঁধিয়ে চাকরি হারান স্যান্ডার্স। তবে আইন পড়াটা চালিয়ে যান। আইনের কোর্স শেষ হলে স্যান্ডার্স লিটল রক নামের এক আইন প্রতিষ্ঠানে তিন বছর প্র্যাকটিস করেন। এ সময় তিনি বেশ টাকাপয়সা উপার্জন করেন।
তাতে অবশ্য খুব একটা রকমফের হয় না! অর্থকড়ির শিকলে আটকা পড়ে না স্যান্ডার্সের উড়ু উড়ু মন। তিনি আইন পেশাকে বিদায় জানিয়ে ফিরে আসেন মায়ের কাছে। ১৯১৬ সালের দিকে আবার চলে যান জেফারসন ভ্যালিতে। সেখানে এক জীবনবিমা কোম্পানিতে চাকরি নেন। কিছুদিন পর ‘অবাধ্যতার’ অভিযোগে সেই চাকরিও হারান। তাতে অবশ্য কোনো সমস্যাতেই পড়তে হয় না স্যান্ডার্সকে। নিউজার্সিতে গিয়ে দিব্যি সেলসম্যানের চাকরি জুটিয়ে নেন।
১৯২০ সালের দিকে স্যান্ডার্স একটি ডিঙি নৌকার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পানি থেকে তিনি ওহিও নদীতে চলমান ডিঙি নৌকা সরবরাহ করতেন। এর পাশাপাশি ১৯২২ সালে তিনি ইন্ডিয়ানার চেম্বারস অব কমার্সে চাকরি নেন। কিন্তু এক বছরের মাথায় চাকরিটা ছেড়ে দেন। ডিঙি নৌকার কোম্পানিটিও বিক্রি করে দেন ২২ হাজার ডলারে।
স্যান্ডার্স এবার পাড়ি জমান কেন্টাকি রাজ্যের উইনচেস্টারে। সেখানে এক টায়ার কোম্পানিতে সেলসম্যানের চাকরি নেন। কিন্তু ১৯২৪ সালে কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় স্যান্ডার্সের সঙ্গে পরিচয় ঘটে কেন্টাকির স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে। ম্যানেজার ভদ্রলোক তাঁকে নিকোলাসভ্যালির এক সার্ভিস স্টেশনে চাকরি দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য! ১৯৩০ সালে স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যায়।
অথই সাগরে পড়েন স্যান্ডার্স। এ সময় তিনি ভোক্তাদের খাবার সরবরাহের কাজ শুরু করেন। তখন পর্যন্ত তাঁর কোনো রেস্তোরাঁ ছিল না। তিনি নিজ বাড়িতেই এ কাজ শুরু করেন। দ্রুত তাঁর খাবারের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।
১৯৩৯ সালে নর্থ ক্যারোলাইনার অ্যাশেভ্যালিতে তিনি একটি মোটেল নেন। ওই বছরের নভেম্বরে মোটেলটি এক অগ্নিকাণ্ডে পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে যায়। এবার স্যান্ডার্স মোটেলটিকে ১৪০ আসনের এক রেস্টুরেন্টে পরিণত করেন।
১৯৫২ সালে স্যান্ডার্স সিদ্ধান্ত নেন ‘চিকেন ফ্রাই’ ধারণাটাকে তিনি তাঁর আয়ের উৎসে পরিণত করবেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি উপযুক্ত রেস্তোরাঁ খোঁজা শুরু করেন। শেষমেশ স্যান্ডার্স ও তাঁর স্ত্রী মিলে সেলবাইভ্যালিতে একটি রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। তাঁদের রেস্তোরাঁ ব্যবসাটা ব্যাপকভাবে সফল হয়। কে না জানে কেন্টাকি ফ্রাইড চিকেন-কেএফসি এখন বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় ফাস্ট ফুড রেস্তোরাঁ।
১৯৫৫ সালে স্যান্ডার্স কেএফসির ব্যাবসা সম্প্রসারণ শুরু করেন এবং ১০ বছরের মধ্যে কানাডা, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কেএফসির ৬০০টি শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি এ রেস্তোরাঁকে দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে এক আমেরিকান কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেন।
১৯৮০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৯০ বছর বয়সে এই বিশ্বখ্যাত ব্যবসায়ী মৃত্যুবরণ করেন।

সূত্র: কর্নেল স্যান্ডার্সের ওয়েবসাইট ও উইকিপিডিয়া।

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

স্বাধীনতা জাদুঘর






স্বাধীনতা জাদুঘর প্রতি শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে সর্বসাধারণের জন্য প্রবেশমূল্য মাথাপিছু ১০ টাকা এবং ১২ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোরদের জন্য প্রবেশমূল্য টাকা


স্বাধীনতা জাদুঘর প্রতি শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ও শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। সর্বসাধারণের জন্য প্রবেশমূল্য মাথাপিছু ১০ টাকা এবং ১২ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোরদের জন্য প্রবেশমূল্য ২ টাকা। - See more at: http://www.kalerkantho.com/online/national/2015/03/25/202841#sthash.R11BgXb5.dpuf
স্বাধীনতা জাদুঘর প্রতি শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ও শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। সর্বসাধারণের জন্য প্রবেশমূল্য মাথাপিছু ১০ টাকা এবং ১২ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোরদের জন্য প্রবেশমূল্য ২ টাকা। - See more at: http://www.kalerkantho.com/online/national/2015/03/25/202841#sthash.R11BgXb5.dpuf

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

প্রতিভা দিয়েই সব হয় না : ম্যারি ব্যাররা



বিখ্যাত মোটরগাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জেনারেল মোটরসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যারি ব্যাররা। ম্যারির জন্ম ১৯৬১ সালের ২৪ ডিসেম্বর। ২০১৪ সালে টাইম ম্যাগাজিন তাঁকে বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকাভুক্ত করে। ২০১৩ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন তাঁকে বিশ্বের ৩৫তম শক্তিশালী নারী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ম্যারি ব্যাররা ২০১৪ সালের ৩ মে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এই বক্তব্য দেন।


ম্যারি ব্যাররা


উপস্থিত সব অভিভাবক, অতিথি আর সম্মানিত শিক্ষকদের ধন্যবাদ। আজকের অনুষ্ঠানের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ যারা, সেই ২০১৪ সালের স্নাতক শিক্ষার্থীদের আমার শুভেচ্ছা। এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আমি থাকতে পেরে ভীষণ আনন্দিত।
আজ কেন জানি বারবার আমি আমার শিক্ষাজীবনে ফিরে যাচ্ছি। সমাবর্তনের সেই উত্তেজনা, আনন্দের কথা আমাকে এখন শিহরিত করছে। সেই দিন আমি যে প্রত্যয় আর স্বপ্ন দেখেছিলাম তা বারবার মনে পড়ছে। সেই সময়ের পৃথিবী এখন অনেক বদলে গেছে। এখন তো তোমরা একুশ শতকের স্নাতক। সমাজে তোমাদের বয়সের কিশোর আর তরুণদের সংখ্যাই বেশি।

তোমাদের নিজেদের মধ্যে কিন্তু ভাবনার মিল কমই দেখা মেলে। যেমন ধরো, তোমাদের মধ্যে সবাই কিন্তু সপ্তাহের সাত দিন ২৪ ঘণ্টা মুঠোফোনের মধ্যে ডুবে থাকো না। নানা পরিসংখ্যান বলে, কিশোর আর তরুণদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনের মাত্র একজন এই যন্ত্র-বন্ধুটিকে ছাড়া রাতে ঘুমোতে যাও। তোমরা সবাই ধনী নও, কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ধনী প্রজন্মের সদস্য তোমরা। চিন্তা করে দেখো, আগের সময়ের পৃথিবীর মানুষের চেয়ে তোমরা কত বেশি সুযোগ-সুবিধা লাভ করো। তোমাদের ইন্টারনেট আছে, আছে আইফোন।
তোমাদের আরেকটি কথা না বললেই নয়, তোমাদের এই প্রজন্মের বেশির ভাগ কিশোর আর তরুণই কিন্তু অমনোযোগী। হ্যাঁ, আমি তোমাদের অমনোযোগী বলছি। তোমরা কারও কথাই যেন শুনতে চাও না। আমি কিন্তু সবাইকে অমনোযোগী বলছি না, কেউ কেউ। এই যে শেষ তিন মিনিটে আমার কথা শুনতে শুনতে তোমাদের মধ্যে গুটি কয়েক নিজেকে খুদেবার্তা আর টুইট করা থেকে বিরত রাখতে পেরেছ। অন্যরা টুইট, স্ট্যাটাস আর টেক্সট নিয়ে ব্যস্ত।
আগের পৃথিবীর সবকিছু এখন বদলে গেলে, কিছু কিছু জিনিস কিন্তু এখনো আগের মতোই আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তোমরা যে মানসিক দক্ষতা, গাণিতিক যুিক্ত, সমস্যা সমাধানের কৌশল, যোগাযোগ দক্ষতা, টিমওয়ার্ক নিয়ে জ্ঞান অর্জন করেছ তা কিন্তু অসাধারণ। ৩০ বছর আগে এগুলো ছিল সফলতার সূত্র। এখনো মানুষকে সফল হতে হলে এসব দক্ষতা প্রয়োজন। কিন্তু আমার চেয়েও এই সব তত্ত্বকথা তোমরা বেশি ভালো করে জানো, বোঝো। কারণ, আগে এসব গুণ সফলতার পথ নির্মাণ করত। আর এখন মানুষ এই সব দক্ষতা নিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করে।
ইন্টারনেটের কারণে তোমরা আগে থেকেই সব জানতে পারো। কিন্তু তার পরেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাজের দক্ষতা আর গুণ মানুষকে অভিজ্ঞ করে তোলে। নিজেকে অন্যের চেয়ে দক্ষ করে তুলতে একাগ্রতার বিকল্প নেই। আমার সমাবর্তনের পর থেকে জীবনে অনেক কিছু শিখেছি। যা শিখেছি তার থেকে আধা ডজন নীতিকথা তোমাদের জানাতে চাই।
এক. যে কাজ একবার শুরু করেছ, তা নিয়ে দ্বিধান্বিত হবে না। সফল হওয়ার ইচ্ছা আর পরিশ্রম দিয়ে সেই কাজ করে যাও। আমার অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, স্কুল-কর্মস্থলে, পেশাজীবনে, খেলাধুলায় সব জায়গায় অনেক প্রতিভাবান লোকের দেখা মেলে। কিন্তু মনে রেখো, প্রতিভা দিয়েই সব হয় না। সফলতার জন্য তোমাদের প্রয়োজন প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম। সাফল্যের দরজায় জোরে ধাক্কা দাও। পরিশ্রম করো৷
যদি তুমি কোনো প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী হও, তাহলে তোমার একাগ্রতা আর পাগলামি তোমার দলের অন্যদের উৎসাহ জোগাবে। বড় কিছু অর্জনের জন্য যতটা সম্ভব পরিশ্রম করে যাও।
দুই. সব সময়ের জন্য সৎ থাকতে হবে। জীবনের সর্বক্ষেত্রে নিজেকে সৎভাবে প্রমাণিত করো৷ নিজের কাছে সততা সবচেয়ে বড় আত্মবিশ্বাস। কথা ভঙ্গ করবে না। তোমার গ্রাহকদের জন্য, পিতামাতার জন্য, কর্মীদের জন্য, পরিবারের জন্য, বন্ধুদের জন্য এবং নিজের জন্য, যেটা ঠিক সেটাই করবে সততার সঙ্গে।

