রিদওয়ান ইসলাম, ৩৩তম বিসিএসের সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম
জীবনে কখনো দূরবর্তী কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগোইনি। এটি আমার ব্যক্তিত্বের একটি সীমাবদ্ধতা। কেউ কখনো জীবনের লক্ষ্য জানতে চাইলে বলতাম, মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা। কলেজজীবনে বলতাম, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর বলতাম, অনার্স পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা আর তার পরে বলতাম, মাস্টার্স পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা। সত্যিই, আমার জীবনের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য কখনো ছিল না। যখন ফার্মেসি বিভাগ থেকে অনার্স পরীক্ষায় সিজিপিএ-৩.৯৫ নিয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করলাম, তখন ভাবলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার চেষ্টা করতে পারি অথবা স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টাও করতে পারি উচ্চতর ডিগ্রি নিতে।
আমার জন্ম সাভারে। জীবনে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই পড়েছি, তার মধ্যে আলাদা করে বলতে হয় দুটি প্রতিষ্ঠানের কথা। এর মধ্যে একটি হলো মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ। উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত সেখানেই পড়েছি। আমি সেখানকার ৩৮তম ব্যাচের ছাত্র। আর বলতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক দুটি পরীক্ষায়ই জিপিএ-৫ পেয়েছি। তারপর ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সুযোগ পাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শেষ পর্যন্ত মাস্টার্স পরীক্ষায়ও প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করি, যেখানে আমার সিজিপিএ ছিল ৪.০০।
অনার্স পরীক্ষার পর বন্ধুদের কাছ থেকেই তখন প্রথম জানতে পারলাম কীভাবে বিসিএস পরীক্ষা হয়, কেমন প্রশ্ন হয়। তখন ভাবলাম, আমিও ফরম পূরণ করব। এভাবেই প্রথম ৩১তম বিসিএসে অংশ নিই।
তারপর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে ঢুকি। আর অল্প অল্প করে পড়তে শুরু করি বিসিএসের জন্য। একে একে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক—প্রতিটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারে সুযোগ পাই। এ বছরই ১৭ সেপ্টেম্বর কাজ শুরু করি রংপুরে। কিন্তু ৩১তম বিসিএসের রেজাল্টের আগেই ৩৩তম বিসিএসের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। তাই তখন ৩৩তম বিসিএসেও অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিই। ৩১তম বিসিএসেও পররাষ্ট্রই ছিল আমার প্রথম পছন্দ, ৩৩তম বিসিএসেও তাই। মনের কোণে একটা সূক্ষ্ম ইচ্ছা ছিল, পররাষ্ট্রতে হলে মন্দ হতো না। তবে স্বপ্নেও ভাবিনি প্রথম হব।
আমার রেজাল্টের পেছনে আমার বাবা সাইফুল ইসলাম ও মা তাজকারা আক্তারের অবদান সবচেয়ে বেশি।
যা অর্জন করেছি, তার জন্য আমি অত্যন্ত খুশি। উচ্চশিক্ষা নেওয়ার স্বপ্ন আছে আমার। আর অবশ্যই আমার দেশের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের কিছু করতে চাই।