তিন. বন্ধু তৈরি করো৷ মনে রেখো, সফলতা কখনো একা আসে না। একসময় তোমরা নিশ্চয়ই বড় বড় সাফল্য লাভ করবে। কিন্তু কখনোই একা একা তুমি কিছুই করতে পারবে না। বন্ধু তৈরি করো৷ সাফল্য সব সময় দলগত পরিশ্রমের সমষ্টিগত ফলাফল। তোমরা আগামীর দলনেতা। নেতৃত্বের জন্য তোমাদের অন্য মানুষের কাছ থেকে সম্মান ও বিশ্বাসযোগ্য অর্জন করতে হবে। নিজের কথা বলার চেয়ে অন্যদের কথা শোনার অনন্য যোগ্যতা অর্জন করতে হবে তোমার। সত্যি বলতে মানুষ তখনই তোমার প্রতি সহানুভূতি দেখাবে, যখন তুমি তাদের সহানুভূতি দেখাবে। জীবনের নানা প্রয়োজনীয় কাজের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে তোমাকে অনেক মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে, বাড়াতে হবে বন্ধুর সংখ্যা।
চার. যেকোনো বাধা-বিঘ্নকে সামনে থেকে মোকাবিলা করতে হবে। বাড়ি কিংবা অফিসে যেখানেই তুমি কোনো সমস্যা দেখবে, তার সম্মুখীন হও। তোমার যা কিছু আছে তা নিয়েই সমস্যার সমাধান করো৷ আমার অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, যেকোনো সমস্যা সমাধানে পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাও। মনে রেখো, সমস্যার সমাধান সামনে থেকেই করতে হয়। সমস্যাকে যতই অবজ্ঞা করবে, ততই তা বড় হয়ে উঠবে।
পাঁচ. অন্যের জন্য কিছু করো৷ আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান আর উদ্ভাবনী প্রযুক্তির এই সময়ে তোমাদের সামনে আছে অনেক সুযোগ। অনেক কিছু করে ফেলতে পারবে তোমরা। কিন্তু সবকিছুর আগে একটা কাজ করতে কখনোই ভুলবে না। নিজের মেধা দিয়ে অন্যের জন্য ভালো কিছু করবে সব সময়। আমি জানি, আজকের এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বেশ কজন স্পাইডারম্যান-ভক্ত আছে। স্পাইডারম্যান সিনেমার সেই উক্তি নিশ্চয়ই তোমাদের মনে আছে? ‘অধিক ক্ষমতা অন্যের প্রতি তোমার বড় দায়িত্ব তৈরি করে।’

সর্বশেষ, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো৷ আমি এই বিশেষ দিনে তোমার বন্ধু, পরিবার এবং নিজের ওপর বিশ্বাস রাখার কথা বলছি। নিজের বন্ধু আর পরিবারকে সব সময় কাছে রাখবে। আমি তোমাদের পরিবার আর বন্ধু কতখানি গুরুত্বপূর্ণ সেটা বলে বোঝাতে পারব না। তারাই তোমার পথ চলাকে পরিপূর্ণ করে তুলতে পারে। ভালো সময়গুলো তাদের সঙ্গে উদ্যাপন করো৷ আর কঠিন সময়গুলোতে পরিবার আর বন্ধুদের পরামর্শ নাও। নিজের বিশ্বাসের ওপর আস্থা রাখো।
আমি আজকের বক্তৃতার প্রথম দিকে তোমাদের ধনী, সৌভাগ্যবান প্রজন্ম বলে হালকা হেয় করলেও একটা কথা কিন্তু এখনো বলিনি। তোমরা পৃথিবীর ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে উদ্ভাবনী এবং প্রত্যাশায় পরিপূর্ণ একটি প্রজন্ম। তোমাদের হাতের মুঠোয় এখন সমাজ বদলের নানা অনুষঙ্গ। তোমাদের সামান্য চিন্তায় এখন বদলে যায় সমাজ। সামনে যে সুযোগ আসবে, সেটাই খপ করে ধরে ফেলবে। ক্যারিয়ারের শুরুতে যা করার সুযোগ পাবে তা-ই করবে। সব নতুন অভিজ্ঞতা তোমার দক্ষতাকে বিকশিত করবে, দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলে দেবে। যেকোনো কাজকে ভালোবাসো। কাজ উপভোগ করো। অভিজ্ঞতাই তোমার সাফল্যের গতি নির্ধারণ করে দেবে। জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে মনোযোগী হও। তোমাদের সবাইকে আমার অভিনন্দন। আমি তোমাদের প্রত্যেককে নিয়ে আজ আনন্দিত ও গর্বিত। সবাইকে ধন্যবাদ।


তথ্যসূত্র: ওয়েবসাইট





  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

রাজকুমার হিরানি : জীবনে থামতে জানতে হয়



রাজকুমার হিরানি


     
পিকে (২০১৪) ও থ্রি ইডিয়টস (২০০৯) ছবির জন্য আলোচিত রাজকুমার হিরানি। হিরানি পরিচালিত অন্য দুটি চলচ্চিত্র মুন্নাভাই এমবিবিএস (২০০৩) ও লাগে রাহো মুন্না ভাই (২০০৬)। তাঁর জন্ম ১৯৬২ সালের ২০ নভেম্বর ভারতের নাগপুরে। ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করলেও তিনি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন চলচ্চিত্রকে।
আপনার জীবনাদর্শ কী? জীবনে বহুবার আমি এ প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি। কখনোই প্রকৃত উত্তর খুঁজে পাইনি। আমরা আসলে কেউই জানি না আমরা কেন এই ধরাধামে এসেছি। মানুষ বাঁচে কত দিন? বড়জোর ষাট, সত্তর কিংবা আশি বছর? প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙার পর আপনি যদি মনে করেন জীবনটা খুবই সংক্ষিপ্ত, তাহলে দেখবেন, জীবনটাকে আপনি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পারছেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমরা প্রায় সবাই মনে করি, আমাদের হাতে প্রচুর সময় রয়েছে, জীবনের আয়ু সংক্ষিপ্ত নয়।
তাই আমি মনে করি, আমাদের প্রতি মুহূর্তে মনে করা উচিত, এ পৃথিবীতে আমাদের সময় খুব, খুব সামান্য। আজ থেকে ৫০ অথবা ৭৫ বছর পর কেউ হয়তো আমাকে আর চিনবে না। তো এসব চিন্তা করে ঘুম নষ্ট করার দরকার কী! এসব নিয়ে আমি মোটেও মাথা ঘামাই না। আমাদের প্রয়োজন টাকা, আমাদের প্রয়োজন সম্পদ, কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন, এসব অর্জনেরও একটা সীমা আছে। আমি মনে করি, মানুষের জীবনে সত্যিকার অর্থে দুটি সমস্যা আছে—এক. স্বাস্থ্য ও দুই. দারিদ্র্য।
আপনি দেখবেন, যারা জ্যোতিষীর কাছে যায়, তারা জানতে চায় তাদের টাকাপয়সা কিংবা সম্পদ হবে কি না, তাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে কি না ইত্যাদি। কারণ জীবনের শেষ বেলায় এক সকালে উঠে আপনার মনে হবে, আপনার দেখভাল করার মতো কেউ আছে কি না। আর তখনই আপনার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে।
আমি মনে করি, আমি সব সময় ও রকমটাই ভাবি। এটা কিছুটা বংশগত ব্যাপারও বটে। আমি সৌভাগ্যবশত এমন এক পরিবারে জন্মেছি যে পরিবারটা খুব একটা ধনী ছিল না। তবে বাবা চিন্তা-চেতনায় ছিলেন যথেষ্ট আধুনিক।
একবার আমাকে খুব ভয় দেখানো হলো। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে গিয়ে জানলাম, শরীরের কোনো একটা অংশ ঠিকঠাকমতো কাজ করছে না। চিকিৎসক বললেন, পরিবারের কাছে ফিরে যান, আপনি খুব শিগগিরই জটিল রোগে আক্রান্ত হবেন। চাপের মধ্যে ভালো কাজ করা মানে অনেকটা সংগ্রাম করার মতো। আমি সব সময় চেষ্টা করি এই ‘মানসিক চাপ’ বিষয়টাকে পাত্তা না দিতে।
বিলিয়ার্ড খেলোয়াড় গীত সিতাই একবার আমাকে বলেছিলেন, তিনি একবার থাইল্যান্ডে ফাইনাল খেলা খেলছিলেন। তাঁর প্রতিপক্ষের নাম ছিল সম্ভবত ওয়াত্তানা। এই খেলোয়াড় প্রচুর পয়েন্ট নিয়ে ফাইনালে উঠেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই একটা খেলায় হেরে গেলেন এবং তারপর একের পর এক হারতে লাগলেন। স্বাভাবিকভাবেই গীত তখন খুব অবাক হয়েছিলেন এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ব্যাপার কী? উত্তরে ওয়াত্তানা বলেছিলেন, আমি মনে করি, আমি সেই খেলায় অবশ্যই জিততাম। কিন্তু আমার সম্পূর্ণ মনোযোগ ছিল পুরস্কারের টাকার দিকে। আমি ভাবছিলাম, পুরস্কারের টাকা পেলে আমার বাবার জন্য একটা বাড়ি কিনব। এই ভাবনা আমাকে কিছুটা বিভ্রান্ত করেছিল। আমি তখন কিছুটা নার্ভাস বোধ করছিলাম। কিছুতেই খেলায় মনঃসংযোগ করতে পারছিলাম না এবং যার ফলে আমার প্রতিপক্ষ খেলাটায় জিতেছিল।
গীতের এই গল্প থেকে আমি শিখেছিলাম, আপনি কী করছেন, তার লক্ষ্য ঠিক রাখা খুবই জরুরি।
আমি সম্প্রতি ক্রিস্টোফার নোলানের একটি সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তিনি কোনো মুঠোফোন ব্যবহার করেন না। এমনকি তাঁর কোনো ই-মেইল আইডিও নেই। প্রতিদিন আপনি নাছোড় বান্দার মতো অন্তত ২০ হাজার মানুষের মনোযোগ চান। কিছু মানুষ এ বিষয়টিকে উপভোগ করতে পারে, তবে কিছু মানুষ মনে করে এটা এক ধরনের চিত্তবিনোদন। তো এ কথা বললাম এ জন্য যে আমাকে বিরক্ত করার কেউ নেই, না ফোন, না কোনো মানুষ। কিন্তু যখন আপনি একটু একটু করে পরিচিত হয়ে উঠবেন, তখন অনেক কিছুই আপনার পিছু লাগবে। জগতে চিত্তবিনোদনের অনেক উপাদান আছে। আপনাকে কর্মে সফল হতে হলে ওই সব থেকে অবশ্যই নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
প্রত্যেকের বোঝা উচিত, ‘প্রয়োজন’ ও ‘লোভের’ মধ্যে পার্থক্য কী। আপনার জানা উচিত, ঠিক কোন জায়গাতে আপনাকে থামতে হবে এবং এটাও জানা উচিত, ‘আর নয়, বহুত হয়েছে’ কথাটা কখন বলতে হবে। অনিশ্চয়তা আপনাকে খতম করে দিচ্ছে? পৃথিবীর সবেচেয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তির দিকে তাকান, তিনিও বলবেন, ভয় লাগে, কখন সব শেষ হয়ে যায়! আপনি যদি এই অনিশ্চয়তার ভয় কাটাতে পারেন, তবে সেটাই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।
অনেকেই আপনাকে খারাপ মানুষ মনে করতে পারে। কিন্তু আপনি নিজেকে কখনোই খারাপ মনে করেন না। এটা মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। এ বিষয়টি প্রথম মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল বোমান ইরানি, যখন আমরা একসঙ্গে মুন্না ভাই এমবিবিএস বানাচ্ছিলাম তখন। বিষয়টি নিয়ে বোমানের সঙ্গে অনেক বিতর্ক হয়েছে আমার। এরপর থেকে আমি যখন আমার ছবির কোনো চরিত্রের কথা ভাবি, তখন কখনোই সেই চরিত্রকে ‘ভিলেন’ হিসেবে ভাবি না। কারণ সে তাঁর জীবনে তো ‘হিরো’। নিজের জীবনে মানুষ কখনো নিজেকে ‘খলনায়ক’ হিসেবে দেখে না। সে কখনোই ভাবে না যে সে একজন খারাপ মানুষ।
সুতরাং এখন আপনি বুঝতেই পারছেন, আমরা আমাদের মাথার ভেতর আসলে গল্প তৈরি করি, ভিলেন বানাই।
কিছুদিন আগে মুম্বাই ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের সঙ্গে আমার দেখা হয়। তিনি বলেন, ক্লাসরুমভিত্তিক শিক্ষার দিন শেষ হয়ে গেছে। এখন আমাদের বাচ্চাদেরও হাতে পৌঁছে গেছে আইপ্যাড, আইফোন। এ যন্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে সবচেয়ে ভালো শিক্ষক।
থ্রি ইডিয়টস দেখার পর কত মানুষ আমার কাছে এসেছে, আমি তা বলে বোঝাতে পারব না। তারা বলেছে, তাদের মধ্যে কত গলদ আছে! আমি আপনাকে বলতে পারব না যে কত প্রকৌশলী আমার কাছে এসেছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘আমরা ভুল পেশায় আছি। আমরা এখন কী করব? আমরা এ পেশা ছাড়তেও পারি না। ভয় লাগে, কারণ এটাই যে আমাদের উপার্জনের পথ। কেউ কেউ অবশ্য ছেড়েও দিচ্ছেন। কিছু চিকিৎসকের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, তাঁরা তাঁদের পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।’
উপাচার্য মহাশয় সেদিন আমাকে বলেছিলেন, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় গলদ আছে। শিক্ষাব্যবস্থার বদল প্রয়োজন। কিন্তু এটা বদলাতে সবাই ভয় পায়। যেদিন আমরা এই ভয় থেকে মুক্ত হতে পারব, সেদিনই সত্যিকার পথ খুঁজে পাব।’
আমার মনে হয়, জীবনে সফল হওয়ার জন্য যেকোনো একটা বিষয় প্রয়োজন। কিন্তু মানব সম্প্রদায় হিসেবে আমরা বরাবরই আমাদের জীবন ও মনকে উদ্ভট পথে পরিচালিত করি। বেঁচে থাকার জন্য কিছু অর্থ উপার্জন করুন। দ্যাটস অ্যানাফ!
যাহোক, আমি শিক্ষা নিয়ে কথা বলছিলাম। বলছিলাম যে আমরা আসলে বাস করি কয়েক হাত ঘুরে আসা জ্ঞানের মধ্যে। বিষয়টি আর একটু পরিষ্কার করে বলা দরকার। যখন একটি পশু মারা যায়, সে আসলে মারাই যায়। পশুদের এমন কোনো প্রজন্ম নেই যারা তাদের জ্ঞান পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সরবরাহ করতে পারে। কোনো পশুই বই লিখতে পারে না, যে বই বছরের পর বছর অন্য প্রাণীরা পড়তে পারে, কিন্তু মানুষ পারে। তাই মানুষের জ্ঞান আসলে ‘সেকেন্ডহ্যান্ড নলেজ!’


সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকার অবলম্বনে



  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

বৈষম্যহীন পৃথিবী চাই : নিকোল কিডম্যান






নিকোল কিডম্যান
     

অস্কার ও গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারজয়ী অস্ট্রেলীয়-আমেরিকান অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যান। জন্ম ১৯৬৭ সালের ২০ জুন। ২০০২ সালে দ্য আওয়ার্স সিনেমার জন্য তিনি সেরা অভিনেত্রী হিসেবে অ্যাকাডেমিক পুরস্কার ও গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার জয় করেন। কিডম্যান ১৯৯৪ সালে ইউনিসেফ ও ২০০৬ সাল থেকে জাতিসংঘের নারী উন্নয়ন তহবিল ইউএনইউমেনের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করছেন। ২০১৩ সালের ৪ অক্টোবর ভ্যারাইটি ম্যাগাজিনের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে নিকোল এ বক্তব্য দেন।
আমি নারী। এটা আমার গর্ব, আমার পরিচয়। নারী বলেই যে আমি নারী অধিকার নিয়ে কাজ করি তা নয়। আমি নির্যাতিত মানুষের জন্য কাজ করি। নারীরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হন। আমি জাতিসংঘের নারীবিষয়ক সংগঠন ইউএন উইমেনের হয়ে কাজ করতে পেরে গর্বিত। আমার কাজ মানুষ নিয়ে। মানবসভ্যতার অর্ধেক যারা, সেই নারীর জন্যই আমার কাজ। তাঁদের অধিকার আদায়ের জন্য আমি কথা বলি। এখন নারীরা কিছুটা হলেও আগের চেয়ে পুরুষের মতো অধিকার ও সুযোগ লাভ করছেন। এটা নিশ্চয়ই আমাদের মানবসভ্যতার জন্য অনন্য এক কীর্তি।
নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য কথা বলতে কিংবা লড়াই করতে আমি হঠাৎ করে রাস্তায় আসিনি। ছোটবেলা থেকেই নারী অধিকার আদায়ের সঙ্গে অবচেতন মনে যুক্ত আমি। আমার মা ছিলেন অসাধারণ এক নারী। নারীদের অধিকার আর স্বকীয়তা নিয়ে জোরে কথা বলেন, প্রতিবাদ করেন এমন একজন মানুষ ছিলেন তিনি। আমার বেড়ে ওঠা ছিল এমনই এক পরিবেশে। তাঁর অনুপ্রেরণাতেই আমার নারী অধিকার নিয়ে কথা বলা। আমার মা নারীদের পুরুষের চেয়ে আলাদা, কম বা বেশি অধিকার সহ্য করতে পারতেন না। সমান অধিকারের জন্য তিনি কথা বলতেন। মা আমাকে স্পষ্ট বলেছিলেন, ‘সব সময় সোজা হয়ে দাঁড়াবে। যা ন্যায় তার জন্য কোনো ছাড় দেবে না।’
জনসংখ্যার অর্ধেক নারী হওয়ার পরেও কেন নারীদের বিরুদ্ধে বৈষম্য? নারীরাও তো মানুষ। আমরা দেখি, যখন নারীরা শুধু নিজের জন্য অর্থ আয় করেন না। যখন নারীদের অর্থ আয়ের সুযোগ থাকে, তখন তাঁরা সেই অর্থ তাঁদের সন্তানদের পেছনে ব্যয় করেন। আমাদের ভবিষ্যতের জন্য সেই অর্থ খরচ করেন তাঁরা। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যেখানে নারীরা ভূমির মালিক হতে পারেন না। তাঁদের মালিক হওয়ার অধিকার নেই। কাজের মাধ্যমে অর্থ আয়ের কোনো সুযোগই দেওয়া হয় না নারীদের। সর্বক্ষেত্রে বৈষম্যের দেখা পান নারীরা। প্রতিটি দেশেই নারীরা পুরুষের মতো কাজ করেও কম মজুরি পান।
আমরা আরও দেখি, সব দেশে নারীরা রাজনীতি করার সুযোগ পান। সেখানকার রাজনীতি অন্য দেশের চেয়ে আলাদা। এসব দেশের রাজনীতিতে সামাজিক বিভিন্ন ইস্যু গুরুত্ব পায় বেশি। শিক্ষা আর পরিবেশের মতো বিষয়গুলো তখন আলোচিত হয়। কিন্তু পৃথিবীজুড়ে প্রতি পাঁচজন সাংসদের একজন মাত্র নারী। নারীরা প্রশাসনিক কাজকর্মেও বেশ দক্ষ। পৃথিবীর যেসব কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানে নারীরা প্রধান নির্বাহী, সেসব প্রতিষ্ঠানের লাভের পরিমাণ অন্য সবার চেয়ে বেশি দেখা যায়। সেসব কোম্পানির ব্যবস্থাপনা নারীর হাতে বলেই তাদের আয় বেশি এবং কর্মদক্ষতা অন্য সব কোম্পানির চেয়ে ভীষণ অন্য রকম। কিন্তু পৃথিবী সেরা ৫০০ কোম্পানির মধ্যে মাত্র ২১ জন নারী নির্বাহীকে আমরা দেখতে পাই।
জাতিসংঘের নারীবিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন বিশ্বব্যাপী নারী অধিকার নিয়ে কাজ করছে। আমি সে জন্যই এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছি। আমাদের কাজ নারীর উন্নয়ন আর ক্ষমতায়ন। নারীরা যেন রাজনীতিতে আসতে পারেন, যে কাজ করেন, তার জন্য পুরুষের সমান মজুরি পান, সে জন্য তাঁদের সচেতন করাই আমাদের কাজ। যেসব অঞ্চলে যুদ্ধ-সংঘাত চলছে, বিশেষ করে সিরিয়ার মতো অঞ্চলে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে। নারীদের যুদ্ধকালীন অধিকার ও সহযোগিতার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। নারীর কণ্ঠ যেন সমাজে শোনা যায়, সে জন্য বিশ্বব্যাপী সচেতনতা প্রয়োজন।
সারা বিশ্বে প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে একজন কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানি, বা নির্যাতনের শিকার হন। এই নির্যাতন রোধ, হয়রানি প্রতিরোধের জন্য সারা বিশ্বে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ধীরে ধীরে সচেতনতা বাড়ছে। বিভিন্ন দেশে আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীদের অধিকার রক্ষার চেষ্টা চলছে। তরুণেরা যেন এ বিষয়ে সচেতন হন, তার জন্য অনেক ধরনের কাজ করা হচ্ছে।
আমি প্রত্যাশা করি, নারীর অধিকার নিয়ে সবাই সচেতন হবেন। আপনি যে-ই হোন না কেন, যা-ই করুন না কেন, আপনার জায়গা থেকে নারীর অধিকার আদায়ের জন্য কথা বলুন। আমরা এমন একটা পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতেই পারি, যেখানে নারীদের সঙ্গে কোনো ধরনের বৈষম্য আর সংঘাত থাকবে না।
সূত্র: ইউএনউইমেন ডটঅর্গ


  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

রজার ফেদেরার : মন খারাপ করার কী আছে!



বিশ্বের আলোচিত টেনিস খেলোয়াড় সুইজারল্যান্ডের রজার ফেদেরার। জন্ম ১৯৮১ সালের ৮ আগস্ট সুইজারল্যান্ডের বাসেলে। বিশ্বসেরার এটিপি র্যাংকে এখন তাঁর অবস্থান শীর্ষ ২। রজার ১৭টি একক গ্র্যান্ড স্লামসহ ৯০ বার একক ও দ্বৈত শিরোপা জয় করেন। তিনি প্রথম টেনিস তারকা, যিনি খেলা থেকে পাঁচ কোটি মার্কিন ডলার পুরস্কার হিসেবে আয় করেন। ২০০৩ সাল থেকে তিনি রজার ফেদেরার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ শুরু করেন। ২০০৬ সাল থেকে তিনি ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।


রজার ফেদেরার



আগের সময়টা বদলে গেছে। আমার বয়স বেড়েছে। কিন্তু টেনিস খেলার প্রতি কিশোর বয়সের সেই উত্তেজনা আর আগ্রহ এখনো আমার শরীরে আছে। তবে সেই বয়সে আমি প্রতি ম্যাচ খেলার পরে কান্না করতাম। আমি আমার শেষ সীমা জানতাম না তখন। আমি খুব আবেগী ছিলাম তখন। সময় বদলেছে, এখন আমি জানি আমি কী করতে পারি। কীভাবে মাঠে লড়াই করতে হয় তা আমি জানি।
কৈশোরে আমি ফুটবল আর টেনিস দুটোই খেলতাম। তবে স্থানীয় পর্যায়ের বেশ কটি টেনিস প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমার আত্মবিশ্বাস বাড়ছিল। যার কারণেই আমার টেনিসেই ঘর বাঁধা। এলাকায় খেলতে খেলতে একসময় নিজেকে আমি জাতীয় পর্যায়ের খেলার কোর্টে আবিষ্কার করি। সেই সময়গুলো ছিল দুর্দান্ত!
মানুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটো নিয়ম প্রতিনিয়ত খেয়াল রাখা উচিত। প্রথমত, সব পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখা। দ্বিতীয়, নিজের পথ নিজেই ঠিক করে সামনে এগিয়ে চলা এবং তার জন্য যথাসাধ্য কাজ করা। রেকর্ড আমার জন্য কোনো বিশেষ ব্যাপার নয়। আমি নিশ্চিত আমার রেকর্ডগুলো কোনো না কোনো এক দিন ভাঙবেই। সব সময় রেকর্ড সেরাদের হাতেই থাকে।
আমি যখন প্রথম উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হই, তখনকার অনুভূতি এখনো আমার মনে পড়ে। আমি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে কোর্টে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ি। সেই মুহূর্তে আমার নাম একজন সুইস হিসেবে টেনিস ইতিহাসে লেখা হয়।
টাকাকড়িই আমার জন্য সব নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের ভেতরকার খুশি। আমি আমার জীবন নিয়ে খুশি।
পৃথিবীর মানুষ আমাকে সব সময়ই অবাক করে দেয়। একবার না দুইবার না, বারবার। যেসব জায়গায় টেনিস হয়তো খেলা হয় না, সেসব জায়গার মানুষেরাও আমাকে চেনে। আমি একবার ইথিওপিয়াতে গিয়েছিলাম, আমার ফাউন্ডেশনের জন্য কাজ করতে। আমাকে সাধারণ মানুষ সব সময়ই ঘিরে থাকত। দক্ষিণ আমেরিকায় যাওয়ার পরে আমার হোটেলের সামনে দেড় শ জন ভক্ত অপেক্ষা করছিল। এটা আমার জন্য পরম পাওয়া।
আমি সব সময় জানি আমি কী চাই। সেই চাওয়ার জন্য আমি একঘুয়ে আচরণ করি। আমি নিখুঁত খেলার চেষ্টা করি। আমেরিকানরা বলে, স্বপ্নকে তাড়া করো। আমি এই প্রবাদ বাক্যকেই অনুসরণ করে চলেছি। সবাইকে স্বপ্ন দেখতে হবে। লক্ষ্য ছোঁয়ার নেশা জন্মাতে হবে। আমার সব সময়ের স্বপ্ন ছিল টেনিস নিয়ে।
ছোটবেলায় আমি ছাত্র হিসেবে মোটামুটি মানের ছিলাম। আমার ফল ভালো ছিল, কিন্তু আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল মনোযোগহীনতা। যৌক্তিক চিন্তাভাবনা করতে পারতাম না একটুও। কিন্তু তারপরেও আমি সবকিছুতেই প্রেরণা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করতাম। কোনো কিছু করার আগ্রহ জাগলে আমি সেটা করেই ছাড়তাম।
খেলার সময় সব সময় চাপ থাকে। সবদিক থেকে চাপ আছে; পরিবেশ, পরিস্থিতি, প্রতিপক্ষের কাছ থেকে। আমি সব সময়ের জন্য পৃথিবীর সেরা টেনিস খেলোয়াড় হয়ে থাকতে পারব না। পৃথিবীর জন্য কিছু করতে চাই আমি।
আমি আফ্রিকার শিশুদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করছি। মালাউইতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি। ১০ বছর ধরে আমরা ৫০ হাজার শিশুকে শিক্ষা নিশ্চিত করতে চাই। আফ্রিকা ছাড়াও অনেক দেশে আমার ফাউন্ডেশন কাজ শুরু করেছে। আমরা ধীরে ধীরে সারা পৃথিবীর শিশুদের শিক্ষা নিয়ে কাজ শুরু করতে চাই।
আমাকে অনেক তরুণ অনুসরণ করে। অনেক অভিভাবক তাঁর সন্তানকে বলেন, রজারের মতো এটা করো, ওটা কোরো না! এটা নিশ্চয়ই আমার জন্য অনন্য এক পাওয়া।
সব ধরনের পেশায় উত্থান-পতন থাকবেই। অনুপ্রেরণা সব সময়ই মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কে পরাজিতকে মনে রাখে? আপনাকে নিজেকেই উৎসাহ দিতে হবে। লড়াই করে জিততে হবে। ফাইনালে খেলা আর জেতা দুটো দুই বিষয়ই। বিজয়ীকে ইতিহাস মনে রাখে। আমি সব ম্যাচে জিতি না, হেরে যাই। কিন্তু মন খারাপ করে বসে থাকি না। কোনো ম্যাচ জেতার পরে আমার যে আত্মবিশ্বাস থাকে, হেরে গেলেও আমি একই আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার চেষ্টা করি। মানুষকে তার আত্মবিশ্বাসই সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়।
আমি যদি গ্র্যান্ড স্লাম জিতি তাহলে পৃথিবীসেরা হওয়ার দিকে এগিয়ে যাব। আমার সামনে সে সুযোগ সব সময়ই থাকে। আমি সব সময় চেষ্টা করে যাই। টেনিস কোর্টেই আমার ভাগ্য আমার শ্রম, বুদ্ধিমত্তা দিয়ে নির্ধারিত হবে। সব সময়ের জন্য মানসিক ও শারীরিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে। নিজের পথ নিজেকেই ঠিক করে নিতে হবে।

তথ্যসূত্র: ২৫ আগস্ট ২০১৪ স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেডে প্রকাশিত সাক্ষাৎকার অবলম্বনে সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

বারাক ওবামা : সাম্যের পৃথিবীর সন্ধানে





ভারত সফরে বারাক ওবামা

 
সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। উপস্থিত অতিথি, শিক্ষার্থী ও তরুণদের আমি আমেরিকানদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই। বহুত ধন্যবাদ। আমি তরুণদের কথা শুনলে ভীষণ খুশি হই। তরুণদের অবিশ্বাস্য ধরনের কাজের জন্যই আমরা চোখধাঁধানো চমক দেখি।ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে উপস্থিত থাকতে পারা আমার জন্য ভীষণ গর্বের। আমি বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের উন্নয়ন দুই জাতিকেই অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আমরা বন্ধুত্বে বিশ্বাসী। প্রথমবার ভারতে এসে আমি আর মিশেল মিলে ভাঙ্গরা নাচ নেচেছিলাম। আমরা তো ভারতের দেওয়ালি উৎসবকে হোয়াইট হাউসেও পালন করেছি। গতবার আমরা মুম্বাইতে আলোর এই উৎসবে শিশুদের সঙ্গে নেচেছিলাম। যদিও এবারে আমাদের সফরসূচিতে নাচার কোনো কথাই নেই! কিন্তু কী করব? সেনোরিটা, বড়ে-বড়ে দেশও মে... (বড় দেশগুলোতে এমন হবেই...)। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন আমি কী বলতে চাইছি।
আমরা সারা পৃথিবীতে যে শান্তি স্থাপন করতে চাই, তার শুরুটা কিন্তু আমাদের হৃদয় থেকেই। আমরা যখন বর্ণ-গোত্র-জাতনির্বিশেষে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিই, তখনই সত্যিকারের শান্তি প্রতিষ্ঠা পায়। ভারতের মতো এত বড় দেশে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যই অন্য ধরনের প্রশান্তি। এখানে আপনার বিশ্বাস যা-ই হোক না কেন, সিনেমা হলে শাহরুখ খানকে দেখে সব ভারতীয়ই চিৎকার করে। মিলখা সিং বা ম্যারি কমের মতো ক্রীড়াবিদদের নৈপুণ্য দেখে আনন্দ পায়। শিশুদের দাসত্ব থেকে মুক্তির সংগ্রাম করেই তো আজ নোবেল বিজয়ী কৈলাস সত্যার্থী আমাদের মধ্যে অনন্য। এমন এক জাতির সঙ্গে আমরা বন্ধুত্ব করতে পেরে গর্বিত।
ব্যক্তিগতভাবে আমি দুজন মহান মানুষ দ্বারা অনুপ্রাণিত। যুক্তরাষ্ট্রের রেভারেন্ড মার্টিন লুথার কিংকে আমি ভীষণভাবে অনুসরণ করি। মার্টিন সব সময় মহাত্মা গান্ধীকে অনুসরণ করতেন। ভারত হচ্ছে সেই গান্ধীর ভূমি। মার্টিন এখান থেকেই তাঁর ন্যায়বিচার ও সাম্যের আন্দোলনের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। সেই দুই মহান মানুষের উত্তরাধিকারী তো আমরা—ভারতীয় ও আমেরিকানরা।
প্রায় ১০০ বছর আগে স্বামী বিবেকানন্দ যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। তিনি আমার শহর শিকাগোতেও গিয়েছিলেন। স্বামী সেখানে তাঁর বক্তব্য শুরু করেছিলেন ‘আমেরিকার ভাই ও বোন’ শব্দত্রয় দিয়ে। আমিও তাঁর মতো বলতে চাই, ভারতের ভাই ও বোন। আমি বিশ্বাস করি, আমরা দুই জাতি একসঙ্গে অনেক দূর এগোতে চাই। আমরা ঔপনিবেশ শাসনমুক্ত হয়ে যে সংবিধান তৈরি করেছিলাম, তার প্রথম শব্দগুচ্ছ ছিল এক ‘আমরা জনগণেরা’। ধীরে ধীরে আমরা দুই জাতি জ্ঞান আর প্রযুক্তির উৎকর্ষে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছি। ভারত দারিদ্র্যকে জয় করে চলেছে এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ মধ্যবিত্তের দেশ হয়ে উঠেছে।
আমাদের তরুণদের আছে অন্য রকম শক্তি। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় তারা আমাদের এক করে ফেলেছে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ আর টুইটারের বদৌলতে আমরা আজ অনেক কাছাকাছি।
ভারতের উন্নয়নে বন্ধু হতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন থেকে শুরু করে অবকাঠামো নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী। আমরা আরও বেশি জ্বালানি-সহায়তা দিতে চাই। আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য টেকসই পৃথিবী আমরা নির্মাণ করতে চাই।
আমরা আগামীর নিরাপদ পৃথিবী তৈরি করতে চাই। আমরা পারব। আমাদের সেই প্রযুক্তি তো আছেই।
আমরা সবাই সাম্যে বিশ্বাসী। কেউ আলাদা নয়, সবাই সমান। ভিন্ন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আমাদের মধ্যে শক্ত বন্ধন তৈরি করে। সবাই নানা পেশায় আর কাজে ব্যস্ত থাকি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, সবারই স্বপ্ন আছে। সাম্যের পৃথিবীতে সবার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করাই আমাদের লক্ষ্য। পৃথিবী সাম্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই এখন পাচকের নাতি কোনো দেশের প্রেসিডেন্ট হন আর চা-বিক্রেতা হয়ে যান প্রধানমন্ত্রী। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সবার জন্য সুযোগ তৈরি করা। যাঁরা স্বপ্ন দেখেন, আমরা তাঁদের স্বপ্ন ছুঁতে চাই।
আমি বিশ্বাস করি, সমাজে নারীরা অন্যতম এক শক্তি। তাঁদের আগ্রহের মধ্য দিয়ে একটি সমাজকে যেকোনো সময়ে বদলে দেওয়া সম্ভব। ভারতে নারীরা অনেক শক্তি নিয়ে সমাজ বদলে চলেছেন। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁদের সাফল্য চোখে পড়ার মতো। তরুণ নারীরা উন্নত আগামী প্রজন্মের সূত্র হিসেবে কাজ করে চলেছেন। বিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে, যা আমাদের আশা জোগায়। মেয়েশিশুরা যখন বিদ্যালয়ে যায়, তখন সমাজ আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। একদিন এই শিশুই তো নিজের ব্যবসা শুরু করবে। উদ্ভাবন করবে আশ্চর্যজনক কোনো প্রযুক্তি কিংবা কোনো রোগের প্রতিষেধক। নারীরা কাজে এলে পরিবার উন্নত হয়। পরিবার উন্নত হলে সমাজ উন্নত হয়, সমাজ সামনে এগিয়ে যায়। আর এভাবেই একটি দেশ নারীদের মাধ্যমেই উন্নয়নের শিখরে পৌঁছে যায়।
আমাদের তরুণেরাই সমাজের কুসংস্কার আর প্রতিবন্ধকতাগুলোকে এক পাশে রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি রাখে। আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি তারাই। তরুণেরাই পৃথিবী বদলের কারিগর। তোমাকে দায়িত্ব নিতে হবে পৃথিবীর। আমাদের বয়স হয়ে গেছে। আমার মাথায় এখন বাদামি চুল দেখি। আমি যখন আরও তরুণ ছিলাম, তখন আমি দায়িত্ব পালন শুরু করি। তরুণদের সামনে এগিয়ে আসার প্রচেষ্টা নিতে হবে সব সময়। ভারতে ৩৫ বছরের নিচে তরুণের সংখ্যা অনেক। তরুণেরা এ দেশকে প্রগতির দিকে এগিয়ে নেবে।
আমি ১৬ বছরের কিশোর বিশালের কথা বলতে চাই। সে দক্ষিণ দিল্লির মোর বান্দ গ্রামে থাকে। তার মা ভীষণ কঠিন শ্রমের কাজ করেন। তার বোন এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চান। বিশালের বাবা পাথর ভাঙার কাজ করেন। বিশালের আরেক ভাই দিন আনে দিন খায়-ধরনের কাজ করেন। বিশাল অঙ্ক করতে ভীষণ ভালোবাসে। পড়ার বাইরে সে কাবাডি খেলা ভীষণ পছন্দ করে। বিশালের বড় স্বপ্ন একদিন সে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। আমি বিশালকে নিয়ে গর্ব করি। আমার মেয়ে মালিয়া আর সাশার মতোই বিশালের স্বপ্ন আছে। আমাদের কাছে ওদের স্বপ্ন অনেক দামি।
আমরা আপনাদের বন্ধু হতে পেরে গর্বিত। আপনাদের স্বপ্নের দেশ নির্মাণে সঙ্গী হতে পেরে আমরা গর্বিত।
জয় হিন্দ! সবাইকে ধন্যবাদ।


সূত্র: www.whitehouse.gov


  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

বিল গেটস : নয়টি বই, নয়টি স্বপ্ন


     
বিল গেটস 


আমি প্রথমে একজন সাধারণ উদ্যোক্তা ছিলাম। এরপর কোটিপতি হয়েছি। আর এখন মানবাধিকারকর্মী হিসেবে কাজ করছি। আমার সামাজিক পরিচিতি বদল হওয়ার পাশাপাশি জীবনযাপনে ও অভ্যাসেও কমবেশি পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু একটি অভ্যাস আজও অপরিবর্তিত থেকে গেছে। সেটা বই পড়ার অভ্যাস। আমি যখন শুধু একজন উদ্যেক্তা ছিলাম, তখন প্রতি সপ্তাহে একটি করে বই পড়তাম। যখন উদ্যোক্তা থেকে কোটিপতি বনে গেলাম, তখনো সপ্তাহে একটি করে বই পড়তাম। এরপর যখন মানবাধিকারকর্মী হলাম, তখনো সপ্তাহে একটি করে বই পড়ি। বিভিন্ন সময়ে পড়া আমার কয়েকটি প্রিয় বইয়ের কথা আজ আমি বলব। আমি মনে করি এই বইগুলো প্রত্যেকেরই পড়া উচিত।


.

 

ট্যাপ ড্যান্সিং টু ওয়ার্ক
এটা ওয়ারেন বাফেটকে নিয়ে লেখা বই। ক্যারল লুমিসের ট্যাপ ড্যান্সিং টু ওয়ার্ক বইটি যে গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়বে, তার মনের ভেতর অবশ্যই দুটি বিষয় খোদাই হয়ে যাবে। এক. কীভাবে বাফেট তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছালেন এবং তাঁর ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় বিনিয়োগনীতি কী ছিল। দুই. জানা যাবে ব্যবসা সম্পর্কে তাঁর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ।
১৯৯৬ সালে আমি এক লেখায় লিখেছিলাম যে এমন কারও সঙ্গে আমার দেখা হয়নি, যাঁর ব্যবসা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা আছে। এখন পর্যন্ত আমার পর্যবেক্ষণ বিন্দুমাত্র হেরফের হয়নি। ব্যবসার কলাকৌশল সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই অজ্ঞ। সুতরাং ব্যবসা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ ধারণা পেতে হলে এই বইটি পড়া জরুরি।


মেকিং দ্য মডার্ন ওয়ার্ল্ডভ্যাস্লাভ স্মিল পেশায় পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক। তাঁর বেশির ভাগ বই জ্বালানি ও পরিবেশ নিয়ে। আপনাদের মনে হতে পারে মেকিং দ্য মডার্ন ওয়ার্ল্ড বুঝি জাগতিক কোনো বিষয় নিয়ে লেখা বই। আসলে তা নয়। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য কতটুকু প্রয়োজন আর আমরা কতটুকু ব্যবহার করি, তা নিয়ে এই বই। আমরা দেখেছি যুক্তরাষ্ট্রে ও অন্যান্য ধনী দেশে গত ১০০ বছরে কীভাবে মানুষের জীবনযাপনের মান উন্নত হয়েছে। আমরা এখন চাই, এমন একটি দৈব ঘটনা ঘটুক, যার মাধ্যমে পরবর্তী ৫০ বছরের মধ্যে মানবতার সব জায়গা আমরা দখলে নিতে পারব। তার আগে আমাদের জানা প্রয়োজন, আমরা আসলে কোথায় চলেছি? আমাদের গন্তব্য কোনখানে? এই বই-ই হতে পারে সেই জানার খুব চমৎকার একটি উৎস।


দ্য সিক্সথ এক্সটিংশনপরিবেশ বিজ্ঞানীরা এটা সত্য বলে মেনে নিয়েছেন যে পৃথিবীর ইতিহাসে পাঁচটি বিলুপ্তির ঘটনা ঘটেছে। আর এিলজাবেথ কোলবার্ট তাঁর এই বইয়ে মানুষের এমন ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন, যা আসলে পৃথিবীর ইতিহাসে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ষষ্ঠ ঘটনা।


স্ট্রেস টেস্টটিমোথি গাইথনার একবার এক মানুষের ছবি আঁকেন, যেখানে দেখা গেল মানুষটি বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। একই সময় দেখা গেল প্রশাসনও ভেতরে-বাইরে সমালোচনার যুদ্ধে লিপ্ত। অর্থনৈতিক মন্দার রাজনৈতিক যুদ্ধটা বরবারই খুব কুৎসিত হয়। কিন্তু জনগণ যদি এ বিষয়ে (অর্থনৈতিক মন্দা) একটুখানি জ্ঞান রাখে, তাহলেই ব্যাপারটা অনেক সহজ হয়ে যায়। স্ট্রেস টেস্ট নিঃসন্দেহে এই জ্ঞানার্জনে সহায়তা করবে।


দ্য বেটার অ্যাঞ্জেলস অব আওয়ার নেচারআমি এ পর্যন্ত যতগুলো বই পড়েছি তার মধ্যে এই বইটিকে আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। মানুষ যে ধীরে ধীরে অপেক্ষাকৃত কম সহিংস এবং অধিকতর মানবিক হয়ে উঠছে, স্টিভেন পিংকার এ ব্যাপারে অনেক প্রমাণ হাজির করেছেন। আর সহিংস অবস্থা থেকে মানবিক অবস্থায় উত্তরণের যে প্রচলন শুরু হয়েছে হাজার বছর আগে, তা আজও অব্যাহত আছে।
বইটিতে এই মানবিক বিষয়ের ওপরেই তুলনামূলকভাবে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। আমি ব্যক্তি মানুষ হিসেবে খুবই আশাবাদী একজন মানুষ। বইটি আমাকে ও আমাদের প্রতিষ্ঠানের কলাকৌশল নিয়ে চিন্তা করার খোরাক জুগিয়েছে।

দ্য ম্যান হু ফেড দ্য ওয়ার্ল্ডলিওন হেসার নোবেলবিজয়ী নরম্যান বোলাকে নিয়ে লিখেছেন দ্য ম্যান হু ফেড দ্য ওয়ার্ল্ড। যদিও অনেকেই নরম্যানের নাম জানেন না, কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন ইতিহাসের পাতায়। বলা হয় যে কোটি কোটি অনাহারী মানুষের জীবনের মধ্যে তাঁর উদ্ভাবিত ‘নতুন জাতের বীজ’ সংরক্ষিত আছে।
নরম্যান ছিলেন এমন একধরনের মানুষ, যিনি একই সঙ্গে গবেষণাগারে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন এবং তরুণ বিজ্ঞানীদের পরামর্শ দিয়েছেন। বইটি পড়লে বুঝতে পারবেন বার্লগ কীভাবে কোটি কোটি মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন।

বিজনেস অ্যাডভেঞ্চারস১৯৯১ সালের কথা। আমি ওয়ারেন বাফেটকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনার সবচেয়ে পছন্দের বই কোনটি। তখন তিনি বলেছিলেন, বিজনেস অ্যাডভেঞ্চারস। এটা শোনার পর বইটির ব্যাপারে আমার আগ্রহ জন্মায়। আমি সংগ্রহ করে বইটি পড়ি। তারপরের ঘটনা বুঝতেই পারছেন, বইটি আমার প্রিয় বইয়ের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
জন ব্রুকসের এই বইটি পড়ে একটি বিষয় বুঝেছি, প্রত্যেক ব্যবসায়িক প্রচেষ্টার জন্য ‘মানুষ’ একটি অপরিহার্য ব্যাপার। আপনি সঠিক পণ্য নিয়ে ব্যবসায় নেমেছেন কি না এটা কোনো বিষয় নয়। বিষয় হচ্ছে, আপনার পণ্য উৎপাদন পরিকল্পনা এবং পণ্য বিপণন পরিকল্পনা। আর এই দুই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত মানুষ নির্বাচন করাই হচ্ছে প্রধান বিষয়।

দ্য বুলি পুলপিট
সামাজিক পরিবর্তন আসলে কীভাবে ঘটে? এটা কী কোনো নেতার অনুপ্রেরণায় ঘটে? কিংবা এই পরিবর্তনের জন্য সমাজের তৃণমূলে প্রথমত কোনো বড় ধরনের অনুষঙ্গ কাজ করে? মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট যেটা করেছিলেন, সেটা হচ্ছে বিপুলসংখ্যক মানুষকে একত্র করতে পেরেছিলেন। রুজভেল্ট তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে বেশ কিছু রাজনৈতিক সংস্কার করার চেষ্টা করেছিলেন। সাফল্য পেতে দেরি হয়েছে তাঁর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক মানুষের সমর্থন নিয়ে তিনি সফল হয়েছিলেন।
ডরিস কেয়ার্নস গুডউইনের বইটি আপনাকে এসব জানতে সহায়তা করবে।

দ্য রোজি প্রজেক্ট
যারা অতিমাত্রায় যুক্তিবাদী, তারা এই বইয়ের নায়কের সঙ্গে নিজের মিল খুঁজে পাবেন। এই বইয়ের নায়ক একজন বংশগতিবিদ্যার অধ্যাপক। তিনি এমন একজন স্ত্রী খুঁজছিলেন, যাঁর কি না অ্যাসপারগার নামের রোগ আছে!
গ্রেয়েম সিমসনের এই বইটি অত্যন্ত হাস্যরসাত্মক, বুদ্ধিদীপ্ত ও সাবলীল ভাষায় লেখা। আমি তো এক বৈঠকেই বইটি পড়ে শেষ করে ফেলেছি!


সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার।




  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

ক্রিকেটই আমার জীবন : শচীন টেন্ডুলকার



সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার। ২০১১ সালের বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য। ১৯৮৯ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। জন্ম ১৯৭৩ সালের ২৪ এপ্রিল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে করেছেন ১০০টি সেঞ্চুরি। খেলেছেন ২০০টি টেস্ট। টেস্টে ৫১টি সেঞ্চুরিসহ ১৫ হাজার ৯২১ রান এবং ৪৬৩টি ওয়ানডে ক্রিকেটে ৪৯টি সেঞ্চুরিসহ ১৮ হাজার ৪২৬ রানের মালিক তিনি।


শচীন টেন্ডুলকার


শুধু ভারতের হয়ে খেলা গত ২২ বছর ধরে নয়, তারও অনেক আগে থেকেই ক্রিকেট আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ১১ বছর বয়সে যখন সিদ্ধান্ত নিলাম যে ক্রিকেট আমি সিরিয়াসলি খেলব, তখন থেকে ক্রিকেটই আমার জগৎ। এর আগেও আমি ক্রিকেট খেলতাম, কিন্তু সেটা ছিল আমার পড়শি বন্ধুদের সঙ্গে মজা করে টেনিস বল দিয়ে খেলা—এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। কিন্তু যে মুহূর্ত থেকে আমি ঠিক করলাম, আমি ক্রিকেট খেলব এবং আমার লক্ষ্য হবে ভারতের হয়ে খেলা; সে মুহূর্ত থেকে আমার জীবনে যা ঘটেছে, তা ক্রিকেটকে ক্রিকেটকে কেন্দ্র করেই ঘটেছে। আমার জীবনের সব দায়িত্ব, সব চাপ সামাল দিয়েছে আমার বড় ভাই অজিত এবং বিয়ের পরে আমার স্ত্রী অঞ্জলি। এ কথা বললে ভুল হবে না, আমার জীবনের মঞ্চে সামনে ছিল শুধুই ক্রিকেট, বাকি সবই পেছনে।

আমি যখন স্কুলে পড়তাম, অনেকবারই আমার ইচ্ছা হয়েছে প্র্যাকটিসে না গিয়ে আমার বন্ধুদের সঙ্গে খেলি। তাদের সঙ্গে ভেলপুরি, পানিপুরি খেয়ে সময় কাটাই; সিনেমা দেখি, টেনিস বল দিয়ে ক্রিকেট খেলি কিংবা বাসার সামনে ছোটাছুটি করি—১২ বছর বয়সী একটি ছেলের এসবই তো করতে ইচ্ছা করে। কিন্তু আমার কোচ রমাকান্ত আচরেকার তাঁর স্কুটার নিয়ে শিবাজি পার্ক থেকে চলে আসতেন এবং আমাকে নিয়ে যেতেন। তিনি আমাকে ক্রিকেট খেলিয়েই ছাড়তেন। আমি অনেকবার লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করেছি, কিন্তু প্রতিবারই তিনি আমাকে খুঁজে বের করতেন। এখন যখন আমি পেছনে ফিরে তাকাই এবং সেসব দিনের কথা ভাবি, যখন আমি ক্রিকেট খেলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াতাম, আমি খুবই আনন্দ পাই এই ভেবে যে এসব আমার জীবনে হয়েছে। এ ঘটনাগুলো না ঘটলে জীবনে আমি অনেক কিছুই পেতাম না। ক্রিকেটে আমার সাফল্যের পেছনে আমার বড় ভাই অজিত এবং কোচ রমাকান্ত আচরেকারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
আমি ভারতের ক্রিকেট ক্যাপ প্রথম মাথায় দিই ১৯৮৯ সালে, পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের আগের প্রস্তুতি ম্যাচে। সেটা ছিল আমার জীবনের স্মরণীয় মুহূর্তগুলোর অন্যতম। ভারতীয় দলের টুপি, সোয়েটার, জার্সি—সবকিছুই আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমি সব সময় মাঠে নেমেছি বড় রান করার জন্য। আমার সব ব্যক্তিগত রেকর্ড, মানুষ আমার যেসব বড় রানের কথা স্মরণ করে—সবকিছুই এসেছে ভারতের হয়ে খেলতে গিয়ে। আমি ভালো বা খারাপ, যা-ই খেলি না কেন, ভারতের হয়ে খেলতে গিয়েই এসব এসেছে এবং সব সময়ই আমার লক্ষ্য ছিল একটাই—মাঠে নেমে ম্যাচ জিতে আসা। এটা করতে গিয়ে আমি যা অর্জন করেছি কিংবা যা অর্জন করতে পারিনি, এসব ছিল আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি সব সময়। আমি বিশ্বাস করি, একজন খেলোয়াড়ের জন্য ম্যাচের আগের প্রস্তুতি সবচেয়ে গুরুত্ব বহন করে, এটা নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগায় যে আমি আমার সেরাটা দিতে পারব। কিন্তু ম্যাচে কী হবে, সেটা একমাত্র সর্বশক্তিমানই জানেন, আমরা সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। কখনো ম্যাচের ফল আমাদের পক্ষে যায়, কখনো বিপক্ষে—আমরা সব সময় মাঠে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করি।

স্বপ্ন দেখা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বপ্নের পেছনে শ্রম দেওয়া। আমরা স্বপ্ন দেখি নিদ্রায়, কিন্তু কাজ করি জেগে থেকে; জেগে থাকাটাও আমাদের জীবনে সমান গুরুত্ববহ। আমি যেভাবে নিজেকে ম্যাচের জন্য প্রস্তুত করি, তাতে প্রস্তুতি নেওয়ার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আমার হাতে থাকে। নিজের প্রস্তুতির কাজটা আমি নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। মাঠে খেলতে নেমে কোনো খেলোয়াড়ই এটা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারে না যে আমি আজকে সেঞ্চুরি করব বা পাঁচ উইকেট তুলে নেব। কিন্তু সম্পূর্ণ প্রস্তুতির গ্যারান্টি একজন খেলোয়াড় দিতে পারে, কারণ এটা তার নিয়ন্ত্রণের আওতায়। একজন খেলোয়াড়ের উচিত নিজের নিয়ন্ত্রণের আওতায় যে জিনিসগুলো আছে, সে ব্যাপারগুলোতে সময় দেওয়া। আর যে ব্যাপারগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে, সেগুলোকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া। আমি যখন জানি যে আমি ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি এবং এর চেয়ে আর ভালো কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না, তখন আমি নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস খুঁজে পাই। খেলায় আমি চেষ্টা করি নিজের চিন্তাকে যতটা সম্ভব শূন্য রাখতে, এতে করে আমি যেকোনো বলকে তার মতো করেই খেলতে পারি। এটা আমার মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আসে।
এটা ভাবতে আমার খুবই ভালো লাগে যে মানুষ আমার খেলাকে ভালোবেসেছে, আমাকে সমর্থন দিয়েছে, আমার জন্য প্রার্থনা করেছে। এমন অনেক মানুষের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, যারা আমার মঙ্গল কামনায় কয়েক সপ্তাহ ধরে উপবাস পালন করেছে। আমি সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই এ সবকিছুর জন্য এবং প্রার্থনা করি, সবকিছু যেন এভাবেই চলতে থাকে। যখন কেউ কোনো কাজে নিজের মনপ্রাণ ঢেলে দেয় এবং লাখ লাখ মানুষ তার সেই কাজের প্রশংসা করে—এটা সেই মানুষকে অসীম আনন্দ এনে দেয়, তার প্রতি মুহূর্তের শ্রমকে সার্থক করে তোলে। আমি সেই মানুষ হতে পেরেছি, এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।








সূত্র: ডেইলি মোশন ডট কম। অর্ণব গোস্বামীকে দেওয়া শচীন টেন্ডুলকারের সাক্ষাৎকার অবলম্বনে

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

নতুন লেখকের জন্য ৯ দফা




পাওলে কোয়েলোর জন্ম ব্রাজিলে, ১৯৪৭ সালের ২৪ আগস্ট। বিশ্বব্যাপী খ্যাতিমান এই লেখকের সবচেয়ে আলোচিত বইয়ের নাম দ্য আলকেমিস্ট। বইটি বিশ্বের ৮০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আর বিশ্বব্যাপী বইটি বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১৬ কোটিরও বেশি। পর্তুগিজ ভাষার জনপ্রিয় এই কথাসাহিত্যিক লেখালেখি বিষয়ে নতুন লেখকের জন্য দিয়েছেন কিছু পরামর্শ।

পাওলো কোয়েলো 

নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো: বই প্রকাশিত হলেই যে সেটা দেদারসে বাজারে বিকোবে এমনটা ভাবার কারণ নেই। কাজেই তুমি কী লিখেছ, সে ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখো।

বিশ্বাস রাখো পাঠকের ওপর: তোমার পাঠকের ওপর বিশ্বাস রাখো। কখনোই তোমার লেখার অন্তর্নিহিত বিষয়কে পাঠকের সামনে ব্যাখ্যা করতে যেয়ো না। শুধু ঘটনা বর্ণনার মাধ্যমে আভাস দিয়ে যাও। বাকিটুকু বুঝে নেওয়ার দায়ভার পাঠকের কল্পনার ওপর ছেড়ে দাও। পাঠকই বুঝে নিক, তুমি কী বোঝাতে চেয়েছ।

অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাও: যখন তুমি কিছু লিখতে বসো তখন চেষ্টা করো সেটা তোমার অভিজ্ঞতার আলোকে লিখতে। লেখাটা সমৃদ্ধ হবে।

সমালোচনা সহো: কিছু লেখক চায় যে তার সহকর্মীরা তার পাশে থাকুক। তারা চায়, সহকর্মীরা তার কাজের স্বীকৃতি দিক। এ ধরনের ভাবনা কেবল তোমার পরনির্ভশীলতাই প্রকাশ করে, আর কিছু নয়। দয়া করে এসব ভুলে যাও। তোমার হৃদয়ের প্রতি যত্নবান হও আর ভালোবাসার আদান-প্রদান করো। কখনো অন্য লেখকদের অনুকম্পা প্রত্যাশা কোরো না। অন্যের সমালোচনা সইবার মতো শক্তি অর্জন করো।

নোট রেখো না: যদি তুমি তোমার আইডিয়া লিখে রাখো, তুমি পরাজিত হবে। তুমি তোমার আবেগ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে, ভুলে যাবে তোমার জীবন। তোমাকে একজন পর্যবেক্ষক হতে হবে। নোট রাখা ভুলে যাও। কোনটা লেখা গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনটা লেখা গুরুত্বপূর্ণ নয় তা তোমার লেখার ধরনই বলে দেবে।

গবেষণা থেকে বিরত থাকো: তোমার উপন্যাসকে একেবারে গবেষণাকর্ম বানিয়ে ফেলো না। তাতে তুমি নিজে যেমন বিরক্ত হবে, তেমনি তোমার পাঠকও বিরক্ত হবে। তুমি কতটা মেধাবী তা তোমার উপন্যাসের মাধ্যমে দেখাতে যেয়ো না। তুমি বরং তোমার হৃদয়কে তুলে ধরো তোমার গল্পে-উপন্যাসে-লেখায়।

কতটুকু লিখবে, কীভাবে লিখবে: যতটুকু লেখা দরকার আমি আসলে ততটুকুই লিখি। প্রথম বাক্যের পেছনের অংশটুকুই যোগসূত্র স্থাপন করে শেষ বাক্যের সঙ্গে। অতএব লেখার ব্যাপারে মিতভাষী হও।
লেখার ধরন: গল্পের বয়ানভঙ্গিতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা কোরো না। স্রেফ একজন জাদুকরের মতো গল্প বলে যাও। আমি দেখেছি, অনেক লেখক গল্প বলতে গিয়ে অনেক কসরত করে; একই গল্প নানাভাবে বলতে চেষ্টা করে। এটা অনেকটা ফ্যাশনের মতো। গল্প বলার ধরন বা বয়ানভঙ্গি হচ্ছে পোশাক; কিন্তু মনে রেখো পোশাক কখনো তার ভেতরের বস্তুকে নির্দেশ করে না।

ব্যর্থ হওয়ার ভয়: সবশেষে তোমাদের একটা গল্প শোনাই। গল্পটা ব্যর্থ হওয়ার ভয় নিয়ে। একদা আসান চাহ নামের এক সন্ন্যাসী এক টুকরো জমি পেয়েছিলেন। হয়তো উত্তরাধিকার সূত্রেই। তো জমিটা পাওয়ার পর তিনি ভাবলেন এখানে সন্ন্যাসীদের জন্য একটা আশ্রম বানাবেন। ভাবনা অনুযায়ী তিনি তাঁর এক শিষ্যকে আশ্রমের ভবন নির্মাণের জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করলেন। এরপর কয়েক মাসের জন্য দূরে কোথাও চলে গেলেন।
মাস পাঁচেক পর ফিরে এসে চাহ দেখলেন, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যদিও যাওয়ার সময় তিনি স্থানীয় স্থপতিদের মাধ্যমে কিছু কাজ এগিয়ে রাখার জন্য শিষ্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
যা-ই হোক, ফিরে আসার পর ওই স্থপতিদের একজন চাহকে জিজ্ঞেস করলেন, এখন প্রকল্পের কোন কাজটা আমাদের সবার আগে শুরু করা উচিত? কীভাবে আমরা এখন সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পারি?
উত্তরে চাহ বললেন, ‘ভালো কিছু করার ইচ্ছাই ভালো ফল বয়ে আনে। কথায় বলে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। তোমার ভেতর যদি ভুল করার ভয় না থাকে, তবে তুমি সিদ্ধান্ত নিতে পারবে দ্রুত এবং ফলাফল হবে চমৎকার। অতএব সেই কাজটাই আগে শুরু করো, যেটা তোমার মন করতে বলে।’
অতএব, নতুন লেখকেরা, তোমরা তোমাদের জীবনের চলার পথকে সাহসের সঙ্গে পাড়ি দাও। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ এই ভয়ে ভীত হয়ো না, অন্যের সমালোচনাকে ভয় পেয়ো না। এবং সবকিছুর ঊর্ধ্বে একটা কথাই বলব, অতিরিক্ত আত্মসমালোচনায় নিজেকে পঙ্গু করে ফেলো না।

সূত্র: পাওলো কয়েলোর নিজস্ব ব্লগ।

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS

জ্ঞান যেথা মুক্ত : জিমি ওয়েলস



জিমি ওয়েলস





ইন্টারনেটে মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার সহপ্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস। জন্ম ১৯৬৬ সালের আগস্ট, যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলা উইকিপিডিয়ার এক দশক পূর্তির অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি এসেছিলেন ঢাকায়। উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ গ্রামীণফোন আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে জিমি ওয়েলস এই বক্তব্য দেন।
আমরা এমন একটা পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি, যেখানে প্রতিটি মানুষ বিনা মূল্যে মুক্তভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করতে পারবে। আর এই স্বপ্ন পূরণেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। উইকিপিডিয়া প্রকল্পের এই উদ্যোগটা ছিল সারা বিশ্বের মানুষের কথা চিন্তা করে। প্রথম থেকেই আমরা ভেবেছি, আমাদের কাজটা যেন সবার কাছে পৌঁছায়। শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা যেন না থাকে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের যত আদান-প্রদান হবে, তত মানুষের জীবন উন্নত হবে। আর তা যেন বিনা মূল্যে পাওয়া যায়, সেটা নিয়েই আমরা ভাবছি।

উইকিপিডিয়া হচ্ছে একধরনের এনসাইক্লোপিডিয়া বা বিশ্বকোষ। এটা পাঠ্যবই বা ইউটিউব নয়। এখান থেকে যেমন তথ্য জানা যায়, ব্যবহার করা যায়, তেমনি নতুন তথ্য বা বিশেষ কোনো বিষয়বস্তু সংযোজন করা যায়। উইকিপিডিয়াতে এখন পর্যন্ত তিন কোটি ২০ লাখের বেশি নিবন্ধ রয়েছে। পৃথিবীর ২৮৭টি ভাষায় উইকিপিডিয়া চালু হয়েছে। আর প্রতি মাসে আমাদের ওয়েবসাইট প্রায় ৫৫ কোটি মানুষ ব্যবহার করে। উইকিপিডিয়াতে পৃথিবীর ১০টি ভাষাতেই রয়েছে প্রায় ১০ লাখ নিবন্ধ। বিভিন্ন ভাষায় লেখা নিবন্ধগুলোর মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে বাংলার মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে। প্রায় ৩৩ হাজার নিবন্ধ রয়েছে বাংলা উইকিপিডিয়ায়।

এমন অনেক দেশ রয়েছে, যেখানে মানুষের সংখ্যা কম হলেও উইকিপিডিয়ার ব্যবহার বেশি। এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ হচ্ছে আবহাওয়া, ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ-সুবিধা, ব্রডব্যান্ড শিক্ষার হার।
উইকিপিডিয়াতে বিভিন্ন ভাষার নিবন্ধের পর্যালোচনার একটা গাণিতিক সূত্র রয়েছে। একে বলেডেপথসূত্র। সেই হিসাব-নিকাশে বাংলা ভাষার স্থান তৃতীয়। প্রথম হলো ইংরেজি, দ্বিতীয় ম্যাসিডোনীয় তৃতীয় বাংলা ভাষা। তাই বাংলা উইকিপিডিয়াকে আরও সমৃদ্ধ করার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। ১০ কোটি মানুষ যদি প্রত্যেকে একটি লাইন করেও লেখে, তবে তা- কিন্তু কম নয়। এই অনলাইন বিশ্বকোষের দৃষ্টিভঙ্গি নিরপেক্ষ। আর মুক্ত লাইসেন্স হওয়ার কারণে অন্য অনেক ওয়েবসাইটের চেয়ে এর জনপ্রিয়তা বেশি। যেকোনো সমস্যা, কৌতূহল বা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে উইকিপিডিয়া দারুণ একটা ওয়েবসাইট।
একটা প্রশ্ন আমাকে প্রায়ই শুনতে হয়, উইকিপিডিয়া নিয়ে আমার স্বপ্ন কতদূর বিস্তৃত? আসলে বর্তমান যুগে মোবাইল ফোনের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনে একধরনের আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। কাউকে জিজ্ঞেস করলে সে হয়তো বলবে, মোবাইল ফোনের কারণে চাষিরা প্রতারকের কবলে কম পড়ছেন, ম্যালেরিয়া বা অন্যান্য অসুখের খবর দ্রুত স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো যাচ্ছে ইত্যাদি। এসব অবশ্যই খুব সত্য। তবে বহু মানুষ আছে, যারা এখনো ইন্টারনেটের ব্যবহার জানে না। তারা জানে না মোবাইল ফোন ব্যবহারে আরও কত কত সম্ভাবনা রয়েছে।

এমন অনেক দেশ আছে, যেখানে সুযোগ টাকাদুয়েরই অভাব রয়েছে। তবে ধীরে ধীরে স্মার্টফোনের দাম কমছে, মোবাইল ফোনগুলোতে থ্রিজি পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় সব দেশেই এই পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। তাই আগামী পাঁচ বছরে অবস্থা এমন থাকবে না। অনেক নতুন ব্যবহারকারী আসবে ইন্টারনেট জগতে। আর তারা আসবে বিপুল পরিমাণ আগ্রহ আর জীবন-জগৎ সম্পর্কে জানার কৌতূহল নিয়ে। তারা উইকিপিডিয়া ঘাঁটবে। তারা চাইবে তাদের মাতৃভাষাতে শিখতে জানতে। কারণ, মানুষগুলোর সবাই তো সমানভাবে ইংরেজিতে দক্ষ নয়। আর মাতৃভাষাতে তারা যেভাবে পড়তে পারবে, বুঝতে পারবেঅন্য ভাষায় সেভাবে পারবে না। তাই বাংলাদেশের মানুষের জন্য বাংলা উইকিপিডিয়া দরকার। স্থানীয় অনেক বিষয়বস্তুও বাংলা উইকিপিডিয়াতে সংযুক্ত করা যেতে পারে। এর ফলে ইন্টারনেটের ব্যবহার তাদের জন্য আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
তোমাদের কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন বলেছেন, ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,/ জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর…’, উইকিপিডিয়ার দর্শনটা ঠিক অনেকটা রকম। এটাই উইকিপিডিয়ার মূল সুর।
সবাইকে ধন্যবাদ। অভিনন্দন বাংলাদেশ উইকিপিডিয়া

  • Digg
  • Del.icio.us
  • StumbleUpon
  • Reddit
  • RSS